বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পররাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১২ পিএম

গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির দিকে যদি আমরা দেখি, সেখানে অনেকগুলো সফলতাও আছে। কিছু ব্যর্থতা আছে। আমি সফলতার কথা দিয়ে শুরু করি। প্রথম দিককার কথা। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে যখন আবির্ভূত হলো তখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কাজ থেকে স্বীকৃতি আদায় করা। এবং সেই চ্যালেঞ্জটা বাংলাদেশ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। আমরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সদস্যপদ লাভ করি ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং এর মধ্য দিয়েই মনে করা যায়, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করল। যে কোনো বিচারে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ছিল, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল এই সবগুলো কাটিয়ে আমরা স্বাধীন দেশে নিজেদের ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন স্বীকৃত সদস্য হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করলাম।

আমি জাতিসংঘের বিষয়টা গুরুত্ব দিচ্ছি এই কারণে যে, জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার মাত্র চার বছরের মধ্যে ১৯৭৮ সালে আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ করি। এবং সেটা জাপানের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই সদস্যপদ পেয়েছি। একটা নতুন জাতি হিসেবে এটা সত্যি আমাদের জন্য একটা পররাষ্ট্রনীতির সফলতা হিসেবে আমরা দেখতে পাই। এরপর আবার ২০০০/০১  সালে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ করি।

২ . বাংলাদেশ দুই বারই অল্প সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ করেছে। এটা অনেক বড় অর্জন আমি মনে করি। কারণ একটা নতুন রাষ্ট্রের জন্য জাতিসংঘের অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ করা সহজ কোনো বিষয় না। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়, সেখানে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে বসে থাকে।

এদিকে ১৯৮৫ সালে আমরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির পদ অলংকৃত করতে পেরেছি। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এটাও কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এটা অনেক সফল কারণ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির পদ আবার ঘুরে আসতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১০০ থেকে ১২৫ বছর। জাতিসংঘের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রই চায় সভাপতি হতে। স্বাধীনতার অল্প কয়েক বছরের মধ্যে আমরা সভাপতির পদ অলংকৃত করে অসাধারণ অর্জন পেয়েছি। এবার আরেকটা অর্জন যদি বলি, ১৯৮৮ সালে আমরা প্রথম জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। সেই সময় থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের ধারাবাহিকতা এবং সুনাম ধরে রেখেছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই শান্তিরক্ষা কার্যক্রম একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে।

এবার দ্বিপাক্ষিক জায়গায় যদি আসি, তাহলে বাংলাদেশের বেশ কিছু সফলতা আছে। যেমন- আমাদের দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার, এই দুই দেশের সঙ্গে আমাদের স্থল সীমান্ত চিহ্নিত এবং যে সমুদ্রসীমা রয়েছে সেটাও চিহ্নিত। কাজেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সীমান্ত চিহ্নিত চূড়ান্তভাবে থাকা বা এই কাজটা সম্পূর্ণ করা, এটাকে যেকোনো বিচারে একটা অসাধারণ সফলতা হিসেবে আমরা দেখাতে পারি।

৩. বাংলাদেশ ১৯৮০ সাল থেকে এই অঞ্চলের আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করে। তার অংশ হিসেবেই ১৯৮৫ সালে ঢাকায় সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সার্ক এখন সেভাবে কার্যকর না হলেও বা সেভাবে কাজ করতে পারছে না, তা হলেও অনস্বীকার্য যে- বাংলাদেশের মতো একটা দেশ এখানে অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দেশ হয়েও কিন্তু একটা বড় উদ্যোগ নিয়েছিল, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে একটা নতুন সহযোগিতার কাঠামো দাঁড় করাতে। এগুলোকে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জন্য মোটা দাগে সফলতা।

এসব সফলতার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখতে হবে, আমাদের সবকিছুই কি সফলতা? কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি ছিল। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে যদি একটু আলোচনা করি। তাহলে বলতে পারি যে, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির পরিচালনায় এখনো পর্যন্ত কিন্তু একটা ধারাবাহিকতা যেটাকে বলি, তা কিন্তু মাঝে মাঝেই ব্যাহত হয়। তার কারণ আমাদের এই সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতিতে খানিকটা দিকনির্দেশনায় পরিবর্তন আসে। আরেকটা হচ্ছে, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এখনো পর্যন্ত কিন্তু অনেকটাই সরকারপ্রধান নির্ভর। ফলে এক সরকার থাকলে তার পররাষ্ট্রনীতি এক রকম থাকে আবার অন্য সরকার এলে সেটা আবার পরিবর্তন হয়। ফলে জাতি হিসেবে আমাদের বাইরের পৃথিবীতে ভাবমূর্তি তৈরিতে কিন্তু একটু ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এবং মানুষের পক্ষে বুঝতে সুবিধা হয় যে, বাংলাদেশ কী চাচ্ছে? মনে রাখতে হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ১৯৩টা দেশ নিয়ে জাতিসংঘ গঠিত, কাজেই আমাদের অনেকের সঙ্গে চলতে হয়। সেই জায়গায় আমি মনে করি যে, ধারাবাহিকতা এবং জাতীয় বিষয়টাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।  কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমরা রেজিম বা সরকারভিত্তিক হয়ে যাই বা কখনো কখনো ব্যক্তির অনুগত হয়ে পড়ি।

আর পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা না থাকার ফলে বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানেও আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখেছি। এর ফলে যেটা হয় আমরা যে শক্তি নিয়ে বা যে দক্ষতা নিয়ে বাইরের পৃথিবীতে আমাদের জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে পারতাম সেই জায়গাগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গত ১৫ বছরে দেখেছি যে, আমরা ভারতের সঙ্গে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছি। দেশের সঙ্গে আমাদের দূরত্বের কিছুটা প্রভাব পড়েছে এ কারণে। যুক্তরাষ্ট্র বলি, চীন বলি তাদের সঙ্গে কিছুটা হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও এই পররাষ্ট্রনীতির বস্তুনিষ্ঠভাবে না হওয়ার কারণে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা সম্ভব। একটা ধারাবাহিক এবং ভাবমূর্তি যাতে সমুন্নত রাখা যায় এর জন্য সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি ধরে রাখা প্রয়োজন। যাতে বাইরের দেশের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থাকে।

এবার আসি একটা নতুন বিষয়ে। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন হয়েছে।  এই বাস্তবতায় আমরা কি লক্ষ করছি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে কি কোনো গতি এসেছে বা কোনো দিকনির্দেশনার পরিবর্তন হয়েছে? আমার কাছে কয়েকটা বিষয় মনে হচ্ছে, একটা  হচ্ছে যে- বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি বলিষ্ঠতা নিয়ে সমতা এবং মর্যাদার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে আগ্রহী।

৪. এই ধারাবাহিকতা বা এটাকে আমি গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটা ফসল হিসেবে দেখি। এখানে মানুষের মধ্যে যে আত্ম আবিষ্কার, আত্মমর্যাদা তৈরি হয়েছে- তারই একটা প্রতিকার এটা আমরা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। এবং মর্যাদার ভিত্তিতে বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে যে সম্পর্কের আগ্রহ সেটাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে আমরা ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরির জন্য সচেষ্ট আছি। এখন ফলাফল কী হবে বলা মুশকিল। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর রাজনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতিতে আমরা নতুন প্রজন্মের এটা স্বকীয়তা লক্ষ করছি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বব্যাপী যে ভাবমূর্তি এবং ব্যক্তিগত ইমেজ আছে, তার ওপরে ভরসা করে বাংলাদেশ অনেকাংশেই খুব সক্রিয় কূটনীতি করার একটা উদ্যোগ  গ্রহণ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গিয়ে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ১৯টা দেশের নেতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কথা বলেছেন, দেখা করেছেন। একইভাবে মিসরের কায়রোতে গিয়ে হয়েছে, বিমসটেকে গিয়ে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে সম্মেলনে যাচ্ছেন সেই সব জায়গায় আমরা খেয়াল করছি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটা স্বকীয়তা দেখা যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় এবং অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, আঞ্চলিক রাজনীতিকে সক্রিয় করার জন্য সচেষ্ট হওয়ার বিষয়টি লক্ষ করা গেছে। যেমন আমাদের সরকারপ্রধান জোর দিয়ে বারবার বলছেন- সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে চায় বাংলাদেশ।  আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে চায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে ড. ইউনূস যে কথাবার্তা বলছেন, এই কথাবার্তাগুলো আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে একটু বাড়তি সক্রিয়তা আমরা লক্ষ করছি। এবং পাশাপাশি এর সঙ্গে নতুন উপাদানও এই পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে লক্ষ করছি। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, প্রধান উপদেষ্টা তার নিজস্ব ভাবমূর্তি ও ইমেজ নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য যে উদ্যোগটা গ্রহণ করেছেন সেই উদ্যোগ যেন ওনার ব্যক্তিগত পর্যায়ে না থাকে। এটা যেন আমাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সঞ্চারিত হয় এবং তার মধ্য দিয়ে যেন আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার কাঠামো বলেন বা পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ধ্যান-ধারণা বলেন বা কৌশলগত বিষয়ে চিন্তাভাবনা বলেন, সে বিষয়টা পর্যন্ত যেন যায় তারই উদ্যোগের ফলাফলটা। এই উদ্যোগগুলোকে যেন আমরা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে পারি সেই জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আমি মনে করছি।

এই সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার বেশিদিন থাকবে না। তবে যাতে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি, একে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারি, তার জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি কয়েকটা উদ্যোগের কথা বলতে চাই।  প্রথম যেটা হচ্ছে- পররাষ্ট্রনীতি ও আমাদের কূটনীতির সঙ্গে যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, এই থিমটা আমাদের নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে স্বচ্ছ হওয়া দরকার। কারণ বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখি অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ে নেতারা ব্যস্ত থাকেন বা নীতিনির্ধারকরা বেশি ব্যস্ত থাকেন। পররাষ্ট্রনীতিটা তাদের কাছে পররাষ্ট্র, মানে দূরের ব্যাপার। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের কৃষি বলেন শিল্প বলেন সার্ভিস সেক্টর বলেন রেমিটেন্স বলেন আমার টেকনোলজি বলেন সব কিছুতেই বাইরের বিষয় যুক্ত। সবগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনীতির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। আমাদের উন্নয়ন সবকিছুই বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা রয়েছে, আমাদের প্রবাসে সোয়া কোটি মানুষ কাজ করেন। এই যে বাইরের দেশে আমাদের ভাই-বোনেরা কাজ করছেন তারাও আছেন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এগুলোর সঙ্গেও বাইরের বিষয় যুক্ত, বাণিজ্যিক ফার্মগুলো আমাদের সঙ্গে জড়িত। কাজেই এই সমন্বয়টা খুব জরুরি বলে আমি মনে করি।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা বা অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি এই দুটোকে সমন্বয় করতে হবে। এখন সেটা খুবই জরুরি হয়ে পড়ছে। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের এই অভ্যন্তরীণ পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা সংস্থাগুলো কাজ করছে তাদের মধ্যে কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে খুব একটা শক্তিশালী সমন্বয় নেই। সেক্ষেত্রে বাইরে যদি আমরা একটা সমন্বিত চেহারা দেখাতে চাই বাংলাদেশের, তাহলে অভ্যন্তরীণ আমলাতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক একটা সমন্বয় দরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ইআরডি বা অন্য মন্ত্রণালয় বলেন, সবার কাজের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকতে হবে। তবেই আমরা সক্ষমভাবে বাইরের পৃথিবীতে, বাংলাদেশি স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে পারি এবং সেটাকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিতে পারি।

সর্বশেষ আমি বলতে চাই, শুধু আমরা পরিবর্তন হচ্ছি এমন না, পৃথিবীও পরিবর্তিত হচ্ছে। গত দুই-তিন সপ্তাহে বাইরের পৃথিবীতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঝড় বইছে। কাজেই সেই ঝড়ের আঁচ আমাদের ওপরেও লাগবে। এর ফলে কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বিশ্ব কৌশলগত ব্যবস্থা, বিশ্বরাজনীতি, বিশ্ব রাজনৈতিক কাঠামো ও কূটনৈতিক কাঠামোসহ সবই কিন্তু পরিবর্তিত হবে বলে আমি মনে করি। পরিবর্তনগুলোকে যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং সেই মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে আমার অভ্যন্তর থেকে বা বাংলাদেশের দিক থেকে এগুলো মোকাবিলা করার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি দরকার, সেই প্রস্তুতির জন্য একটা কৌশলগত নীতি এখনই চর্চা শুরু করা দরকার। সরকারের পক্ষ থেকেই এই প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাইরের বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা করে, এই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই আমি চিন্তার দিক থেকে সংগঠনের দিক থেকে তিন দিক থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

তাই মনে হয়, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিপ্লোমেসিকে দ্রুত সমন্বয় করা দরকার। আলাদা না রেখে যদি একসঙ্গে চলতে পারি এবং একে অপরকে যদি সহায়তা করতে পারি তাহলে আমার ধারণা, আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যখন যাব তখন সারা পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটবে। সেই পরিবর্তনটাকে আমরা সক্ষমতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব। বাংলাদেশের সম্মানজনক অবরোধ যাত্রা যেটা আছে সেটাকে আমরা ধরে রাখতে পারব এবং আরও বেশি গতির সঞ্চার করতে পারব বলে আমি মনে করি। মনে রাখতে হবে- পররাষ্ট্রনীতি পরের রাষ্ট্রের নীতি নয়, রাষ্ট্রনীতি হলো আমার অভ্যন্তরীণ চাহিদা, আমার অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে।

লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও লেখক

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত