শিবালয় উপজেলার কাক্কোল গ্রামের বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী মাচাইন বাজারের টেইলর মাষ্টার বিল্লাল হোসেন ‘চাঞ্চল্যকর’ হত্যা মামলার রায়ে এক জনের ফাঁসি ও অপর জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও বিজ্ঞ দায়রা জজ সাবিনা ইয়াসমিন জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় প্রদান করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন উপজেলার দক্ষিণ খানপুর গ্রামের এখলাছ মাতব্বরের ছেলে পারভেজ হোসেন ওরফে সুমন (৩১) ও একই গ্রামের শহিদ ব্যাপারির ছেলে আলীম (৪১)।
এজহার সূত্রে জানা যায়, মাচাইন বাজারের টেইলার মাস্টার ও পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্মী ২০১৬ সালে বিল্লাল হোসেনের স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে উত্যক্ত করায় কাক্কোল গ্রামের একলাছ মাতব্বরের ছেলে বখাটে সুমন শেককে গ্রাম্য সালিশে সতর্ক করা হয়। এতে সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিল্লাল ও পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি প্রদর্শন করত। সুমন ও তার কয়েকজন সহোযোগী ২০১৬ সালে ওই বছরের ২ নভেম্বর বাইসাইকেল যোগে বিল্লাল বাড়ি ফেরার পথে মাচাইন বাজারের পাশে রাত ৯টার দিকে তার উপর হামলা করে। তাদের হামলায় ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিল্লাল রাস্তা থেকে খালে পড়ে যায়। সময়মত বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলের পাশে তার বাইসাইকেল ও টর্চ স্থানীয় লোকজন দেখতে পায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে খালের পানিতে বিল্লালের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার ও হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র জব্দ করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠায়। এ নিয়ে বিল্লালের স্ত্রী আফরোজা বেগম ৩ নভেম্বর ২০১৬ সালে হরিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়রা মাচাইন বাজার রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে দোষীদের শাস্তি দাবী করে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সচিত্রপ্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বিল্লাল হত্যার ঘটনা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ডিবি পুলিশে ন্যস্ত হয়। আসামি সুমন, আলীম ও কাক্কোল গ্রামের আ: লতিফের ছেলে আশিকের (২৪) নামে ১৭ মার্চ ২০১৭ সালে ডিবি এসআই আশিষ কুমার সান্যাল আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ঘটনার সময় আশিকের বয়স ১৫ বছর হওয়ায় পৃথক আদালতে মামলা চলছে।
বিল্লালের স্ত্রী আফরোজা দেশ রূপান্তরকে জানান, ন্যায় বিচারক চিন্তা ভাবনা করেই রায় দিয়েছে। এই রায় বহাল ও দ্রুত কার্যকর করার অনুরোধ জানান তিনি।
অভিযোগকারীর পক্ষে আইনজীবী বুলবুল আহমেদ গোলাপ জানান, নিরীহ, সহজ-সরল টেইলার মাষ্টার বিল্লাল হোসেন হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচী পালন করেন। হত্যা মামলার চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে ডিবিতে ন্যস্ত হয়। ২২ জন স্বাক্ষী ও তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে আদালত এ রায় প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ ডিবি এসআই আশিষ কুমার সান্যাল আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। মামলার সাক্ষী, আলামত, তথ্য-উপাত্ত¡ বিশ্লেষণ করে, জেলা বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজসাবিনা ইয়াসমিনের আদালত আগামী ৩০ এপ্রিল ২০২৫ রায় প্রদানের দিন ধার্য করেন।