বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দুর্যোগে দুর্ভোগ পোহাতে হয় কয়রবাসীর

  • ৬১ শতাংশ মানুষ মনে করেন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা পর্যাপ্ত নয়
  • ৪৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল
  • ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশু-কিশোরীরা
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম

প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত রাস্তা। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। ফলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশু-কিশোরীরা। এছাড়া দুর্যোগে নারীদের ঘর ও পরিবারে কাজ বেড়ে যায়। এতে অনেক সময় তারা মানসিক ও শারীরিক সহিংসতারও শিকার হন। সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের কূলঘেঁষা কয়রা উপজেলা ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন এবং লবণাক্ততার মতো জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ নারীদের ও কিশোরীদের ওপর অসমভাবে প্রভাব ফেলছে। যার কারণে বিদ্যমান সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও গভীর হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ বিভিন্ন সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে নারীরা।

সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রুরাল ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান একটি গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, কয়রা উপজেলার সুন্দরবনের কূলঘেঁষা কয়রা সদর ইউনিয়ন, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৬১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর রাস্তাগুলো অনেক কষ্টসাধ্য। এছাড়া ৪৯ শতাংশ মানুষ বলেছে, স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এতে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশু-কিশোরীরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারীদের ঘর ও পরিবারে কাজ বেড়ে যায়। এতে অনেক সময় তারা মানসিক ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হন।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে নারী ও কিশোরীদের দুর্যোগগজনিত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করছে। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সম্পদের ঘাটতি ও সামাজিক জটিলতা নারী ও কিশোরীদেরকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে পুরুষদের কর্মসংস্থানের জন্য অন্যত্র চলে যাওয়া-নারীপ্রধান পরিবারগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে; যেমন সহায়তা পাওয়ার সীমাবদ্ধতা ও দায়িত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যার ফলে দারিদ্র্য বেড়ে যায়; নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আরো কোণঠাসা হয়, যা তাদের ক্ষমতায়ন ও সহনশীলতা গঠনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এ প্রসঙ্গে কয়রা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা তাজনীন নাহার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ও পরবর্তী পরিস্থিতি নারীদের প্রতি সহিংসতার প্রবণতা বেড়ে যায়। এছাড়া শিক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ কমায় ও দুর্যোগের সময় মানবিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের সময় ও পরবর্তী দিনগুলোতে গর্ভবতী ও অসুস্থ নারীদের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

খুলনায় বুধবার জেজেএস আয়োজিত ‘উপকূলীয় এলাকার নারী ও মেয়েদের দুর্যোগ বিপন্নতা বিষয়ে ফলাফল ও কমিউনিটি প্রতিনিধিদের বক্তব্য উপস্থাপন বিষয়ে মিডিয়া সংলাপ’ বিষয়ক কর্মশালায় কয়রা উপজেলার কমিউনিটি প্রতিনিধির পক্ষে মো. মনিরুজ্জামান জানান, উপকূলীয় এলাকার নারী ও মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মাল্টিপারপাস করাসহ সেখানে নারীদের জন্য আলাদা স্যানিটেশন ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের যাওয়ার রাস্তা নারী ও শিশুদের জন্য সহজে পৌঁছানোর উপযোগী করাসহ ১১টি দাবি তুলে ধরেন।

অন্যান্য দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে, উপকূলীয় এলাকার নারীরা এখনো পর্যাপ্ত উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছে না, এজন্য নগদ সহায়তা (ক্যাশ গ্রান্ট) দিয়ে নারীদের জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করা, ভোকেশনাল ট্রেনিং, মার্কেট লিংকেজ ও স্থায়ী সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোগগুলো টেকসই করা, পানির সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যা সমাধানে সুপেয় পানির উৎস স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ও বন্যা সহনশীল টয়লেট গড়ে তোলা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় গর্ভবতী ও অসুস্থ নারীদের চিকিৎসা পেতে অনেক কষ্ট হয়, যার জন্য স্পিডবোট অ্যাম্বুলেন্স, মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষিত নারী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ‘ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল ফান্ড’ গঠন, মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণে নষ্টরাস্তা, ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত, আর্থিক সমস্যার সমাধান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রিমোট এলাকায় অস্থায়ী শিক্ষা কেন্দ্র, যাতায়াত উন্নয়ন ও স্কুলে ফেরার জন্য ভাউচার চালু করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নিশ্চিতকরণ এবং নারীদের নেতৃত্বে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন ও নারীদের নেতৃত্বে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত