বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কালো সোনায় কৃষকের মুখে হাসি

আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ১২:১৫ এএম

দিগন্ত মাঠ জুড়ে কেবলই সাদা ফুলের সমাহার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাদা চাদর ছড়িয়ে দেওয়া মাঠে। কাছে এলে দেখা মিলবে সারি সারি পেঁয়াজের কদম। যা কালো সোনা হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ফরিদপুর জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে দোল খাচ্ছে কালো সোনা হিসেবে খ্যাত পেঁয়াজের কদম। এ বছর ফরিদপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আবাদ হয়েছে পেঁয়াজ বীজের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হবে। এ বছর ফরিদপুর জেলায় প্রায় ৯৬৫ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের আশা করছেন কৃষকরা। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪শ কোটি টাকা। দেশের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী জেলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফরিদপুর জেলা। দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজের সিংহভাগ বীজ উৎপাদন হয় এ জেলায়। এ জেলার বীজ উৎকৃষ্টমানের হওয়ায় কৃষকদের কাছে চাহিদাও রয়েছে বেশ। চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ।

কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, এ বছর ফরিদপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয়েছে প্রায় ১শ হেক্টর বেশি জমিতে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। দেশের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী সেরা কৃষানি সাহেদা বেগম জানান, তিনি একযুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। পেঁয়াজ বীজ আবাদ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। ফলে অনেক কৃষক এটি আবাদে ঝুঁকি নিতে চান না। এ বছর তিনি প্রায় ১শ একর জমিতে বীজের আবাদ করেছেন। যা থেকে ৩০ টন বীজ উৎপাদনের আশা করছেন। যেখান থেকে তিনি প্রায় ৪ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

পেঁয়াজ বীজ চাষি বক্তার হোসেন খান জানান, দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে ফরিদপুরের বীজের গুণগতমান বেশ ভালো। ফলে ফরিদপুরের বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কৃষকের কাছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে নিম্নমানের বীজ এনে বাজারে সরবরাহ করে থাকে। ফলে অনেক কৃষক প্রতারিত হন। ভারত থেকে নিম্নমানের বীজ আমদানি বন্ধে সরকারের কাছে জানান। এ ছাড়া কৃষিসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ার জন্য পেঁয়াজ চাষিদের বীজ বিক্রির জন্য প্যাকেট বা টিনের কৌটা নিয়ে হয়রানি করা হয়।  যেটা মোটেই কাম্য নয়। এসব কারণেও পেঁয়াজ চাষিরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিষয় নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে দেখভাল করা প্রয়োজন। না হলে আগামী দিনে পেঁয়াজ চাষিরা বীজ উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। স্থানীয় আরেক চাষি বারী চৌধুরী বলেন, এ বছর পেঁয়াজ বীজের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজ চাষিরা এবার লাভবান হবেন। তবে সরকারের কৃষিসংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি। 

পেঁয়াজ বীজ আবাদের অন্যতম এলাকা গোবিন্দপুরের সাহিদা বেগমের খামারে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক পুরুষ-মহিলা পেঁয়াজ বীজ উত্তোলন এবং বীজ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। খামারে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় পেঁয়াজ বীজের ফলন ভালো হয়েছে। শ্রমিকরা প্রতিদিন কাজ করে ৭০০ টাকা করে পাচ্ছেন। এ দিয়েই তাদের সংসার ভালোভাবে চলছে। 

কালো সোনা হিসেবে বিবেচিত পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হয় চড়া দামে। গত বছর প্রকারভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এ বছর এমন দামই থাকবে বলে আশা কৃষকদের। 

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে বীজ উৎপাদনে গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। সব ঠিক থাকলে এ বছর পেঁয়াজ বীজ চাষিরা লাভবান হবেন। এ ছাড়া পেঁয়াজ বীজ চাষিদের কৃষি বিভাগ প্রথম থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত