বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রানীনগরে সাইলেজের চাহিদা বাড়ছে

আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ০২:১৬ এএম

নওগাঁর রানীনগরে দিন দিন সাইলেজের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে সাইলেজ উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। এই সাইলেজ উৎপাদন করে খামারিরা নিজেদের চাহিদা পূরণের পর আশপাশের ডেইরি খামারিদের মধ্যেও সরবরাহ করছেন। ফলে অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পশুখাদ্য হিসেবে সাইলেজ খামারিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। খামারিরা সাইলেজ তৈরি ও গাভীকে খাওয়ানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন যা অদূর ভবিষ্যতে উপজেলা প্রাণিসম্পদকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফি ফয়সাল তালুকদার।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, সাইলেজ হলো বায়ুশূন্য অবস্থায় প্রক্রিয়াজাতকৃত সবুজ ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি। ঘাসের সাইলেজে শতকরা ৮৫ ভাগ পুষ্টি পাওয়া যায়। ঘাসের সমস্ত অংশই সংরক্ষণ করা যায়। বর্ষা মৌসুমে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করা কঠিন কিন্তু সাইলেজ হিসেবে সহজেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। সাইলেজ অত্যন্ত সুস্বাদু। আপৎকালে গবাদি পশুর অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে চাইলে সাইলেজের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে সাইলেজ উৎপাদন করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এই সাইলেজের প্রতি খামারিদের আগ্রহী করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রকল্প ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘প্রাণিসম্পদ ও প্রাণী পুষ্টি উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প’-এর আওতায় ৮টি ইউনিয়নের ১৬ জন সুফলভোগী খামারিকে সাইলেজ প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী প্রদান করা হয়েছে। ‘প্রাণিসম্পদ ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)’-এর ম্যাচিং গ্রান্টের আওতায় পশু খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অধীনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাইলেজ উৎপাদনের নিমিত্তে উপজেলার মালশন গ্রামের খামারি আব্দুল মান্নান ‘মোল্লা কমিউনিটি বেজড সাইলেজ প্রডাকশন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। মান্নান তার প্রক্রিয়াজাতকৃত সাইলেজ দিয়ে নিজের ৩০টি গাভীর চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারজাত করছেন।

খামারি আব্দুল মান্নান জানান সাইলেজ অত্যন্ত লাভজনক একটি পশুখাদ্য। প্রথমে বিদেশি নেপিয়ারসহ অন্যান্য ঘাস মেশিনের মাধ্যমে কেটে নেওয়া হয়। এরপর সেই ঘাসগুলোতে তরল গুড়ের (মোলাসেস) স্প্রে করা হয়। পরে ঘাসের স্তূপ থেকে বাতাস বের করে দিয়ে ভালোভাবে প্রায় এক মাস ঢেকে রাখা হয়। এর মধ্যে ওই ঘাসগুলো সাইলেজে পরিণত হলে সেগুলো বস্তায় ভরে রাখা হয়। পরে বর্ষা মৌসুমে ও অন্যান্য আপৎকালে অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সাইলেজ গবাদি পশুকে সরবরাহ করা হয়। এতে করে গাভী পালনে খাদ্য খরচ কম হচ্ছে ও অধিক দুধ উৎপাদন হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজননে ভালো সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে। অপর দিকে সুস্থ সবল বাছুরের জন্ম হচ্ছে। সঠিক বয়সে যৌন পরিপক্বতা আসছে। পাশাপাশি দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তাও কম হচ্ছে বিধায় উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে। এছাড়া রোগব্যাধি কম হওয়ার কারণে চিকিৎসা খরচ খুবই কম হচ্ছে। এক কথায় বহুগুণ সমৃদ্ধ সাইলেজ হচ্ছে খামারিদের জন্য আশীর্বাদ। বাণিজ্যিকভাবে তিনি সাইলেজ উৎপাদন করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফি ফয়সাল তালুকদার জানান, প্রাণিসম্পদে সাইলেজ হলো একটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি যার মাধ্যমে স্বল্প খরচে গাভীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। খামারিদের ক্ষেত্রে গাভী পালনে অথবা গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের ক্ষেত্রে বড় একটি ব্যয়ের খাত হচ্ছে খাদ্য ক্রয়। বর্তমানে দানাদার খাদ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় খামারিরা গাভী পালনে অথবা গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন না। কিন্তু এই সাইলেজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাবারের ব্যয় অনেকাংশে কমানো সম্ভব যার ফলে খামারিরা গাভী পালন অথবা গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ করে আশানুরূপ মুনাফা অর্জন করতে পারেন। সাইলেজ উৎপাদনে আগ্রহী অন্য খামারিদের প্রতি প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত