পূজা ও আচারসহ নানা আয়োজনে সারা দেশে উদযাপিত হলো শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্মতিথি ছিল গতকাল রবিবার। বুদ্ধপূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ‘জগতের সব প্রাণী সুখী হোক’ এই অহিংস বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধ। গতকাল সারা দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধপূজা-সহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, প্রদীপ প্রজ্বালন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হয়। মানব জাতির সর্বাঙ্গীণ শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে সকাল ১০টায় বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ ও সন্ধ্যা ৬টায় বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বাসাবোতে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার, উত্তরাতে বাংলাদেশ বৌদ্ধ বিহারসহ সারা দেশের বিহারগুলোতে পূজা, আচার, প্রার্থনাসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজনে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, শহরের শহরের ভেদভেদী সংঘরাম বৌদ্ধ বিহারসহ জেলার বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হয়। প্রদীপ প্রজ্বালন শেষে নিজেকে সমর্পণ করেন বুদ্ধের চরণে। মনের সব নিবেদন নিয়ে বুদ্ধের কাছে করেন প্রার্থনা। এছাড়াও বুদ্ধস্নান, বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল প্রার্থনা, বুদ্ধমূর্তি দানের পর সবাই যোগ দেন সমবেত প্রার্থনায়। এছাড়া শহরের রাজবন বিহার, আনন্দ বিহার, মৈত্রী বিহারসহ সব বিহারে সকাল থেকে পুণ্যার্থীরা মঙ্গল কামনায় বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করেন।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানের রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে এসে বোধিবৃক্ষতলে সমবেত হন পূজারীরা। পরে বিহারে সমবেত হয়ে শীলগ্রহণ এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়। এ সময় ১৭তম বোমাং রাজা উ চ প্রু, রাজকুমার চহ্লা প্রু জিমি, রাজকুমার মংওয়ে প্রু, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মং মারমা, রাজকুমার চসিংপ্রু বনিসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর-নারী এবং দায়ক-দায়ীকারা উপস্থিত ছিলেন।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকেই নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়ে এ মন্দিরে সমবেত হন উপকূলের শত শত রাখাইন নর-নারী। পরে বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ, সূত্র পাঠ, সূত্র শ্রবণ ও সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পি- দান, বোধিবৃক্ষে জল ঢালা, আহার দান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদযাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জ সদরের বজ্রযোগিনীতে বৌদ্ধ ধর্মের গুরু জ্ঞানতাপস অতীশ দীপঙ্করের বাস্তুভিটায় নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয়েছে শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে সেখানে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পরে প্রভাতফেরি, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও সমবেত প্রার্থনা করা হয়।
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ভোরে পবিত্র ত্রিপিটকের মঙ্গল বাণী পাঠের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়, এরপর ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয়, ধর্মীয় ও সংগঠন পতাকা উত্তোলন, বিশ্বশান্তি কামনায় বর্ণাঢ্য শান্তি শোভাযাত্রা, বুদ্ধপূজা, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ, ভিক্ষুসংঘের মধ্যাহ্নভোজ, ধর্মীয় আলোচনা সভা ইত্যাদি।