বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

এক টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কি

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ০২:২৬ এএম

২০২২ সালে ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে অঞ্চলটিতে চলমান এ সংঘাতের শুরু হয়েছিল। তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা এ যুদ্ধে উভয়পক্ষই ব্যাপক সামরিক ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। তবুও যুদ্ধ বন্ধে কার্যত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দুপক্ষই। তবে সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এবার সেই ট্রাম্পের চাপেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ অবসানে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিনি প্রস্তুত আছেন।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি শেষ আলোচনা হয়েছিল ২০২২ সালের মার্চে ইস্তাম্বুলে। এর তিন বছর পর এখন আবার দুপক্ষই সরাসরি আলোচনায় বসতে সম্মত হলো। তবে এ পথটাও মসৃণ ছিল না। রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ বন্ধে সম্প্রতি জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন পুতিন। তার জবাবে জেলেনস্কি বলেছিলেন, তার দেশ রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় রাজি কিন্তু সেটি হবে শুধু যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনকে পুতিনের প্রস্তাব মেনে নিতে চাপ দিলে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন জেলেনস্কি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গত রবিবার তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডকে আরও প্রলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। আগামী বৃহস্পতিবার আমি তুরস্কে পুতিনের জন্য অপেক্ষা করব। গত শনিবার কিয়েভে বৈঠকের পর সোমবার থেকে ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ স্থগিতের আহ্বান জানান ইউরোপীয় নেতারা। রবিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ইউক্রেনের অবিলম্বে এ প্রস্তাবে রাজি হওয়া উচিত এবং এটি যুদ্ধ বন্ধ করার উপায় বের করতে একটি ধারণা দেবে। কমপক্ষে তারা বুঝতে পারবে যে, একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব কি না এবং তা না হলে ইউরোপীয় নেতারা এবং যুক্তরাষ্ট্র জানতে পারবে যে সংকটটা কোথায় আটকে আছে এবং সে অনুযায়ী অগ্রসর হতে পারবেÑ বলেন ট্রাম্প। আর সেই বৈঠকটা এখনই করা হোক যোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

২০২২ সালের খসড়ায় চোখ ক্রেমলিনের : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনায় ২০২২ সালের পরিত্যক্ত খসড়া চুক্তি এবং ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ডে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণের বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে পুতিনের সরাসরি আলোচনার প্রস্তাবের পর ক্রেমলিনের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ২০২২ সালের খসড়া চুক্তি এবং বর্তমান বাস্তবতা উভয়ই বিবেচনায় নেওয়া হবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরুর কয়েক দিন পরই বেলারুশে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। পরে তা ইস্তাম্বুলে গড়ায়। সেখানে ‘ইস্তাম্বুল কমিউনিক’ নামক একটি খসড়া চুক্তি প্রণয়ন করা হয়। মে মাসে আলোচনা বন্ধ হয়ে গেলেও রাশিয়ার কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, ওই চুক্তির কাঠামোর ভিত্তিতেই একটি সমঝোতা সম্ভব। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও ২০২২ সালের খসড়াকে ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনার একটি পথনির্দেশক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ওই খসড়া অনুযায়ী, ইউক্রেন স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং এর বিনিময়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বেলারুশ, কানাডা, জার্মানি, ইসরায়েল, পোল্যান্ড ও তুরস্কের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাবে। খসড়া অনুযায়ী, ইউক্রেন পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছিল। এর পরিবর্তে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ সেখানে বলা হয়েছিল রাশিয়া ইউক্রেনে পুনরায় হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সরাসরি প্রতিরোধে বাধ্য হবে। ২০২২ সালের খসড়ায় ভূখণ্ড-সম্পর্কিত বিষয়টি নিরাপত্তা নিশ্চয়তার চেয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুপক্ষের কূটনীতিকদের মতে, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টিই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

রাশিয়ার হামলার শিকার হওয়ার পর ইউক্রেন চেয়েছিল আন্তর্জাতিকভাবে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি। খসড়ামতে, ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পথ সুগম করা হবে। অন্যদিকে রাশিয়া চেয়েছিল ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি নির্ধারণে সীমা আরোপ এবং রুশ ভাষাভাষীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করা হোক।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত