বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

নবীজির বিনয় ও কোমলতা

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ০১:২৪ এএম

বিনয় ও নম্রতা মানবজীবনের মহৎ গুণ। বিনয় শব্দের অর্থ নম্রভাব, কোমলতা ইত্যাদি। আর নম্রতা শব্দের অর্থ বিনীত, ঔদ্ধত্যহীন, নিরহংকার, অবনত, নরম, শান্তশিষ্ট ইত্যাদি। কথাবার্তা, কাজকর্ম, চালচলন ও আচার-আচরণে অন্যের তুলনায় নিজেকে ছোট ও ক্ষুদ্র মনে করা এবং অন্যদের বড় ও সম্মানিত মনে করাই বিনয়। বস্তুত নিজেকে সৃষ্টি জগতের মধ্যে উঁচু মর্যাদার অধিকারী মনে না করা এবং মানুষ ও মহান আল্লাহর প্রত্যেক সৃষ্টি জীবকে স্ব স্ব সম্মান প্রদান করার নামই বিনয় ও নম্রতা। এটি আদর্শ মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। যার বিনয় ও নম্রতা রয়েছে সে দুনিয়া ও আখেরাতে অফুরান কল্যাণ লাভে ধন্য হবে। দুনিয়াতে সবচেয়ে বিনয়ী ও কোমল মানুষ ছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

বিনয়ের গুরুত্ব এতই বেশি যে, যদি কোনো মানুষের মধ্যে বিনয় না থাকে, তাহলে সে মানুষই ফেরাউন ও নমরুদের ন্যায় হয়ে যায়। কেননা অন্তরে বিনয় না থাকলে অবশ্যই অহংকার থাকবে, নিজের বড়ত্ব থাকবে। আর এ অহংকারই হচ্ছে সমস্ত আত্মিক রোগের মূল।

মহৎ মানুষের পরিচয় হলো নম্রতা অবলম্বন করে এবং বিনয়ী হয়। নম্রতা ও বিনয় ছাড়া মানুষ মহৎ হতে পারে না। এ পৃথিবীতে যারা আজীবন স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আসন লাভ করে আছেন, তাদের প্রত্যেকেই বিনয়ী ও নম্র ছিলেন। সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মানব রাসুল (সা.) ছিলেন বিনয় ও নম্রতার মূর্ত প্রতীক এবং পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিনয়ী ও নম্র মানুষ। বিনয় ও নম্রতা দ্বারা তিনি মানুষকে আপন করে নিতেন। তিনি ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ এমনকি শিশু, ভিক্ষুক নির্বিশেষে সবার সঙ্গে বিনীত আচরণ করতেন। নবুয়তের সুবিশাল দায়িত্ব কিংবা আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদার বিশালত্ব তার এ ধরনের বিনম্র আচরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সম্মানের শীর্ষ চূড়ায় একমাত্র আরোহী হয়েও তিনি ছিলেন সবচেয়ে বিনয়ী।

আল্লাহর রাসুলের বিনয় ও নম্রতার কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ হয়েছে এভাবে, ‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছেন। আপনি যদি রূঢ় ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা আল ইমরান ১৫৯)

এ আয়াতে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এক. এখানে কোমলতা ও নম্রতাকে আল্লাহর বিশেষ রহমত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এখান থেকে বোঝা গেল, নম্র ও কোমল কেবল সে ব্যক্তিই হতে পারে, যার মধ্যে আল্লাহর বিশেষ রহমত রয়েছে। দুই. রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, এই কোমলতা, সদ্ব্যবহার, ক্ষমা প্রদর্শন, দয়া ও করুণা করার গুণ যদি আপনার মধ্যে না থাকত, তাহলে মানুষের সংশোধনের যে দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পণ করা হয়েছে তা যথাযথভাবে সম্পাদিত হতো না। মানুষ আপনার মাধ্যমে আত্মসংশোধন ও চারিত্রিক সংস্কার সাধনের উপকারিতা লাভ করার পরিবর্তে আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যেমনিভাবে আমি ফরজ নামাজ আদায় করতে আদিষ্ট হয়েছি, ঠিক তেমনি আমি মানুষের সঙ্গে কোমল আচরণ করতেও আদিষ্ট হয়েছি। রাসুল (সা.) আরও বলছেন, হে ইমানদারগণ! আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হও। কেউ কারও ওপর গর্ব করবে না, কেউ কারও ওপর সীমালঙ্ঘন করবে না। (সহিহ মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার এক আরব বেদুইন মসজিদে প্রস্রাব করে দেয়। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ে। রাসুল (সা.) তাদের বললেন, তাকে প্রস্রাব করতে দাও এবং তার প্রস্রাবের ওপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে নম্র ব্যবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যবহারকারী হিসেবে নয়। (সহিহ বুখারি) বিনয়ী ব্যক্তি মহান আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। পরকালে আল্লাহতায়ালা বিনয়ীদের পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দান করবেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেসব লোকদের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা এ পৃথিবীতে বড়ত্ব দেখাতে ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। আর আল্লাহভীরুদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ (সুরা কাসাস ৮৩)

কাজেই মুসলিম নারী-পুরুষ সকলেরই কোমলতা তথা বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা বিনয় ও নম্রতা হচ্ছে মানব চরিত্রের এক অনুপম বৈশিষ্ট্য। যার অভাবে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক কিছু হতে বঞ্চিত হয়। আবার এই গুণের কারণে মানুষ ইহকালে ও পরকালে প্রভূত কল্যাণের অধিকারী হয়। এই গুণের দ্বারাই মানুষ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে। তাই নারী-পুরুষ সবাইকে বিনয় ও নম্রতা অর্জনে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত