দেড় দশক ধরে নারায়ণগঞ্জের খেয়াঘাট ও শুল্ক আদায় পয়েন্টের ইজারার নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ও শীর্ষ নেতাদের। তবে এ বছর ইজারার প্রথম ধাপে ২৩টি ঘাটের মধ্যে ১৬টি ঘাটের দর বেশি পাওয়া গেলেও সাতটি ঘাট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে প্রভাবশালীদের একটি সিন্ডিকেট। প্রথম ধাপের ইজারায় ওই সাতটি ঘাটের বিপরীতে ২০টি দরপত্র সংগ্রহ করা হলেও জমা পড়েনি একটিও। অথচ ওই সাতটি ঘাটের প্রাক্কলিত মূল্য ৮ কোটি টাকার ওপরে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ইজারা কর্মসূচির নির্দেশনা অনুসারে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ২৩টি ঘাটের বিপরীতে ১১৪টি দরপত্র (শিডিউল) বিক্রি হয়। যার মধ্যে গত ২৯ এপ্রিল ১২টি ঘাট এবং ৩০ এপ্রিল ১১টি ঘাটের বিপরীতে ঘাট ইজারা প্রদানে দরপত্র গ্রহণ করা হয়। তবে এর মধ্যে সাতটি ঘাটের কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। অথচ এই সাতটি খেয়াঘাটের প্রাক্কলিত মূল্য ৮ কোটি টাকার ওপরে। ওই সাতটি ঘাটের বিপরীতে ২০টি দরপত্র বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে কাঁচপুর ল্যান্ডিং স্টেশন শুল্ক আদায় ও লেবার হ্যান্ডলিং পয়েন্ট (ওজন স্কেলসহ) ঘাটের প্রাক্কলিত মূল্য ২ কোটি ৪০ লাখ। ওই ঘাটের বিপরীতে ১০টি দরপত্র সংগ্রহ করা হলেও প্রথম ধাপে একটিও দরপত্র জমা পড়েনি। মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের প্রাক্কলিত মূল্য ১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে দুটি দরপত্র সংগ্রহ করা হলেও একটিও জমা পড়েনি। একইভাবে মাছুয়া বাজার কালেকশন রাইট পয়েন্ট ঘাটের বিপরীতে তিনটি, টানবাজার-কদমতলী লেবার হ্যান্ডলিং ঘাটের বিপরীতে একটি, চারারগোপ ঘাটের বিপরীতে দুটি দরপত্র বিক্রি হয়। এ বছর প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি ঘাট ইজারায় রেকর্ড পরিমাণ দর পড়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এবার সেন্ট্রাল ফেরিঘাটের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল দেড় কোটি। সর্বোচ্চ দর পড়েছে ২ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার টাকা। হাজীগঞ্জ ফেরিঘাটের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৫৫ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ দর পড়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। সাইলো পয়েন্ট ঘাটের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৩৫ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৫৩ লাখ টাকা।
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ওই সাতটি ঘাটের বিপরীতে ইজারার দরপত্র জমাদানে আগ্রহীরা ২০টি দরপত্র সংগ্রহ করলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কালো হাতের থাবা, তথা সিন্ডিকেটের হুমকি-ধমকির কারণে অনেকেই দরপত্র প্রদানে বিরত থাকেন। ওই প্রভাবশালী মহলটি চাচ্ছে আগ্রহীরা যাতে দরপত্র জমা না দেয়। সে ক্ষেত্রে তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কম দর দিয়ে ৮ কোটি টাকা মূল্যের ঘাটগুলো নামমাত্র মূল্যে ইজারা নেবে। এতে করে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলো থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সিন্ডিকেট লাভবান হবে। ওই সিন্ডিকেটটি আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দফার দরপত্র দাখিলেও আগ্রহীদের বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সরকার ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাট ইজারাদাররা।
এ বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ মে বাকি সাতটি ঘাটের ইজারার দরপত্র জমা নেওয়া হবে। কোনো প্রভাবশালী মহল যাতে দরপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, এজন্য আমরা সতর্ক আছি। আশা করছি, বাকি সাতটি ঘাটের ইজারা ওইদিন সম্পন্ন হবে।’