বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

খারাপ সময়েই ভালো কিছুর আশা লিটনের

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ০৩:৪২ এএম

২০২৪ সালে ২১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে মোটে ৩০৯ রান, হাফসেঞ্চুরি মাত্র একটি, স্ট্রাইকরেট কোনো রকমে ১০০ ছাড়িয়েছে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিসংখ্যান রীতিমতো লজ্জার। লিটন দাসের কাছে নিজের পারফরম্যান্স যথেষ্ট খারাপ, তারপরও যখন তাকে ২০২৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বানিয়ে দেওয়া হয়েছে তখন নতুন দায়িত্বটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন। লিটন স্পষ্টই বললেন, ‘অধিনায়কত্ব ছাড়াই তো আমি খারাপ খেলেছি।’ দায়িত্ব পাওয়ার পর বরং উল্টোটাই হতে পারে, এমনটাই তার বিশ্বাস, ‘এখন অধিনায়ক হয়ে আসতেছি বিপরীত জিনিসও হতে পারে যে আসার পর থেকে ভালো খেলতেও পারি।’

লিটন ভালো খেলছেন না। সেটা দর্শক, নির্বাচক সবাই জানে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে তাকে রাখেননি নির্বাচকরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলার সময় প্রথম দুই ম্যাচে খারাপ করার পর সিরিজের তৃতীয় ম্যাচের আগে হোটেল ছাড়তে হয়েছিল তাকে, কারণ নির্বাচকরা স্কোয়াড থেকেই তাকে বাদ দিয়েছিলেন। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মাথায় সেই লিটনকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক করা হয়েছে মূলত অনন্যোপায় হয়েই। নাজমুল হোসেন শান্ত অনিচ্ছুক, তার একাদশেই জায়গা প্রশ্নবিদ্ধ। লিটনের ব্যাটেও রান নেই, তবুও খোঁড়া যুক্তি হচ্ছে তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। যেখানে ব্যাট হাতে তার অবদান ০, ৩ ও ১৪ রান! লিটন নিজেও জানেন তিনি ভালো খেলছেন না। তাই নেতৃত্বের মাঝেই খুঁজছেন ভালো খেলার অনুপ্রেরণা, ‘সবশেষ মনে হয় আমি টি-টোয়েন্টি খেলেছি ডিসেম্বরে। এর ভেতরে কোনো একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি। হ্যাঁ, আমি একটা খারাপ সময় পার করছিলাম, যেখানে আমার ব্যাটে রান হচ্ছিল না। তারপরে কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেছি, বিপিএল, ডিপিএলেও অনেক চেষ্টা করেছি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি এটুকুই বলতে পারি, যেকোনো খেলোয়াড়ই সর্বোচ্চ তার চেষ্টাটাই করতে পারে। কিছু কিছু সময় থাকে এমন যে, আপনি অনেক চেষ্টা করেও হয়তো সাকসেস রেজাল্ট পাবেন না। কিন্তু বিপরীত দিক দেখলে এমনও হয় কোনো ক্রিকেটার একটি বা দুটি সিরিজ খারাপ খেলে তারপর আবার কামব্যাক করে। তো আমি ওই চেষ্টাটাই করব। আমি যেন আবার আমার যে খেলার ধরন বা প্যাটার্ন আমি যে ধরনের খেলোয়াড় সেটা যেন বাংলাদেশকে দিতে পারি। আমি পারফর্ম করলে অবশ্যই বাংলাদেশ দলেও অনেক সহায়তা হবে। অধিনায়কত্ব ছাড়া তো আমি খারাপ খেলেছি, এখন অধিনায়ক হয়ে আসতেছি বিপরীত জিনিসও হতে পারে যে, আসার পর থেকে ভালো খেলতেও পারি। আমি যেটা বললাম ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটি জিনিসই থাকবে।’ নেতৃত্বকে বাড়তি চাপ হিসেবেও দেখছেন না, ‘চাপের কিছু নেই। আমি যেটা আগেও বললাম অধিনায়ক ছিলাম না তখনো পারফর্ম খারাপ করেছি। এখানে এমন না যে অধিনায়ক হলে আবার খারাপ হবে। এটা একটা বাড়তি সুবিধা হতেও পারে। যেহেতু একটা সুযোগ এসেছে আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে, যারা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করে তাদের এক-দুদিন পরেও রেজাল্টটা আসে। আমি ওই জায়গায় আছি। চেষ্টা করব ইতিবাচকভাবে চিন্তা করার যেন রেজাল্টটা আমার দিকে নিয়ে আসতে পারি।’

এমন সময়ে লিটন দায়িত্ব নিলেন, যখন বাংলাদেশের সামর্থ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার পারদ নামছে। সেখান থেকে দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে লিটন এগিয়ে আসতে বললেন ক্রিকেটারদেরই, ‘বাংলাদেশ দলের যদি এগিয়ে যেতে হয়, সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে খেলোয়াড়দের। আমরা পারফরম্যান্স করলেই দল এগোবে। প্রথমত যারা বাংলাদেশের হয়ে খেলে তাদের প্রতিটা ভূমিকা পালন করতে হবে মাঠের মধ্যে। আমরা খেলোয়াড়রা যতটা বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করব তার থেকেও বেশি যোগাযোগ করা দরকার আমার খেলোয়াড়দের সঙ্গে। তারা কী চাচ্ছে, তাদের কোন জায়গায় উন্নতি করা দরকার। আমি যেহেতু প্রথম প্রথম এলাম এখনো আমার কাছে লম্বা সময় আছে। যত সময় যাবে আমি জিনিসটার ভেতরে তত বেশি ইনভলভ হতে পারব।’

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হরহামেশাই হেরে যায় আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর কাছেও। এখনো যেন এই সংস্করণে অনভ্যস্ততা দূর হয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হয়ে দলটা কীভাবে খেলতে দেখতে চান এমন প্রশ্নে লিটনের উত্তর, ‘আসলে কোন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট, আমি এটা বলব না। আমি যেভাবে চিন্তা করি আপনাকে যদি ওই উত্তরটা দিই কোনো কোনো খেলায় ১৮০ কিংবা ২০০ রান তাড়া করতে হতে পারে আবার কোনো কোনো খেলায় ১৪০-১৪৫ রান তাড়া করতে হতে পারে। আমি কীভাবে খেললে ম্যাচটা জিততে পারি এটা হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। হতে পারে একজন ব্যাটার এক দিন ২০ বলে ৪০ রানও করতে পারে, একই ব্যাটার পরের দিন প্রয়োজন নেই ২০ বলে ১৫ রান করতে হতে পারে। আমি চাই প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যেন খেলার ভেতর ইনভলভ থাকে।’

অধিনায়ক হিসেবে লিটনের লক্ষ্য তার পূর্বসূরিদের চেয়ে আলাদা কিছু নয়, জানিয়েছেন এমনটাই, ‘প্রত্যেকটা অধিনায়ক বাংলাদেশের, সে চায় তার দলটা জিতুক। সুতরাং আমিও ব্যতিক্রম কিছু না। আমি চাইব আমার হাত ধরে যেন বড় কিছু হয় বা আমি যেন যেকোনো সিরিজে গিয়ে জিততে পারি লক্ষ্য একটাই।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত