পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছিল। যার মাত্রা সামনের দিনগুলোতে বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে গতকাল সোমবার জেনেভায় দুই দেশের দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের পণ্যে আরোপ করা শুল্ক সাময়িক সময়ের জন্য কমাতে রাজি হয়েছে। বাণিজ্য উত্তেজনা কমানোর পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষ দুই রাষ্ট্র অর্থনীতিকে নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মেটাতে তিন মাসের জন্য এ শুল্ক কমছে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন আলোচনা শুরু করছিলেন, তখনো চীনা আমদানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৫ শতাংশ শুল্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পণ্যে চীনের ১২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। দুই দিনের আলোচনায় তারা ১৪ মে থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য ওই পাল্টাপাল্টি শুল্ক ১১৫% কমাতে রাজি হয়েছে বলে সোমবার উভয় দেশের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
এর ফলে বেশিরভাগ চীনা পণ্যে দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ১৪৫% থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে চীনের শুল্ক হবে মাত্র ১০%।
দুই দেশ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া দাঁড় করানোর বিষয়েও একমত হয়েছে বলা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। দুই দেশ এর আগে দুদিনের বাণিজ্য আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হওয়ার কথা জানিয়েছিল। এ খবর পেয়েই চীন ও হংকংয়ের শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। ডলার ও ইউয়ানের কদরও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দূত জেমিসন গ্রিয়ার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে আরও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য চায়।
হোয়াইট হাউজ রবিবারই এক বিবৃতিতে দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। তবে এ সম্বন্ধে তখন বিস্তারিত কিছু জানায়নি হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ লিখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নতুন চুক্তি নিয়ে বাজার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও আগের অভিজ্ঞতা বলছে, দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত চুক্তি হতে অনেক সময় লাগতে পারে, এবং শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো চুক্তির পথে আদৌ যাওয়া যাবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ২০১৮ সালেও একবার বাণিজ্য আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নিজেদের মধ্যকার বিরোধ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র পরে সেই সমঝোতা থেকে সরে আসে, এরপর দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বাড়তি শুল্ক আরোপ আর আলোচনার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ধাপের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।