সড়কপথে ঈদযাত্রায় যানজটের ১৫৯টি স্পট চিহ্নিত করেছে সরকার। স্থানীয় হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৯টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫৪টি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৬টি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪২টি, ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের ৮টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া সড়ক-মহাসড়কের পাশে কোরবানি পশুর হাট বসানো এবং ঈদের সাত দিন আগে সড়ক মেরামতের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিন, সেতু সচিব আবদুর রউফ, রেলপথ সচিব ফাহিমুল হক, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এহছানুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার, নৌপরিবহন, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ, নির্বিঘœ ও আনন্দদায়ক করতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। ঈদযাত্রার সময় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না এবং কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সড়কে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। এ সময় যানজট এড়াতে কোরবানির পশুর হাট সড়ক ও মহাসড়ক থেকে দূরে স্থাপন করা হবে এবং বেপারিদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য হাটে ব্যাংক বুথ থাকবে বলে জানান তিনি।
সড়কে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা রোধে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে এবং দ্রুত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ঈদের তিন দিন আগে অর্থাৎ ৪-৬ জুন এবং ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার তিন দিন আগে অর্থাৎ ১২-১৪ জুন (জরুরি সেবা ব্যতীত) সড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সবশেষে সড়ক উপদেষ্টা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে টিকিট কালোবাজারি, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে এবং এবারের ঈদযাত্রা দুর্ঘটনামুক্ত, নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় বাংলাদেশ পুলিশ ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে বলা হয়, সড়কের উভয় পাশে অস্থায়ী ও ভাসমান বাজার অপসারণ করতে হবে। নসিমন, করিমন, ইজিবাইক, ইত্যাদি থ্রি-হুইলার পরিবহন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল বন্ধ করতে হবে। সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে যাওয়া-আসা মোটরযানের সুশঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তাদের বলা হয়, জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডর সড়ক মেরামত ও সংস্কারের কাজ ঈদের সাত দিন আগে শেষ করতে হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে এমআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের পাশাপাশি ওয়াসা, ডেসকো, ডেসা, ডিপিডিসি, তিতাস ও টেলিফোন লাইন সংযোগের সব কাজ বন্ধ রাখা হবে।
যানজট নিরসনে রাজধানীর কমলাপুর এলাকার টিটিপাড়া আন্ডারপাসসহ সড়কটি ২০ মে থেকে মধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের এমআরটি-১-এর ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ ঈদের সাত দিন আগে শেষ করতে হবে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে আইসিডির লং ভেহিক্যাল লরিগুলো রাতে ডিপোর ভেতরে রাখা হবে। নারায়ণগঞ্জের ফুয়েল ডিপোগুলো রাতে খোলা রাখা হবে যেন ট্যাংক-লরিগুলো ঈদের বন্ধের দিনগুলোতে চলতে পারে।
এবার গাবতলী বাস টার্মিনালে একটি নতুন প্রবেশপথ উন্মুক্ত করা হবে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসের সংখ্যা কমানো হবে। আবদুল্লাহপুর থেকে ধউর-আশুলিয়া সড়ক একমুখী করা হবে। বিআরটি লেন দিয়ে শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়া যাবে। ঢাকা মেট্রো এলাকায় রেলের লেভেল ক্রসিংগুলোতে সিগন্যালের সময় কমিয়ে আনা হবে। বিমানবন্দর ফুটওভার ব্রিজ মেরামত করা এবং গাবতলী, দোলাইরপাড়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় প্রয়োজনীয় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএ, ডিএমপি, সিটি করপোরেশন এবং মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে পৃথক ভিজিলেন্স টিম এবং মনিটরিং টিম গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
লক্কড়ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে মেরামত কারখানাগুলোতে (ওয়ার্কশপ) মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাদের বলা হয়, ঈদযাত্রায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা যাবে না। পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী পরিবহন প্রতিরোধ করতে তাদেরই সতর্ক হতে হবে।
সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিআরটিসি ঢাকা মহানগরী থেকে বিভিন্ন জেলা শহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্পেশাল ঈদ সার্ভিস পরিচালনা করবে। গাবতলী ও কল্যাণপুর ডিপোর বাস রাজশাহী, রংপুর বিভাগে যাবে। মতিঝিল ও ফুলবাড়িয়া ডিপোর বাস চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আসন্ন ঈদের আগে ও পরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সড়ক মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। তবে গরুবাহী যানবাহন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টসামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এ নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।
সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২১ মে থেকে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এদিন ৩১ মের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে। ঈদে বাড়তি যাত্রী পরিবহনে বিভিন্ন রুটে ১০টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এ ছাড়া কোরবানির পশু পরিবহনে চলবে তিনটি ক্যাটেল স্পেশাল ট্রেন। এবার ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে দেওয়া হবে। পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলের সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টায় এবং পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা সব ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টায় বিক্রি শুরু হবে বলে জানানো হয় সভায়।