শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জলে ডোবা খাদ্যগুদাম

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ০৭:৪৩ এএম

চারদিকে গন্ধযুক্ত কালচে পানি, ভাঙাচোরা রাস্তা আর ভেঙে পড়া ড্রেনের চিত্র এটাই এখন কুমিল্লার প্রধান খাদ্যগুদামের দৈনন্দিন বাস্তবতা। জেলার ধর্মপুর খাদ্য সংরক্ষণাগারটি একটি পচা জলাধারে রূপ নিয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জরুরি সহায়তার জন্য সেখানে সংরক্ষিত চাল, গম, ধান, খাদ্যশস্যও এখন কোমরসমান পানির নিচে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৬০ সালে স্থাপিত এই গুদামে রয়েছে ১৪টি আলাদা ঘর, যেখানে ১০ হাজার ৫০০ টন খাদ্যশস্য মজুদের সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে কার্যকর আছে মাত্র ছয়টি ঘর। বাকি ৮টি পরিত্যক্ত। জলাবদ্ধতার কারণে এসব গুদামে পানি ঢুকে পড়ে। খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জমাট বাঁধা পচা পানিতে দাঁড়িয়ে শ্রমিকরা মালামাল ওঠানামা করছেন। এতে করে চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। জানা যায়, ধর্মপুর গুদাম ঘরের আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ ছিল আগে। কিন্তু স্থানীয় অশোকতলার এক সাবেক কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত বাধা ও রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে সেই পথগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আশপাশের বাগিচাগাঁও, অশোকতলা, রাণীরবাজার ও বিসিক শিল্প নগরীর সব পানি এসে জমে এই গুদাম এলাকায়।

গুদামে কাজ করা শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন কোমর পানি ভেঙে ঢুকি। সারাদিন পচা পানির ভেতর মাল ওঠানামা করতে হয়। অনেকের পায়ে ঘা হয়েছে। আমি নিজেও চর্মরোগে ভুগছি।

এদিকে গুদামে সংরক্ষিত চাল, গম ও ধান নিয়মিত রোদে শুকাতে হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে সেই ব্যবস্থা একেবারেই বন্ধ। ফলে খাদ্যশস্যে স্যাঁতস্যাঁতেভাব আসে, ছত্রাক ধরে, নষ্ট হয়ে যায়। এখান থেকে রেশন সরবরাহ হয় জেলা পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও কারাগারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য। দুর্যোগের সময়ও এখান থেকেই খাদ্যসহায়তা পাঠানো হয় দুর্গত এলাকায়। ফলে এই গুদাম অকেজো হয়ে পড়লে জেলার খাদ্য নিরাপত্তায় বড় সংকট তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে ধর্মপুর খাদ্যগুদামের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, রেলপথ উন্নয়নের সময় আমাদের পাশের কালভার্টগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এখন সিটি করপোরেশনের সব ময়লা পানি আমাদের এলাকাতেই জমছে। চারদিক পানিতে ঘেরা। এমনকি মূল প্রবেশপথও শুকনো নেই। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে একটানা এই জলাবদ্ধতা চলছে। সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার চিঠি ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা তারা নেয়নি। সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা না নিলে বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরা পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেব। তবে সেটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। অবকাঠামোগত ড্রেনেজ উন্নয়ন ছাড়া এই সমস্যা কখনোই কাটবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলম বলেন, এ বিষয়টি আমার জানার মধ্যে নেই। প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। এরপর তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপুর গুদাম উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই কাজ শুরুর কথা থাকলেও সরকার পরিবর্তনের কারণে তা থমকে গেছে।

এ বিষয়ে নগরীর সচেতন মহল বলছে, সিটি করপোরেশন যেন একটি খাদ্য সংরক্ষণাগারকে জলাশয়ে পরিণত করেছে। যে স্থাপনা থেকে জরুরি মুহূর্তে রাষ্ট্র খাদ্য সরবরাহ করে, তা বছরের পর বছর এই দুরবস্থায় থাকবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত