বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বিব্রত ভারত!

আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ০১:৪৭ এএম

চিরবৈরী প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মূল সংঘাত মূলত কাশ্মীর নিয়েই। তবে এ বিতর্কে তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটা নিষিদ্ধ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি ভারত। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের একটা অতি স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছিলেন, কাশ্মীর নিয়ে পরে হলেও কোনো সমাধানে পৌঁছনো যায় কি না, তা দেখতে আমি আপনাদের দুপক্ষের সঙ্গেই একযোগে কাজ করব।

কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের শুরু সেই ১৯৪৭-এ, যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত স্বাধীনতা পায় আর ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান নামক দুটি দেশের জন্ম হয়। দুই দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখ- বলে দাবি করে। যদিও তারা শাসন করে কাশ্মীরের দুই অংশে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা এবং পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক আলোচনা দিয়ে যখন বড় সংঘাত এড়ানো গেলেও, ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিল্লিকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম সরন বিবিসিকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এ প্রস্তাবটিকে ভারত স্বাগত জানাবে না। বহু বছর ধরে আমাদের ঘোষিত অবস্থানের বিপরীত এ প্রস্তাবটি।’ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ২০১৯ সাল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে দিল্লির অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য অনেক ভারতীয়ই বিরক্ত। এটিকে তারা কাশ্মীর বিতর্কের আন্তর্জাতিকীকরণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। ভারতের বাইরে থেকে যুদ্ধবিরতির প্রথম ঘোষণা আসার বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। এ ব্যাপারে একটি সর্বদলীয় বৈঠকও ডাকার কথা বলেছে তারা। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশের প্রশ্ন, আমরা কি তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতার পথ খুলে দিয়েছি? ভারতের জাতীয় কংগ্রেস জানতে চায় যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা আবারও চালু হচ্ছে কি না।

ঐতিহাসিকভাবে ভারত যেকোনো তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতার বিরোধিতা করে এসেছে। এর পেছনে দুই দেশের মধ্যে ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির শর্ত দেখিয়ে থাকে ভারত। দুটি দেশের শীর্ষনেতাদের সই করা সিমলা চুক্তি অনুসারে, তারা ‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মতপার্থক্য নিষ্পত্তি করতে সংকল্পবদ্ধ’। তবে ট্রাম্পের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া এবং বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরে দীর্ঘ সময় ধরে যে বিষয়টি গুরুতর প্রভাব ফেলছে, সেই জম্মু-কাশ্মীরের বিতর্ক সমাধানে সহায়তা করার যে ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ করেছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দেয়নি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারত বরাবরই সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও আপসহীন অবস্থান বজায় রেখেছে। এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত