শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বনি ইসরাইলের তিন ব্যক্তিকে আল্লাহর পরীক্ষা

আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ১২:৪৮ এএম

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, বনি ইসরাইলে তিনজন লোক ছিল। তাদের একজন ছিল শ্বেতি রোগী, একজনের মাথায় ছিল টাক, আরেকজন ছিল অন্ধ। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তাদের কাছে এক ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা প্রথমে শ্বেতি রোগীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘(শরীরের) সুন্দর রঙ আর সুন্দর চামড়া!’ ফেরেশতা তখন তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার রোগ দূর হয়ে গেল এবং তার গায়ের রঙ ও চামড়া সুন্দর হয়ে গেল।

এরপর ফেরেশতা তাকে বলেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদের কথা বলো! সে বলল, উট। তখনই তাকে একটি গর্ভবতী উটনি দেওয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ তাতে তোমার জন্য বরকত দান করুন। এরপর ফেরেশতা চলে গেলেন টেকো ব্যক্তির কাছে। তাকেও জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘সুন্দর চুল। মানুষ যে আমাকে এই টাকের জন্য অপছন্দ করে!’ ফেরেশতা তখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার টাক দূর হয়ে গেল এবং তার মাথা সুন্দর চুলে ছেয়ে গেল। এরপর ফেরেশতা তাকে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদের কথা বলো! সে বলল, গরু। তখনই তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেওয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ তাতে তোমার জন্য বরকত দান করুন।

সবশেষে ফেরেশতা গেলেন অন্ধ ব্যক্তির কাছে। তার কাছেও একই প্রশ্ন, তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘আল্লাহ যদি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতেন, আমি তাহলে মানুষকে দেখতে পেতাম।’ ফেরেশতা তখন হাত বুলিয়ে দিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার চোখে দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলো। এরপর ফেরেশতা তাকে বলেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ কোনটি? সে বলল, ছাগল। তখনই তাকে একটি গর্ভবতী ছাগল দেওয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ তাতে তোমার জন্য বরকত দান করুন। এরপর তাদের উট, গরু আর ছাগলে আল্লাহ যথেষ্ট বরকত দিলেন। কারও মাঠভর্তি উট, কারও মাঠভর্তি গরু আর কারও মাঠভর্তি ছাগল। ফেরেশতা আবার এলেন। প্রথমেই উটের মালিকের কাছে গিয়ে বললেন, আমি মিসকিন, সফরে আমার সব কিছু হারিয়ে গেছে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। তিনি তো তোমাকে সুন্দর গায়ের রঙ, সুন্দর চামড়া আর এই ধন-সম্পদ দান করেছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটি উট দাও, তাহলে আমি আমার সফর শেষ করে ফিরে যেতে পারব। সে বলল, আমার তো কত মানুষকে দিতে হয়! (তোমাকে দিতে পারছি না।) ফেরেশতা এরপর বলল, আমি তো মনে হচ্ছে তোমাকে চিনতে পারছি। তোমার কি শ্বেতি রোগ ছিল না, যে কারণে মানুষ তোমাকে অপছন্দ করত? এরপর আল্লাহ তোমাকে এসব দান করলেন। সে বলল, এগুলো তো আমার বাপ-দাদার সম্পদ! ফেরেশতা বলেন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাকো, তাহলে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ যেন তোমাকে সে অবস্থায়ই ফিরিয়ে দেন। এরপর ফেরেশতা গেলেন গরুর মালিকের কাছে। তার কাছেও একই ভাষায় সাহায্যের আবদার করলেন। সেও একই ভাষায় ফিরিয়ে দিলো। ফেরেশতাও তার জন্য একই বদদোয়া করলেন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাকো, তাহলে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ যেন তোমাকে সে অবস্থায়ই ফিরিয়ে দেন।

এবার ফেরেশতা ছাগলের মালিকের কাছে গিয়ে বলেন, আমি মিসকিন, মুসাফির। তার কাছেও একই ভাষায় সাহায্যের আবদার করলেন। সে বলল, আমি তো অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমার চোখ ভালো করে দিয়েছেন। আমি দরিদ্র ছিলাম, তিনি আমাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন। তুমি যা ইচ্ছা নিয়ে নিতে পারো। তুমি যা কিছু নেবে আমি তোমাকে কিছু বলব না। ফেরেশতা বললেন, তোমার সম্পদ তোমার কাছেই থাক, তোমাদের পরীক্ষা করা হয়েছে, আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তোমার দুই সঙ্গীর ওপর তিনি অসন্তুষ্ট। (সহিহ বুখারি)

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত