শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

বিচার না হওয়া পর্যন্ত  নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং গেজেট প্রকাশের পর দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞের নির্দেশদাতাসহ ৫ অভিযোগে বিচারের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনও প্রস্তুত। এত দায় ও অভিযোগের মধ্যে রাজনৈতিক দল হিসাবে ভবিষ্যৎ কোন পথে-- এমন প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। 

তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর পলাতক এক সদস্য বলছেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে অত ভাবনা নেই তার দলের। মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের ইতিহাসের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ চলে আসবে। ফলে এটি খুব কার্যকর কিছু হবে না।’   

কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও দলের নিবন্ধন স্থগিতের পর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগকে নিয়ে আরও দুটি টার্গেট রয়েছে। প্রথমটি হলো, দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি-লুটপাট ও অবৈধ অর্থ সরকারি কোষাগারে নেওয়া। দ্বিতীয়টি হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রাখা। এই দুই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে সূত্রগুলো। 

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করার পাশাপাশি তা ফ্রীজ করা ও বাজেয়াপ্তের উদ্যোগ চলমান রেখেছে। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর চলমান গ্রেপ্তার অভিযান আরও বেগবান হওয়ার পথ প্রসারিত হয়েছে। 

সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অভ্যুথানে এক বড় হত্যাযজ্ঞের পরও পালিয়ে ও আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দেশকে অস্থির করে তোলার পাঁয়তারা করেই চলেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা ছাড়া সরকারের হাতে বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না। যেহেতু দলের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে অরাজকতামুখর আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করা কিংবা দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সমালোচনা থাকবে না।

সূত্রগুলো আরও জানায়, আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই দেশের মানুষের কাছে একটি অপশক্তি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন সরকারকে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পথ বাতলে দিয়েছে। 

সরকারি সূত্রগুলো আরও জানায়, আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলেও দলটির পক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আলোচনা সমালোচনা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করায় ভারত উদ্বিগ্ন বলে খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। 

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিক সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘কোনও উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ না করেই আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ একটি উদ্বেগজনক ঘটনা।’ 

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধে সমালোচনা না হওয়ার বিষয়টি অন্তবর্তী সরকারকে ফুরফুরা রেখেছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দলটিকে যে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার করে তুলেছিল এটি তারই প্রমাণ। ফলে নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতিতে কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসন করার সুযোগ নেই। তা হলে দেশের গণতন্ত্র ও জনগণকে আরেকবার মহাবিপদের মুখোমুখি করবে। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জনদাবী সরকার পূরণ করেছে মাত্র। এর বাইরে কিছুই নয়। আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসন করার রাজনীতি যে বা যারা করবে তাদের দেশের আপামর জনগণ ছাড় দিবে না।’   

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে' আওয়ামী লীগ ও তাদের দলটির নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ দলটির 'সব ধরনের কার্যক্রম' নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সমালোচনার সুর তেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেনি। তবে দলকে নিষিদ্ধ না করে দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে।

সন্ত্রাসী বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর অনুমোদনের পর অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব  ভূইয়া   শনিবার (১০ মে) তার নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে লিখেছেন, 'বর্তমান আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা সত্ত্বা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু কোন সত্ত্বার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিলো না। এখন সেটি করা যাবে'।

সোমবার (১২ মে) জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে,  ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক  যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’ 

এদিকে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না তা নিয়েই বেশি কৌতূহল  দেখা যাচ্ছে। সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বতী সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে অন্তর্বতী সরকার। এ বিষয়ে সরকারই দায়দায়িত্ব বহন করবে। আমি কিছু বলতে চাই না।’  

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘নির্বাহী আদেশে দল নিষিদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।’  

এদিকে বিশেষজ্ঞ একাধিক আাইনজীবী অনেকে মনে করেন, প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বা কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার ফলে এখন থেকে দলীয় কোনো কার্যক্রম ছাড়াও অনলাইন, অফলাইন বা অন্য কোনো মাধ্যমে দলটির পক্ষে যায় এমন  কোনো কিছুই কেউ করতে পারবে না। 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত