প্রযুক্তিতে আমরা যত অগ্রসর হচ্ছি, ততই যেন দেশ-বিদেশের একটি বণিক গোষ্ঠী আগ্রাসী হয়ে উঠছে। অর্থের বিনিময়ে দেশের মানুষকে সেবা (!) দিচ্ছে যারা, তারা কখনো মানুষের কথা ভাবে না। বিশেষ করে, মোবাইল প্রযুক্তিতে। বর্তমানে মোবাইল ফোন কোম্পানি রয়েছে ৪টি। গ্রামীণ, বাংলালিংক, এয়ারটেল ও টেলিটক। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে মোবাইল সিমের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি ৩৬ লাখ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৮ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার, রবির ৫ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার। বাংলালিংক ৩ কোটি ২৫ হাজার আর টেলিটক বাকিগুলো।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে। সিটিসেল নিয়ে আসে প্রথম মোবাইল ফোন। এটি শুধু বাংলাদেশেই প্রথম ছিল না, উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ছিল। চড়া মূল্য এবং সীমিত নেটওয়ার্কের কারণে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অল্প কিছু মানুষ এই ফোন ব্যবহার করত। গ্রামীণফোন ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম চালু করে প্রি-পেইড প্যাকেজ যার নাম ছিল ‘ইজি’।
প্রি-পেইড প্যাকেজগুলোতে শুরু থেকেই প্রতি মিনিট কলচার্জ ভ্যাটসহ ৬.৭৫ টাকা ছিল। বলা যায় দীর্ঘ সময় ধরেই এই কলচার্জ চালু ছিল। এরপর ২০০৫ সাল থেকে ফোন কলের ট্যারিফ কিছুটা কমতে শুরু করে। বলা চলে, দীর্ঘ সময় ধরেই ১ মিনিট পালস ব্যবস্থা চালু ছিল। বাংলালিংক আসার পর ২০০৫ সাল থেকে ৩০ সেকেন্ড পালস ব্যবস্থা চালু হয়। আর ১০ সেকেন্ড পালস চালু হয় ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রি-পেইড প্যাকেজগুলোতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মোবাইল টু মোবাইল সংযোগ ছিল। মোবাইল ফোন থেকে ল্যান্ডফোন বা আইএসডিতে কল করার ব্যবস্থা ছিল না। প্রযুক্তিগত কারণে সেই সময় বিটিটিবির ল্যান্ডফোনের আন্তঃসংযোগ বাড়ানো সম্ভব ছিল না। শুরুর দিকে কোনো প্রি-পেইড ছিল না। এমনকি কে ফোন করছেন, তা জানতে হলেও কলার আইডি কিনতে হতো। আর পোস্ট-পেইড সংযোগের লাইন রেন্ট ছিল ৫০০ টাকা। ভ্যাটসহ প্রদান করতে হতো ৫৭৫ টাকা। আবার নির্দিষ্ট তারিখে বিল প্রদান না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতো। কাউকে ফোন করলে এপাশ থেকে শোনা যেত ‘আপনি নির্ধারিত বিল পরিশোধ না করার কারণে, আপনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’ আসলে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাবুলিপনা চলছে প্রথম থেকেই।
দেশে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়েছে ২০০১ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ওয়্যারলেস অ্যাপ্লিকেশন প্রটোকল বা ওয়াপ ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালু করে গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোনের পর মুঠোফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান সিটিসেলও ওয়াপভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করেছিল। এরপর বাংলালিঙ্ক, এয়ারটেল ইন্টারনেট সেবা চালু করে। এবার ২০২৫ সালে জানা যাচ্ছে, মোবাইল অপারেটরগুলো ইন্টারনেটের দাম না কমালে সরকার কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বলেছেন, মোবাইল কোম্পানিগুলো যাতে ইন্টারনেটের দাম কমায়, সেজন্য পর্যাপ্ত রেগুলেটরি ও বাস্তবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থের বিনিময়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো জনগণকে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু ফোনে কথা বলতে, ইন্টারনেট চালাতে কোম্পানির শর্ত কেন মানতে হবে? কোনো দোকানদার কি বলতে পারেন ‘আপনাকে ১ মণ চাল খেতে হবে, ৩ দিনে! না হলে বাড়তি চাল আমরা বাসা থেকে নিয়ে আসব। আপনি আবার যখন চাল কিনবেন, তখন এগুলো ফেরত পাবেন! এতো রীতিমতো উগ্র কাবুলিওয়ালা কৌশল। কীভাবে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করা যায়, সর্বক্ষণ শুধু সেই চিন্তা করলে ব্যবসা হয় না। অন্যান্য দেশের মোবাইল সেবা দেখুন। জনগণকে তারা কীভাবে সেবা দিচ্ছে। সেবার নামে এসব কবে বন্ধ হবে, কে জানে?