আখেরাত সম্পর্কে বিশ্বাস রাখা ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলির অন্তর্ভুক্ত। এই বিশ্বাস শুধু তাত্ত্বিক কোনো বিষয় নয়; বরং এটি একজন মুসলমানের জীবনদর্শন, চিন্তা, নীতি ও আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। এই বিশ্বাসই মানুষকে পরিপূর্ণ ইমানদার বানায় এবং তাকে পাপ-পংকিলতা থেকে রক্ষা করে। কোরআন-সুন্নাহে আখেরাতের নানা দিক বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে তিনটি অবস্থা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নাম।
পুনরুত্থান : মৃত ব্যক্তিদের কবর থেকে আবার জীবিত করা হবে। সব মানুষ সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের এরপর মৃত্যুবরণ করতে হবে। অতঃপর নিশ্চয়ই তোমাদের কেয়ামতের দিন আবার ওঠানো হবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ১৫-১৬) বর্ণিত আয়াতে বলা হয়েছে, সবাই এ জগতে আসা ও বসবাসের পর মৃত্যুর সম্মুখীন হবে। কেউ এর কবল থেকে রক্ষা পাবে না। মৃত্যুর পর আবার কেয়ামতের দিন জীবিত করে পুনরুত্থিত করা হবে, যাতে মানুষের ক্রিয়াকর্মের ভালো-মন্দের হিসাব করার পর মানুষের আসল ঠিকানা জান্নাত অথবা জাহান্নামে পৌঁছে দেওয়া যায়।
হিসাবনিকাশ ও মিজান : সৃষ্টিজীব দুনিয়াতে যেসব কর্ম করেছে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তাদের সেসব কর্মের হিসাব নেবেন। মিজান বা পাল্লায় আমলগুলো ওজন করা হবে। যার বদ আমলের চেয়ে নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে, সে জান্নাতি হবে। যার নেক আমলের চেয়ে বদ আমলের পাল্লা ভারী হবে, সে জাহান্নামি হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যার ডান হাতে তার আমলনামা দেওয়া হবে, অচিরেই তার হিসাব-নিকাশ সহজ করা হবে। বস্তুত সে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে যাবে। কিন্তু যার আমলনামা তার পিঠের পেছনের দিক থেকে দেওয়া হবে, সে অচিরেই মৃত্যুকে ডাকবে এবং সে উত্তপ্ত জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা ইনশিকাক, আয়াত ৭-১২)
হিসাব প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, কেয়ামতের দিন যার হিসাব নেওয়া হবে, সে আজাব থেকে রক্ষা পাবে না। এ কথা শুনে আয়েশা (রা.) প্রশ্ন করলেন, কোরআন মাজিদে কি ‘অচিরেই তার হিসাবনিকাশ সহজ করা হবে’ বলা হয়নি? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ আয়াতে যাকে সহজ হিসাব বলা হয়েছে, সেটা প্রকৃতপক্ষে পরিপূর্ণ হিসাব নয়; বরং কেবল আল্লাহর সামনে পেশ করা। যে ব্যক্তির কাছ থেকে তার কাজকর্মের পুরোপুরি হিসাব নেওয়া হবে, সে আজাব থেকে কিছুতেই রক্ষা পাবে না।’ (সহিহ বুখারি ৪৯৩৯)
জান্নাত ও জাহান্নাম : জান্নাত হলো চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির স্থান। মহান আল্লাহ মুমিনদের জন্য তা তৈরি করে রেখেছেন। আর জাহান্নাম চিরস্থায়ী দুঃখ-কষ্টের স্থান। আল্লাহ এবং তার রাসুলের অবাধ্যদের জন্য আল্লাহ তা তৈরি করে রেখেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের জন্য দ্রুত অগ্রসর হও। যার প্রশস্ততা হলো আসমান ও জমিন সমতুল্য, যা মুত্তাকিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৩) অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর যারা হতভাগ্য তারা থাকবে দোজখে। সেখানে তাদের জন্য থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ।’ (সুরা হুদ, আয়াত ১০৬)