শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

এক লোকমা ভালোবাসা

আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ১২:২৮ এএম

নব্বই দশকের কলেজপড়ুয়া মা আমার কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছেন আজ। পড়তে পারেন না ঠিকঠাক। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। আব্বা অফিসে চলে যান। ছোট বোন-ভাই চলে যায় তাদের স্কুলে। আর আমরা দুই ভাই সেই যে একবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম পড়ার উদ্দেশ্যে, আজও ফেরা হলো না ঠিকঠাক।

আম্মা অসুস্থ শরীর নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকেন ঘরের এক কোণে। অথচ একসময় বাড়িতে কত মানুষ ছিল। ছিল আনন্দ। আমাদের আনন্দ, হৈ-হুল্লোড় নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন মা। তার সবাইকে ভুলে আপন করে নিয়েছেন আমাদের। অথচ আজ আমাদের একেকজনের অনেক কাজ। পড়াশোনা আছে, বন্ধুবান্ধব আছে, অফিস আছে। আছে ক্লাব, সংগঠন।

এতকিছু পরও আম্মার কোনো দুঃখ নেই। আফসোস নেই। ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। পড়ছে, কাজ করছে। মানুষ হচ্ছে  এতেই খুশি। পৃথিবীর সব মায়েরা বোধহয় এমনই হন।

এখনো বাড়ি গেলে আম্মার কাছে আমি সেই ছোটবেলার অন্তর হয়ে যাই। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সামনে ভাতের প্লেট নিয়ে হাজির হন। ছোটবেলায় না খেয়েই স্কুলে রওনা হলে যেমন করতেন এখনো ঠিক তাই। না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছি দেখলেই সামনে এসে আম্মা হাজির। বলতাম, সময় কম। খাব না এখন। খাব না বললেও পেটভর্তি যে ক্ষুধা তা ঠিকই বুঝতে পারতেন। বলতেন, এক লোকমা হলেও খেতে হবে। না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। আমি খাইয়ে দিচ্ছি, এই নে। মুখ হাঁ কর বাবা, হাঁ কর। হাঁ করতেই কয়েক লোকমা শেষ।

আম্মা, এখন কত না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হই, তার কোনো হিসাব নেই। কত দুপুর না খেয়ে পেটভর্তি ক্ষুধা নিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকি। কেউ বুঝে না। কত রাত মন খারাপ করে জেগে থাকি, গল্প করি তারার সঙ্গে। কেউ জানে না। এসব বাহারি খাবারে পেট ভরে না আমার। ইচ্ছা করে, এক লোকমা খাবার খাই তোমার হাতের।

আম্মা, তুমি ভালো থেকো! নিজের যত্ন নিও!

আমার মায়ের সঙ্গে পৃথিবীর সব মা ভালো

থাকুক। সুস্থ থাকুক। সুখে থাকুক ‘এক লোকমা ভালোবাসা’ নিয়ে।         লেখক : সাংবাদিক

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত