সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) অভিনব পদ্ধতিতে আয়োজন করে তাদের বয়সভিত্তিক আসরগুলো। যেমন কোনো বছর অনূর্ধ্ব-১৮ হলে পরের বছর সেটা হয় অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সীদের নিয়ে। তার পরের বছর আবার সেটা হয়ে যায় অনূর্ধ্ব-২০। ২০১৫ সাল থেকে এভাবেই চলে আসছে। এই তিন বয়স বিভাগের টুর্নামেন্টের ফাইনালে যে ক’বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত, প্রতিবার শিরোপা গিয়েছে ভারতের হাতে। ২০১৯ সালে ভুবনেশ্বরে অনূর্ধ্ব-১৯ ফাইনালে ভারত শিরোপা জিতেছিল ২-১ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়ে। ২০২২ সালেও হয়েছে পুনরাবৃত্তি। সেবার অনূর্ধ্ব-২০ আসরের ফাইনালে ভারত জেতে ৫-২ গোলে। অতিরিক্ত সময়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তিন বয়স বিভাগে একবারই বাংলাদেশ জিতেছে শিরোপা সেটি গত বছর নেপালের মাটিতে স্বাগতিকদের হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ আসরে। এবার ফের শিরোপা ও বাংলাদেশের মধ্যে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে ভারত। অরুণাচল প্রদেশে স্বাগতিকদের হারিয়ে অতীতের আক্ষেপ ভুলতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
কাজটা মোটেই সহজ নয়। আসরের দুই সেরা দলের দেখা হচ্ছে সেরা মঞ্চে। বাংলাদেশ এ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে গিয়েছিল। তবে গ্রুপ পর্বে হোঁচট খেতে হয় তাদের। মালদ্বীপের সঙ্গে ২-২ ড্রয়ের পর ভুটানকে ৩-০ গোলে হারায় গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। এরপর সেমিফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আসে তারা।
ভারত অবশ্য গোলৎসব করতে করতে উঠে এসেছে নিজেদের আঙিনার ফাইনালে। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কাকে ৮-০ এবং নেপালকে ৪-০ গোলে হারানোর পর মালদ্বীপকে সেমিফাইনালে হারায় ৩-০ ব্যবধানে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যেখানে সাত গোলের বিপরীতে তিন ম্যাচে তিন গোল হজম করেছে, সেখানে ভারত তিন ম্যাচে করেছে ১৫ গোল। বিপরীতে তাদের জাল ছিল ক্লিনশিট।
মানে দাঁড়াচ্ছে ভারতকে হারাতে হলে প্রথমেই বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডদের বড় পরীক্ষা দিতে হবে ভারতীয় রক্ষণভাগের কাছে। সেই চ্যালেঞ্জ নাজমুল হুদা ফয়সাল, মুর্শেদ আলী, সিফাতরা কতটা জিততে পারবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে তাদের যে চেষ্টার কমতি থাকবে না, সে বিশ্বাস আছে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের, ‘আমাদের ছেলেরা এই টুর্নামেন্টে প্রতিটি ম্যাচেই ভালো ফুটবল খেলেছে। তারা অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। এখন তারা অনেক আত্মবিশ্বাসী, ফাইনালের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।’ টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে তিন গোল করে বাংলাদেশের সেরা গোলদাতা অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সাল। ফাইনালের বাড়তি উত্তেজনা মানিয়ে নিয়ে তিনি চান এবারের ফাইনালটা জিততে। অতীতে যে দুবার এই ভারতের কাছেই ফাইনালে হারের স্বাদ পেতে হয়েছিল তাকেও। ফয়সাল বলেন, ‘ফাইনালে সবসময় একটু এক্সাইটমেন্ট কাজ করে। এটা টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচ। এখানে দুইটা দলই চাইবে জিততে, ভালো খেলতে এবং ট্রফি দেশে নিয়ে যেতে। আমরা এখানে এসেছি লক্ষ্য পূরণ করতে। ইনশাআল্লাহ সেটা করেই দেশে ফিরব।’ আসরে ভারতের সঙ্গে প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে ফাইনালের মঞ্চে। এটা দুদলের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জের মানছেন ফয়সাল, ‘দুই দলের জন্যই কঠিন। কেউ কারও বিপক্ষে খেলিনি। যেহেতু ফাইনালে ভারত, সেক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। ভারত ভালো দল, তাদের প্রতি সম্মান আছে আমাদের। আমরা এসেছি লক্ষ্য পূরণ করতে। আমরা শতভাগ নিংড়ে দেব।’
ভারতের কোচ বিবিয়ানো ফের্নান্দেজ মনে করেন একটা জমজমাট ফাইনাল উপহার দেবে দুই দল। বাংলাদেশকে প্রাপ্য সম্মানটা কথায় মধ্য দিয়ে দিয়েছেন কোচ। তবে মাঠে সেটা থাকবে বল মনে হচ্ছে না। ভারতের কোচ বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, তারা (বাংলাদেশ) কতটা ভালো এবং ভালো খেলা প্রদর্শন করেছে, বিশেষ করে সেমিফাইনালে। তাদের প্রতি সম্মান আছে আমাদের এবং আমরা নিজেদের প্রস্তুত করেছি ফাইনালের জন্য। ফাইনালে আমরা সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে চাই।’ ভারত অধিনায়ক সিঙ্গামায়ুম শামির শিরোপায় দৃষ্টি রেখে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) আমরা সেরাটা দিতে চাই। আমরা খুবই খুশি যে অরুণাচলের সমর্থকরা আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। ফুটবলে কী হবে সেটা বলা যায় না, আমরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত এবং ঘরে ট্রফি রেখে দিতে চাই।’