গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) হঠাৎ হাজির হন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তারা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাধারণত এমন দৃশ্য দেখা যায় না। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই আজ দ্বিতীয় দফায় বিসিবি কার্যালয়ে অভিযানে আসে দুদকের চার সদস্যের একটি বিশেষ টিম। এবারের অভিযোগ- নতুন গঠনতন্ত্র, তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের বাছাইপর্ব এবং আর্থিক অনিয়ম নিয়ে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে তৃতীয় বিভাগ লিগের বাছাইয়ে অনিয়ম ও বিসিবির গঠনতন্ত্রে অসংগতি খুঁজে পেয়েছে দুদক।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আসেন দুদকের চার কর্তা। অভিযোগ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করেন তারা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে প্রক্রিয়া মেনে বিসিবি চলার কথা সেখানেও অসংগতি পেয়েছে দুদক। তবে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাচ্ছে না দুদক। বিসিবির সব প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ।
বিসিবির গঠনতন্ত্রে অনিয়ম প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘অভিযানের বিষয় ছিল তৃতীয় বিভাগের বাছাই প্রক্রিয়া, নতুন গঠনতন্ত্র এবং অন্যান্য বিভিন্ন আর্থিক অভিযোগ নিয়ে আমরা এখানে আসছি। সেই অভিযোগের আলোকে আমরা নথিপত্র সংগ্রহ করে সকাল থেকে সেগুলো পর্যালোচনা করলাম। আমরা সবার সঙ্গে কথা বললাম। সব কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। কিছু কাজ এখনো বাকি আছে।’ গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিসিবি একটা গঠনতন্ত্রের আলোকে পরিচালিত হয়। তা কতটা বৈধ এবং সিদ্ধ সেটা আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে গঠনতন্ত্রে কিছু অসংগতি আছে। এখানে গঠনতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নগুলো উঠেছে, সেখানে আদালতের একটা রায় ছিল। সেই রায় অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধিত হয়ে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে। গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা শেষে আমরা একটা বিষয় খেয়াল করেছি, একটা অর্গানাইজড উপায়ে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল বিসিবি। কিন্তু এই জায়গাতে আমরা অসংগতি পেয়েছি।’
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর বোর্ডের একাধিক এফডিআর ভেঙে নতুন করে কয়েকটি ব্যাংকে অর্থ পুনঃবিনিয়োগ করা হয়। এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তা নিয়ে দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘কীভাবে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, কারা এতে স্বাক্ষর করেছেন, এসব বিষয়ে বিসিবির গঠনতন্ত্র কী বলে তা বিশ্লেষণ করা হবে। তারা বলছেন (বিসিবি) নিরাপদ তিন ধরনের ব্যাংকে অর্থ রাখা হয়েছে। এই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটিও আমরা যাচাই করব।’
তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের বাছাই নিয়ে দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দেখেছি এখানে এমন কিছু শর্তাদি দেওয়া হয় যেটা আমাদের দেশের ক্লাবগুলোর জন্য...আমাদের দেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থা, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক খেলোয়াড় উঠে আসে তাদের সহযোগিতা করার যে পথ সেগুলো রুদ্ধ করা হয়েছে।’ তদন্তের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো অসংগতি পাওয়া গেছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের যে বাছাই প্রক্রিয়া সেটা একসময় ছিল বেশ সহজ প্রক্রিয়া। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের পর কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়, সেখানে ২-৩টার বেশি দল অংশগ্রহণ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে এটা অনেক কম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে যাচ্ছে। তাতে আমাদের জাতীয় দলের জন্য ভালো খেলোয়াড় তৈরির পাইপলাইনটা খুবই সীমিত হয়ে যায়। এই বিষয়টাকেই আমরা ফোকাস করেছি।’