এশিয়া কাপ ঘিরে উত্তেজনা থাকার কথা মাঠে, কিন্তু এবারের টুর্নামেন্ট যেন শুরু হওয়ার আগেই ঢুকে পড়েছে রাজনৈতিক রেষারেষির গোলকধাঁধায়। ক্রিকেটীয় উত্তেজনার চেয়ে বেশি শোরগোল এখন ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও গুঞ্জনটা জোরালো এশিয়া কাপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে যাচ্ছে ভারত।
গতকাল প্রথমে খবরটা দেয় ভারতের একটি দৈনিক-ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তারা দাবি করে, বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে জানিয়ে দিয়েছে তাদের না খেলার সিদ্ধান্ত। অথচ এবারের আসরটির আয়োজকও তো ভারত!
কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের সচিব দেবজিত সাইকিয়া আরেক দৈনিককে জানিয়েছেন, ‘এটা ভিত্তিহীন খবর। এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি, এমনকি এ বিষয়ে আলোচনা পর্যন্ত হয়নি।’ তিনি এটাও জানান, যখনই কোনো সিদ্ধান্ত হবে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে। ভারতের না খেলার সম্ভাবনার পেছনে যে ক্রিকেট নয়, বরং রাজনৈতিক টানাপড়েন মূল চালিকাশক্তি, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসিসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন মহসিন নকভি, যিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান, একই সঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও। ভারত এই অবস্থানে থাকা কোনো পাকিস্তানি নেতার ছায়াতলে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় না। সীমান্ত উত্তেজনা এবং যুদ্ধাবস্থার আবহে এই অবস্থান যে অনেকটা প্রতীকী প্রতিবাদও বটে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভারতের একাধিক সাবেক তারকা যেমন সুনীল গাভাস্কার, সৌরভ গাঙ্গুলী, গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দর শেবাগদের মন্তব্যে সেই রাজনৈতিক মনোভাবের প্রতিফলন পাওয়া যায়, তারা সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের ক্রিকেট সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে।
এশিয়া কাপ বর্জনের ইতিহাস একেবারে নতুন নয়। ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে অংশ নেয়নি ভারত। সেই সময়েও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপড়েন ছিল কারণ। আবার ১৯৯০-৯১ সালের আসরে ভারত স্বাগতিক হলেও অংশ নেয়নি পাকিস্তান, সেই একই অজুহাতে। ২০২৩ সালেও দেখা গেছে রাজনৈতিক নাটক। ভারত খেলতে অস্বীকৃতি জানালে টুর্নামেন্ট আয়োজন হয় হাইব্রিড মডেলে, আংশিক পাকিস্তানে, বাকিটা শ্রীলঙ্কায়। এবারও সেই আশঙ্কা ফিরে এসেছে।
এবারের আসরে আটটি দল অংশ নেবে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ওমান, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। দলসংখ্যা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু ক্রিকেটের অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান পাহাড়সম। তাই স্বাগতিক দেশ হিসেবে ভারত না থাকলে পুরো টুর্নামেন্টই পড়ে যাবে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে।
এসিসি ইতিমধ্যে সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্কের কাছে ১৭ কোটি মার্কিন ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৭১ কোটি টাকা) আগামী চার আসরের সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেছে। এ চুক্তির শর্তেই আছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অন্তত দুটো করে রাখতে হবে প্রতি আসরে।
ভারত না খেললে চুক্তির সেই মোক্ষম চুম্বকই হারিয়ে যাবে। সনি তখন সেই বিপুল অর্থ দিতে নারাজ হবে, স্বাভাবিকভাবেই এসিসির মাথায় ভর করবে লোকসানের ছায়া। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, স্পন্সরশিপ, টিকিট বিক্রি সবই ভরসা করে ভারতীয় দর্শক ও বাজারের ওপর।