গিয়েছিলেন পাকিস্তান সুপার লিগ খেলতে। লেগে গেল যুদ্ধ। তারপর আতঙ্কের দিনরাত্রি। নাহিদ রানার পিএসএল-এর অভিজ্ঞতা এমনই। পেশোয়ার জালমি দলে ডাক পেলেও খেলতে পারেননি এক ম্যাচও। চার্টার্ড বিমানে করে পাকিস্তান থেকে দুবাই, সেখান থেকে দেশে ফেরা। দিন কয়েক পর ফের দুবাইতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গিয়ে ভিসা জটিলতায় আড়াই দিন হোটেলবন্দি। এরপর টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই বোলিংয়ে করেছেন রান দেওয়ার হাফসেঞ্চুরি, দল হেরেছে আরব আমিরাতের কাছে। বছর বাইশের নাহিদ রানা বোধহয় আর সইতে পারছেন না এই মানসিক চাপ, তাই তো ফের
পাকিস্তান যাত্রায় তার তীব্র আপত্তি। বাংলাদেশ দলের আসন্ন পাকিস্তান সফর থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ডানহাতি পেসার নাহিদ রানা। কোচিং স্টাফের সদস্যদের ভেতর ফিল্ডিং কোচ জেমস প্যামেন্ট আর ফিটনেস ও স্ট্রেন্থেনিং কোচ নাথান কেলি যাচ্ছেন না পাকিস্তানে।
বুধবার মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন দুবাই ফেরত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি জানালেন, ক্রিকেটারদের ভেতর খানিকটা শঙ্কা আছে তবে নিরাপত্তাব্যবস্থা হবে জোরদার, ‘(শঙ্কা) এটা তো থাকবেই। যে ধরনের ঘটনার মুখোমুখি নাহিদ রানা বা রিশাদকে হতে হয়েছে তা কিছুটা যদি ট্রমাটাইজড করে একজনকে, তাদের দোষ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে কারণে সম্ভবত ও (নাহিদ রানা) নিজেকে উইথড্র করেছে।’ কোচদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে (পাকিস্তানে) আমি গিয়েছিলাম। মনে হয় না এর চেয়ে বেশি কিছু করার সুযোগ আছে। যে রকম নিরাপত্তা তারা দেয়, তার থেকে বেশি। আমার পিসিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন, আমাদের পক্ষে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব আমরা সবকিছু করব। অলরেডি তো তারা যথেষ্ট সিকিউরিটি অ্যারেঞ্জমেন্ট করে। রিসেন্টলি যে ঘটনা ঘটেছে। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা থাকতে পারে, সেটাই তাদের বিবেচনায় আছে। নাহিদ রানার কথা তো বললাম, সে যেহেতু রিসেন্টলি ওখানে ছিল, অনেক কিছুর মুখোমুখি অন্য দুজন, আমরা জানি ওরা এই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হতে চায় না। এই ধরনের পরিস্থিতি আসলে সাধারণত এভয়েড করতে চায়। সেটাই হয়তো কারণ। রিশাদও কিন্তু ভাবেনি যে, তা নয়। তবে আমার ধারণা গ্র্যাজুয়্যালি আস্তে আস্তে সবাই বোধ হয় একটু স্বাভাবিক হতে পেরেছে। নিজেদের মধ্যে আলাপ করেছে। আমাদের হেড কোচ নিজে যাচ্ছে। সবকিছুই হয়তো অন্যদের মোটিভেট করেছে একটু অন্যভাবে চিন্তা করতে এবং শেষে দলের সঙ্গে যেতে।’
ফাহিম আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক যাবেন এবং দলের দেখভাল করবেন পাকিস্তানে। সিরিজের ম্যাচগুলো হবে লাহোরে ২৮ মে, ৩০ মে এবং ১ জুন তারিখে। বাংলাদেশ দল ২৫ তারিখে পা রাখবে লাহোরে, ২৬ এবং ২৭ তারিখ করবে অনুশীলন। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় শুরু হবে সবকয়টি ম্যাচ। সিরিজের ম্যাচসংখ্যা কমিয়ে আনার পেছনে ঈদের সময়সূচির কথাই জানিয়েছেন ফাহিম, ‘পিএসএল পিছিয়ে যাওয়াতে সিরিজটা শুরু হতে হতে ২৫ তারিখের বদলে ২৮ তারিখ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সিরিজ শুরু করলে একদিন পর পর খেলা এবং বেজোড় সংখ্যক ম্যাচ আয়োজন করতে হলে ঈদের দিনও খেলা রাখতে হতে পারে। খেলোয়াড়রা চাচ্ছিল না এই সময়টায় দেশের বাইরে থাকতে। তাই সিরিজের ম্যাচের সংখ্যা কমিয়ে ৩টি করা হয়েছে।’ নাহিদ রানার বিকল্প হিসেবে বাইরে থেকে আর কাউকে যোগ করা হবে না স্কোয়াডে, বরং আইপিএল খেলে মোস্তাফিজই যোগ দেবেন দলের সঙ্গে, জানিয়েছেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান, ‘পাঁচ ম্যাচ এবং দুই ম্যাচ হিসাব করেই দল করা হয়েছিল, পেসার বেশি রাখা হয়েছিল। এখন ম্যাচ যেহেতু কমে গিয়েছে, বাড়তি কোনো পেসার আর আমরা নিচ্ছি না। মোস্তাফিজই আইপিএল খেলে যোগ দেবে দলের সঙ্গে।’
পাকিস্তান দলও ঘোষণা করেছে ৩ ম্যাচের সিরিজের জন্য। দলে নেই শাহিন শাহ আফ্রিদি, বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। তাদের অনুপস্থিতি বাড়তি কোনো সুযোগ নয় বলেই মনে করেন ফাহিম, ‘তারা থাকলেও বাংলাদেশের সুযোগ থাকত। তবে তাদের ছাড়াও পাকিস্তান অনেক শক্তিশালী দল, যাদের নিয়ে দল গড়া হয়েছে এই মুহূর্তে তারাই সেরা।’
পাকিস্তান স্কোয়াড
সালমান আগা (অধিনায়ক), শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক), আবরার আহমেদ, ফাহিম আশরাফ, ফখর জামান, হারিস রউফ, হাসান আলি, হাসান নাওয়াজ, হুসাইন তালাত, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হারিস, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, মোহাম্মাদ ইরফান খান, নাসিম শাহ, সাহিবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব।