মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

অনাহারে গাজায় ৩২৬ জনের মৃত্যু

আপডেট : ২২ মে ২০২৫, ০৭:৩২ এএম

দীর্ঘ ১১ সপ্তাহের অবরোধ শেষে সীমান্ত পেরিয়ে ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকলেও গাজায় এখনো কোনো ত্রাণ বিতরণ হয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ৯৩টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যাতে ময়দা, শিশুখাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ ছিল। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, কেরেম শালোম ক্রসিংয়ে ফিলিস্তিনির পাশে ট্রাক পৌঁছালেও কোনো ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়নি। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক জানান, তাদের একটি দল ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ইসরায়েলি অনুমতি না পাওয়ায় ত্রাণ তাদের গুদামে স্থানান্তর করতে পারেনি। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার পাশাপাশি সর্বাত্মক অবরোধের কারণে খাবার ও পানির মতো জরুরি পণ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের এমন অবরোধের কারণে গত ২ মার্চের পর থেকে খাবারের অভাবে অন্তত ৩২৬ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।

গত রবিবার ইসরায়েল গাজায় সীমিত পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের বিষয়ে সম্মত হয়। যদিও বিশ্ব জুড়ে বিশেষজ্ঞরা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দুজারিক জানান, ইসরায়েল জাতিসংঘকে ত্রাণ ফিলিস্তিনির পাশে নামিয়ে আবার আলাদাভাবে লোড করতে বলেছে, যা কার্যক্রমকে জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, কিছু ত্রাণ ঢোকা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় এক ফোঁটা জল মাত্র। জাতিসংঘের হিসাবে গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলায় প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ট্রাকের প্রয়োজন। জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার সতর্কতা জানিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ প্রবেশ করতে না দিলে ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। ইউএনওসিএইচএ মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি কিছু শিশুর জীবন বাঁচাতে ত্রাণের অপেক্ষায় আছে, কারণ তাদের মায়েরা নিজেরাও খাবার পাচ্ছেন না। গত সপ্তাহে হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১১ সপ্তাহে অপুষ্টিতে অন্তত ৫৭ শিশু মারা গেছে।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধ না করায় ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া ব্রিটেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত তিজপি হোটেভলিকে তলব করেছে এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এ ঘোষণা দিয়েছেন। মার্চের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ¦ালানির মতো জরুরি পণ্যের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজায় চলমান সামরিক অভিযান অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করার উপায় হতে পারে না। তিনি ইসরায়েলকে অবিলম্বে মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ইসরায়েল সরকারের একটি অংশ যেটিকে তিনি ‘ চরমপন্থি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাদের তীব্র সমালোচনা করেন। ল্যামি ব্রিটিশ এমপিদের উদ্দেশে বলেন, এই আগ্রাসনের ব্যাপারে আমরা চুপ থাকতে পারি না। এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূলভিত্তির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এক কথায় এটি ব্রিটিশ জনগণের মূল্যবোধের প্রতি অপমান। তাই আমি ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করছি। এর আগে সোমবার ফ্রান্স ও কানাডার সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটেন গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের নিন্দা জানিয়েছে এবং মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, গাজায় সামরিক হামলায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত