বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শিশুর ওপর হরমোনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া

আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১২:১২ এএম

সাধারণত থাইরয়েড গ্রন্থি T3 এবং T4 নামক হরমোন তৈরি করে, যা শরীরের মেটাবলিজম ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ শরীর কীভাবে শক্তি প্রয়োগ বা ব্যবহার এবং সঞ্চয় করে তা নির্ধারণ করে। আর থাইরয়েড গ্রন্থি যখন পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না, তখন বিষয়টিকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়। শিশুর হাইপোথাইরয়েডিজম চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য রোগ।

কিন্তু চিকিৎসা না করলে শিশুটি সারা জীবনের জন্য বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে। সঙ্গে আরও অন্যান্য সমস্যা তো আছেই। আর সামান্য সচেতন হলেই এ রোগ থেকে চিরমুক্তি পেতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলো

গর্ভস্থ শিশু : এবরশন, স্টিলবার্থ, ক্রিটিনিজম 

নবজাতক : জন্ডিস দেরিতে ভালো হওয়া, নাভির হার্নিয়া, খুব বেশি নরম বাবু বিশেষ করে হাড়ের জোড়াগুলো। 

প্রথম বছর পর্যন্ত শিশু : খাওয়ার সমস্যা, বেশি ঘুম, প্রায়ই ক্লান্ত হওয়া, গাঢ় স্তরে কান্না করা, মোটা-ভারী জিহ্বা, বাবুকে বেশি নরম মনে হওয়া।

বড় শিশু : যাদের জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম আছে, কিন্তু চিকিৎসা চালু হয়নি, তারা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, বেটে-খাটো, শুনতে সমস্যা ও হার্টে সমস্যা থাকতে পারে। 

পরীক্ষা : রক্ত পরীক্ষা (T4. TSH), এক্স-রে- (হাঁটু, হাত), আলট্রাসাউন্ড (থাইরয়েড গ্লান্ড এবং অন্যান্য) ও আইসোটোপ স্ক্যান। এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে সব গর্ভবতী মায়েদের গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়া মাত্র থাইরয়েড স্কিনিং করা উচিত। আর যারা আগে থেকেই জানেন এ ধরনের সমস্যা আছে, তারা গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করার আগে এবং গর্ভাবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় এবং ত্রৈমাসিকের সময় পরীক্ষা করা উচিত। যে মায়ের

হাইপোথাইরয়েডিজম আছে তাকে থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেস করলে, তা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ। মনে রাখতে হবে, গর্ভাবস্থার আগে এবং গর্ভকালীন উভয় সময়েই থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকা প্রয়োজন। যদি কোনো মা হাইপোথাইরয়েডিজম চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে হরমোন গ্রহণ করে থাকেন, তবে গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করার আগে তার থাইরয়েড হরমোনের লেভেল পরীক্ষা করা উচিত।

যদি গর্ভাবস্থায় হাইপোথাইরয়েডিজমের নতুন ডায়াগনসিস হয়ে থাকে তাহলে আপনার উচিত ঞ৪ লেভেল যত শিগগিরই সম্ভব স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে আসা। গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড পরীক্ষা প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর পর করা উচিত। গর্ভবতী মা পর্যাপ্ত আয়োডিন পেয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন প্রেসক্রিপশনকৃত গর্ভকালীন ভিটামিন গ্রহণ করতে হয়। আর মনে রাখতে হবে, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের আয়োডিনের দরকার প্রতিদিন প্রায় ২৫০ মাইক্রোগ্রাম। তাই খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আয়োডিন যোগ করতে হবে। আরও যেটি সবচেয়ে বেশি মনে রাখতে হবে তা হলো ভিটামিন বা ক্যালসিয়াম এবং আয়রনযুক্ত সাপ্লিমেন্ট। খাবার থাইরয়েড ওষুধের সঙ্গে একত্রে গ্রহণ করা যাবে না। এই পুষ্টিগুলো থাইরয়েড হরমোন শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। থাইরক্সিন গ্রহণের কমপক্ষে ২ বা ৩ ঘণ্টা আগে এই ভিটামিনগুলো গ্রহণ করতে হবে। এরপরও যদি কোনো কারণে শিশুকে হাইপোথাইরয়েডে আক্রান্ত বলে মনে হয় তাহলে জরুরি ভিত্তিতে শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোগীর কোনো জটিলতা হয় না। বাচ্চার সঠিক বুদ্ধি হয় ও পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হয়। জরুরি বিষয় হলো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত