রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ফরিদা এখন সফল খামারি

আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১২:৩৭ এএম

একটা সময় খামারি ফরিদা বেগমের আটজনের সংসারে তিনবেলা খাবার জুটতো না। সেই অভাবকে জয় করে তিনি সফল খামারি। কঠোর পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন গৃহপালিত পশুপাখির খামার। খামার থেকে প্রতি মাসে লাভ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।

নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানাধীন দেলপাড়ার ফরিদা বেগমের মাত্র তেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়। চার সন্তানের মা হয়েছেন। স্বামীর চায়ের দোকানের আয়ে শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের ভরণপোষণ ছিল কষ্টসাধ্য। অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। এখন গরু, ছাগল ও মুরগি পালন করে হয়ে উঠেছেন সফল খামারি। ফতুল্লার দেলপাড়ায় ভাড়া বাড়ির এক অংশে বসবাস করেন।  অন্য অংশে গড়ে তুলেছেন খামার। শুরুর গল্প প্রসঙ্গে ফরিদা বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের এক ভাই আমারে কইল, আপনে গরু পালেন, পালতে পারলে লাভ আছে। তাকে চিনতাম না। অপরিচিত মানুষকে কেমনে টাকা দেই। আমার জামাইর মত ছিল না। বড় মেয়ে ভরসা দিল। পরে ৪০ হাজার টাকা কিস্তিতে ঋণ নিয়া সিরাজগঞ্জের ভাইকে দেই। খোকন ভাই  দুইটা বাছুর নিয়ে আসেন। দেড় মাস পালার পর বাছুরগুলা বিক্রি করে ৩২ হাজার টাকা লাভ হয়। এটা দেখে মাইয়ার বাপেও কয়, ‘গরুতে লাভ ভালোই হয়। সারা বছর কামাইয়াও এত টাকা একসঙ্গে জমাইতে পারি না আমরা।

এবার ৩২ হাজার টাকার সঙ্গে আর কিছু টাকা ঋণ নিয়া আমার জামাই নিজেই যায় সিরাজগঞ্জ। তারে বললাম গরুর লগে আমার জন্য ২টা ছাগলও আইনো। সেখান থেকে ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে একটা বাছুরসহ দুধের গাভি আনে। আর ৯ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি ছোট ছাগলও আনে। এগুলো থেকে বাচ্চা হয়। এলাকার খামার থেকে ৫টা ছাগল কিনি ১৭ হাজার টাকায়। ছাগল একেবারে ৩টা করেও বাচ্চা দেয়। এক বছরের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে আমার ৮০টা ছাগল হয়। ছাগল প্রতিটা সাইজ অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করি। একজন জানালো, ভেড়া পালতে তেমন খরচ নাই, অসুখও কম হয়। সে সময় গরু বেচছিলাম একটা। সেই টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় রূপগঞ্জের গাউছিয়া থেকে ১৪টি ভেড়া কিনি। এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার ভেড়া বেচছি। এখন আমার খামারে ৪৫টি ভেড়া আছে।’

ফরিদা আরও জানান, ‘আমি কোনো জায়গা ফালায় রাখি না। এখন আমার খামারে বাচ্চাসহ ৫০টির মতো মুরগি আছে। চিনা হাঁস আছে ৬টি। কয়েক দিন আগেই ৪৫টি হাঁস বেচছি। আবার ডিম দিয়া বসাইছি। এগুলার জন্যই টাকার মুখ দেখছি। ছাগল, ভেড়া, গরুর দুধ কোথাও গিয়া বেচন লাগে না। সবাই আমার খামার চেনে। খামার থিকাই সব বেচা হইয়া যায়।’

ফরিদা আরও জানান, ‘২০১৯ সালে গরু পালন দিয়া শুরু করি। ৬ বছর ধইরা এগুলারে আমি পালি। অনেক কষ্ট করছি শুরুতে। আমার ছোট বাচ্চা নিয়া ঘাসও কাটছি। রাতে এগুলোর যেন কোনো সমস্যা না হয় এ জন্য এনেই ঘুমাই। ছয় শতাংশের অর্ধেকটা বাড়ি, বাকিটা খামার। ভাড়াসহ প্রতি মাসে খামারে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়া আমার এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকে। দুইটা সিএনজি কিনছি। আমি শূন্য হাতে শুরু করছিলাম।’ ফরিদা বেগমের ইচ্ছা ১০ কাঠা জায়গা কিনে বড় খামার দেওয়ার।  জমি নাই , খামার বড় করতে পারেন না। ব্যাংক থেকে বড় ঋণ পেতে জায়গা দরকার।’ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মান্নান মিয়া বলেন, নারী খামারিদের সর্বোচ্চ সহায়তা করা হয়। খামারি ফরিদা বেগম  অন্য খামারিদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত