বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

থমকেই আছে শান্তিচুক্তি

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ০৫:০৬ এএম

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি আলোচনা নিয়ে গত মে মাসের মাঝামাঝি তিন বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি বৈঠক হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেনের। গত সোমবার দুই পক্ষ দ্বিতীয়বারের মতো আলোচনায় বসলেও, সেখান থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে ইস্তাম্বুলে এক ঘণ্টারও কম সময়ের এই বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন উভয় দেশই ৬ হাজার করে সেনার মরদেহ বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি আহত অবস্থায় বন্দি থাকা ১ হাজারের বেশি সেনা হস্তান্তরের বিষয়েও সম্মত হয়েছে দুই দেশ।

তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিচুক্তিতে অগ্রগতি না হলেও সমঝোতায় পৌঁছেছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ। তিনি বলেন, আমরা ‘অল-ফর-অল’ নীতির আওতায় উভয় পক্ষের ৬ হাজার করে মোট ১২ হাজার সেনার মরদেহ বিনিময়ে সমঝোতা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত ও অসুস্থ অবস্থায় বন্দি সেনাদের মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছি। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী সব সেনাকেও মুক্তি দেওয়া হবে।

ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী এবং বর্তমানে পুতিনের সহকারী ভøাদিমির মেডিনস্কি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পরিসরে যুদ্ধবন্দি ও মরদেহ বিনিময় সমঝোতায় পৌঁছেছি।

মেডিনস্কি আরও বলেন, স্বজনরা যেন মরদেহ এবং আহত ও অসুস্থ সেনাদের নিতে আসতে পারেন, সেজন্য আমরা দুই অথবা তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছি এবং কিয়েভ তাতে সম্মতি দিয়েছে। আমাদের সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে, খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। এ ছাড়া জুনের শেষ নাগাদ আরও আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে জেলেনস্কি ও পুতিনের সরাসরি বৈঠকেই অনেক বিষয়ের সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বিজয় চায় রাশিয়া : রাশিয়ার জন্য দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বিজয় নিশ্চিত করাই ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার মূল উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। মঙ্গলবার টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক পোস্টে রাশিয়ার বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের উপ-চেয়ারম্যান মেদভেদেভ এমন মন্তব্য করেছেন। টেলিগ্রাম পোস্টে দেশটির জ্যেষ্ঠ এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, ইস্তাম্বুল আলোচনা কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর শর্তে আপসমূলক শান্তিচুক্তির জন্য নয়। বরং আমাদের দ্রুত বিজয় ও নব্য নাৎসি শাসনের সম্পূর্ণ ধ্বংস নিশ্চিত করাই এই আলোচনার লক্ষ্য। তিনি বলেন, রাশিয়া গতকাল যে স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে সেটিই তার প্রমাণ।

সোমবার ইস্তাম্বুলে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিয়েভের আলোচনায় ইউক্রেনের কাছে রাশিয়ার উত্থাপিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন মেদভেদেভ। রাশিয়ার দাবিগুলোর মধ্যে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল হস্তান্তর, ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করা এবং নতুন সংসদীয় ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। তবে ইউক্রেন ও তার মিত্ররা যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও এই বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। মেদভেদেভ বলেন, সম্প্রতি রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের হামলার জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে মস্কো। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই হামলার প্রতিশোধ অনিবার্য। আমাদের সেনাবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যেতে থাকবে। যা ধ্বংস করার প্রয়োজন তা ধ্বংস করা হবে। আর যাদের সরিয়ে দেওয়ার দরকার তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে।

আলোচনায় বসতে আগ্রহী ট্রাম্প : চলতি মাসের শেষদিকে ইস্তাম্বুল বা আঙ্কারায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের মধ্যে তৃতীয় দফার বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিত বলেছেন, তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি চান ট্রাম্প। প্রয়োজনে তিনি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে আগ্রহী। তবে তিনি চান, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশের নেতারা একসঙ্গে আলোচনার টেবিলে আসুক। পুতিন এখন পর্যন্ত এমন বৈঠকে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন। তবে জেলেনস্কি বলছেন, এমন বৈঠকে বসতে তিনি রাজি আছেন। সংকট নিরসনের উপায় খুঁজতে শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনাকে একমাত্র কার্যকর উপায় বলে মনে করেন জেলেনস্কি। ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব মেনে নিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে মস্কো বলেছে, তারা যুদ্ধে স্বল্পমেয়াদি বিরতি নয়, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চায়। অন্যদিকে কিয়েভ অভিযোগ করছে, পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত