ঈদ অর্থ খুশি আর আজহা অর্থ কোরবানি করা। ঈদ মানেই খুশির দিন। আর মাত্র এক দিন পরই শনিবার ঈদুল আজহা, কোরবানির ঈদ। এর আগে আমরা পার করেছি ঈদুল ফিতর। এই আনন্দ দিনের বিশেষত্ব দুটি ১. জামাতে নামাজ আদায় এবং ২. পশু কোরবানি। ঈদের নামাজ শেষে ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে বুক মিলিয়ে সারা বছর জমে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ-গ্লানি মুছে ফেলার সুযোগ পায়। এভাবেই শান্তি-শৃঙ্খলা বৃদ্ধি, সৌহার্দ্য ও পরস্পর সহানুভূতিশীল মানসিকতার সৃষ্টি হয়। সামাজিক অনেক সমস্যা এর মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়। কোরবানি একজন ব্যক্তির পশুত্ব দূর করে। সঙ্গে সঙ্গে পশুর সব পাশবিক আচরণ যেমন শেষ হয়ে যায়, তেমনি মানুষের মধ্যেও রাগ-ক্রোধ মৃত্যুর মাধ্যমে বিলীন হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় তার পশুত্বও। কিন্তু যে বাজার থেকে মানুষ পশু কিনবেন, সেখানে যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধার কমতি না থাকে।
ঈদের সময় যাত্রীর গন্তব্য থাকে একমুখী। ফলে ফিরতি ট্রিপে মালিকদের বাস চালাতে লোকসান হয়। তাই ঈদে যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে চান বাসের চালক-হেলাপাররা। শুধু কি বাসে? একই চিত্র অন্যান্য পরিবহনে। ট্রেনের টিকিট নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যা চলছে, এবার কি একটু কমেছে? বাস্তবতা বলে, তেমন পরিবর্তন হয়নি। আবার নদীপথেও রয়েছে বিড়ম্বনা। এর মানে বাস, ট্রেন, লঞ্চ সর্বত্রই চলছে পরিবহন-নৈরাজ্য। টিকিট বাণিজ্য ঈদের আগে যেন বেশ জমে ওঠে। কর্তৃপক্ষ সবকিছুই দেখে, জানে কিন্তু কিছুই করে না বা করতে পারে না। এর নেপথ্যে কী এমন কারণ রয়েছে, আমাদের জানা নেই।
কোরবানির পশুর রক্ত, গোবর, উচ্ছিষ্ট অংশ এবং চামড়ার অবশিষ্টাংশ সবই পরিবেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অপরিকল্পিতভাবে এসব বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে দিলে পচে যাওয়া বর্জ্য থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা জনজীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। বর্জ্যে মশা, মাছি ও পোকামাকড় জন্মানোর ফলে বিভিন্ন রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এই বর্জ্য মাটি ও পানির উৎসকে দূষিত করে, যা দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আবার কোরবানির চামড়া নিয়ে চলছে আরেক নৈরাজ্য। যেখানে কোরবানিসংশ্লিষ্ট সবকিছুর সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। বিশেষ করে মজুদদাররা লবণের দাম বাড়িয়ে দেন। যেখানে পৃথিবীার অসংখ্য দেশে ঈদের সময় পণ্যমূল্য কমে আর আমাদের দেশে বাড়ে। এক অদ্ভুত নৈরাজ্যে বন্দি জনগণ। মানুষের লোভ কী ভয়ানক পর্যায়ে চলে গেছে, ঈদ তা বারবার প্রমাণ করে।
অন্যদিকে, এই দিন উপলক্ষ করে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। যারা এহেন কাজ নেই যা করে না। চোর, বাটপার, নকল টাকা তৈরি চক্র, মলম পার্টি, গরুর হাটকেন্দ্রিক প্রতারক এবং ছিনতাইকারীদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দ ম্লান হতে সময় লাগবে না। সমাজের এমন ক্ষত যদিও নিমিষেই দূর করা সম্ভব নয়, তবু সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে। কোনোভাবেই যেন তারা ক্ষতির মুখোমুখি না হন। সহজ-সরল কোটি মানুষের ভিড়ে অমানুষগুলো সক্রিয় হবে। তারা মানুষকে নিঃস্ব, বিপদে ফেলতে চাইবে। তা থেকে কর্তৃপক্ষকে সচেতন থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। অপরাধীকে দিতে হবে কঠিন শাস্তি। আমাদের অর্থনৈতিক বাস্তবতা যেমনই থাক, সামাজিক বাস্তবতা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। যদিও এটি কঠিন কাজ, তবু মানুষ যেন বলতে না পারেন সরকারের উদাসীনতার কারণে আমাদের এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
একটু ধৈর্য, সহিষ্ণুতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে ঈদের মাহাত্ম্যকে ভেবে দেখলে সমাজে কোনো বৈষম্য, অরাজকতা এবং নৃশংসতা থাকার কথা না। আমরা যেন ঈদের দিনে শপথ নিই, নিজেকে ষড়রিপু থেকে বিরত রাখার। সবাই যেন আনন্দ ও সমতার ভিত্তিতে কোরবানির ঈদ পালন করি। সমাজ থেকে মুছে যাক সমস্ত কলুষতা, পারস্পরিক ঘৃণা এবং আমরা যেন আমাদের হই। ঈদ মোবারক।