ঈদুল আজহাকে বলা হয় কোরবানির ঈদ। এ ঈদে সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির বিধান পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের শরিয়তেও ছিল। যদিও পদ্ধতিগত ভিন্নতা ছিল। আমাদের শরিয়তে কোরবানি হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর মহান আত্মোৎসর্গের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবর্তিত। এ ত্যাগের স্মরণে কোরবানি মুসলমানের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক অপার সুযোগ। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হলে মহান রব জান্নাত থেকে একটি দুম্বা পাঠিয়ে সেই আত্মত্যাগের পরীক্ষায় পূর্ণতা দেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত এই কোরবানিকে স্মরণীয় আমল হিসেবে অব্যাহত রাখেন। আল্লাহতায়ালা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামাজ আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার ২) রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার উম্মতকে কোরবানির পশুর গোশত খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা এই উম্মতের বিশেষ মর্যাদা। কোরবানির মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির দিনে কোরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো আমল নেই। কেয়ামতের দিন কোরবানির পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে। আর পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। সুতরাং আনন্দচিত্তে কোরবানি করো।’ (তিরমিজি) কোরবানি বছরে একবার করা হয়। আর কোরবানি সংক্রান্ত এমন কিছু মাসয়ালা থাকে, যে সম্পর্কে সবার অবগতি থাকে না। তাই কোরবানির প্রয়োজনীয় মাসয়ালা উল্লেখ করা হলো।
নিয়ত : কোরবানিদাতার জন্য সর্বাগ্রে আবশ্যক হচ্ছে, নিয়ত পরিশুদ্ধ করা তথা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে এবং হুকুম পালনার্থে কোরবানি করা। নিয়ত ছাড়া কোনো আমলের সওয়াব পাওয়া যায় না। তাই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, আমরা যেন একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কোরবানি করি।
যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, স্থায়ী নিবাসে অবস্থানকারী প্রত্যেক ওই মুসলমান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব, যিনি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং ঋণ পরিশোধের পর সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা কিংবা সমমূল্যমান সম্পদের অধিকারী হওয়া। উল্লেখ্য, নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি বিশাল সম্পদশালী হলেও তার ওপর একটি পশু কোরবানি করাই আবশ্যক হয়। তবে একাধিক পশু কোরবানি করতেও কোনো অসুবিধা নেই, বরং সহিহ-শুদ্ধ নিয়তে তা অনেক উত্তম। কেউ কোরবানির মান্নত করলে তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। মান্নতকারী ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে তাকে দুটি পশু কোরবানি করতে হবে। একটি শরিয়ত কর্র্তৃক ওয়াজিব হিসেবে, অপরটি মান্নতের জন্য। অপ্রাপ্তবয়স্ক, পাগল বা মুসাফির ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
কোরবানির দিন : জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ হচ্ছে কোরবানির দিন। সর্বোত্তম ১০ তারিখ, তারপর যথাক্রমে ১১ ও ১২ তারিখ। কেউ এই তিন দিনের যে কোনো দিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে তার জন্য কোরবানি করা আবশ্যক।
কোরবানির পশু : কোরবানির জন্য ৬টি পশু নির্দিষ্ট। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এগুলো ছাড়া অন্যান্য পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া যাবে না। ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১ বছর, গরু ও মহিষের জন্য ২ বছর এবং উটের জন্য ৫ বছর বয়স হওয়া আবশ্যক। অবশ্য ভেড়া যদি মোটাতাজা হয়, যা দেখতে ১ বছরের মনে হয়, তবে সেটি দিয়েও কোরবানি জায়েজ হবে।
উপরোল্লিখিত কোনো পশুর কান বা দৃষ্টিশক্তি এক-তৃতীয়াংশের কম নষ্ট বা কাটা পড়লে সেটি কোরবানি দেওয়া জায়েজ। এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি হলে জায়েজ নয়। যে পশুর লেজ অর্ধেকের বেশি আছে, সেটি কোরবানি করতে কোনো অসুবিধা নেই। এর বিপরীত হলে জায়েজ নয়। যে পশুর শিং মোটেই ওঠেনি সেটি কোরবানি দেওয়া জায়েজ। যদি শিং গোড়ায় ভেঙে যায় এবং এর ক্ষতি মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে, তবে সেটি দিয়ে কোরবানি আদায় হবে না। যে পশুর দাঁত মোটেই ওঠেনি বা অর্ধেক পড়ে গেছে সেটি কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশুর জন্মগতভাবে কান নেই সেটি কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশুর জিহ্বা এ পরিমাণ কাটা যে, ঘাস-পাতা খেতে পারে না, তা কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশু তিন পা দিয়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারে কিন্তু ওই পা দিয়ে চলতে পারে না, সেটি কোরবানি দেওয়া যাবে না। যে পশুর স্তন কাটা বা জখম হওয়ার কারণে বাচ্চাকে দুধ পান করাতে পারে না, সেটি দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়। জেনেশুনে চুরিকৃত পশু ক্রয় করা এবং তা কোরবানি করা জায়েজ নয়। হিজড়া পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়। বন্ধ্যা পশু কোরবানি করা জায়েজ। গর্ভবতী পশু কোরবানি করা মাকরুহ। ত্রুটিহীন পশু ক্রয় করার পর সেটিতে যদি এমন কোনো ত্রুটি জন্ম নেয়, যা কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক, তবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তির জন্য এরূপ পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়, দরিদ্র ব্যক্তির জন্য বৈধ।
শেয়ারে কোরবানি : গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ ৭ জন শেয়ারে বা শরিক হয়ে কোরবানি দেওয়া যায়। অংশীদাররা সম্পূর্ণ পশু অংশ অনুযায়ী সঠিকভাবে ওজন করে করে ভাগ করে নেবেন। কোনোভাবেই কমবেশি করা যাবে না। নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি পশু ক্রয় করার পর অন্যকে শরিক করতে পারবেন। কোরবানি ওয়াজিব নয়, এমন ব্যক্তি পশু ক্রয়কালে বা পূর্বে অন্যকে শরিক করতে পারবেন বা শরিক করার ইচ্ছা নিয়ে পশু ক্রয় করে থাকলে পরবর্তী সময় শরিক করতে পারবেন। অন্যথায় পারবেন না। কোরবানির পশু জবাই করার পর সেটিতে শরিক করা বা শরিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা শরিক হয়ে কোরবানি করবেন তাদের প্রত্যেকের টাকা বা অংশীদারত্ব শতভাগ হালাল ভিত্তিতে হতে হবে। একজনের অংশীদারত্ব (মূল্য) হারাম হলে কারও কোরবানি শুদ্ধ হবে না। অনুরূপভাবে সবার নিয়ত বিশুদ্ধ তথা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে। একজনের নিয়তে ভিন্নতা (লোক দেখানো, অহংকার, সামাজিকতা ইত্যাদি) থাকলে সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। সমাজে একটি মারাত্মক ভুল কথা প্রচলিত রয়েছে যে, ৭ নামে কোরবানি। যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করা হয় তাদের নামগুলো পড়া হয় এবং এ কথাটি বলা হয়। মূলত কথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য, ৭ জনের পক্ষ থেকে কোরবানি। কিন্তু কথাটি শুনতে মনে হয় ৭ নামে। যা অনাকাক্সিক্ষত এবং শ্রুতিকটু। তাই এ ভুল থেকে আমাদের অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। বলতে হবে অমুক অমুকের পক্ষ থেকে বা ৭ জনের পক্ষ থেকে একমাত্র আল্লাহর নামে।
অপরের পক্ষ থেকে কোরবানি : কারও ওপর কোরবানি ওয়াজিব এমন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ কোরবানি করলে তা আদায় হবে না। কারও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবকের জন্য কোরবানি করা মুস্তাহাব। সন্তান বা অভিভাবকের ওপর আবশ্যক নয়। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া এবং কোরবানিকৃত পশুর গোশত খাওয়া জায়েজ। কিন্তু মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে গেলে কোরবানিকৃত পশুর সম্পূর্ণ গোশত বণ্টন করে দেওয়া ওয়াজিব। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবার-পরিজন, মৃত পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্যদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া মুস্তাহাব।
পশুর যত্ন : কোরবানির পশুকে যত্ন সহকারে রাখা এবং কোরবানির পূর্বে ভালোভাবে পানাহার করানো মুস্তাহাব। কোরবানির পশু থেকে কোনো প্রকার ফায়দা গ্রহণ করা মাকরুহ। এমনকি দুধ দোহনও। পশু নাপাক খাদ্য খায় বলে জানা থাকলে কিছুদিন আবদ্ধ রেখে কোরবানি করতে হবে। অন্যথায় জায়েজ হবে না। এ ক্ষেত্রে উট ৪০ দিন, গরু-মহিষ ২০ দিন এবং ছাগল-ভেড়া ১০ দিন বেঁধে রাখতে হবে।
কোরবানির সঙ্গে আকিকা : কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে যেহেতু সর্বোচ্চ সাতটি অংশ রয়েছে, তাই এক বা একাধিক অংশ দিয়ে আকিকা করতে কোনো অসুবিধা নেই।
পশু হারিয়ে গেলে : নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি কোরবানির জন্য পশু ক্রয় বা নির্দিষ্ট করার পর সেটি যদি হারিয়ে যায়, তবে আরেকটি পশু কোরবানি করতে হবে। পরে যদি আবার হারানোটা পাওয়া যায় তবে তা কোরবানি করা উত্তম, আবশ্যক নয়। দরিদ্র ব্যক্তি পশু ক্রয় বা নির্দিষ্ট করার পর সেটি যদি হারিয়ে যায়, তবে আরেকটি কোরবানি করা আবশ্যক নয়।
কোরবানি না দিলে : কোরবানি ওয়াজিব এমন ব্যক্তি পশু ক্রয় করার পর কোনো কারণে কোরবানি করতে না পারলে ক্রয়কৃত পশু যে কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে সদকা করে দিতে হবে। কোরবানি ওয়াজিব এমন ব্যক্তি কোরবানি না করে থাকলে তার জন্য একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।
কোরবানির পশু জবাই : জবাইকারী এবং জবাই কাজে অংশগ্রহণকারী সবাই ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পশু জবাই করবেন। অমুসলিম ব্যক্তি জবাই করলে কোরবানি আদায় হবে না এবং গোশত খাওয়া জায়েজ হবে না। যে স্থানে জবাই করা হবে, সেখানে পশুকে কেবলার দিকে মুখ করে সহজভাবে শোয়ানো এবং তাড়াতাড়ি জবাই করা মুস্তাহাব। জবাইকারী কেবলার দিকে চেহারা করে ধারালো চাকু দিয়ে জবাই করা মুস্তাহাব।
পশু কোরবানি করার পর জীবিত বাচ্চা পাওয়া গেলে কোরবানির দিনসমূহের মধ্যে তা কোরবানি করে দিতে হবে। বাচ্চার গোশত খাওয়া জায়েজ। এক পশুর সামনে আরেক পশু জবাই করা মাকরুহ। ভোঁতা চাকু দিয়ে জবাই করা এবং জবাই করার পর অঙ্গ-প্রতঙ্গের নাড়াচাড়া পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আগে চামড়া ছাড়ানো মাকরুহ।
যিনি কোরবানিদাতার জন্য কোরবানির পশু জবাই করা উত্তম। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই কোরবানির পশু জবাই করতেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) এক ঈদে ধূসর রঙের শিংওয়ালা দুটি দুম্বা কোরবানি করলেন। তিনি সেগুলো নিজ হাতে জবাই করলেন এবং জবাইকালে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বললেন। (সহিহ বুখারি)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুল (সা.) নিজ হাতে কোরবানি করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন এবং সাহাবিরা তার এ আমল অনুসরণ করতেন। তাই কোরবানির পশু নিজে জবাই করাই উত্তম। তবে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। সেক্ষেত্রে জবাইস্থলে কোরবানিদাতা উপস্থিত থাকা ভালো। এতে তার সওয়াব লাভ হবে। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে ফাতেমা, ওঠো, তোমার কোরবানির পশুর কাছে যাও। কেননা তার রক্তের প্রথম ফোঁটা প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার কৃত সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর বলো, ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ)
মুস্তাহাব আমল : কোরবানিদাতা জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত চুল, গোঁফ, নখ ইত্যাদি না কেটে কোরবানি করার পর কাটা মুস্তাহাব। চল্লিশ দিন বা বেশি হলে এরূপ করবেন না। ঈদের দিন কিছু না খেয়ে কোরবানির গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করবেন। কোরবানিদাতা নিজ হাতে জবাই করবেন। সম্ভব না হলে জবাইকালে সামনে থাকবেন। পশু জবাই করা, গোশত কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি কোনো কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির পশুর গোশত, হাড্ডি, চামড়া তথা পশুর কোনো কিছু দেওয়া জায়েজ নয়। টাকা বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে পারিশ্রমিক দেবেন।
গোশত বণ্টন : কোরবানির গোশত বণ্টনের মুস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে, আহারযোগ্য সবকিছু তিনভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখবেন, একভাগ পাড়া-পড়শি ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন করবেন এবং একভাগ দরিদ্রদের দেবেন। কেউ চাইলে সবটুকুই নিজের জন্য রেখে দিতে পারেন। তবে এটি উত্তম নয়।
আমাদের দেশের অনেক এলাকায় সমাজের সবাই মিলে এক সঙ্গে কোরবানি করার নিয়ম চালু আছে। ওইসব এলাকায় যারা কোরবানি করেন, তাদের প্রত্যেককেই বাধ্যতামূলকভাবে কোরবানির একটি অংশ ‘সমাজের ভাগ’ হিসেবে দিতে হয় এবং তা দরিদ্র ও অভাবীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। কোরবানির মাংস অভাবীদের দান করা নিঃসন্দেহে ঈদুল আজহার একটি মুস্তাহাব আমল ও অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা কোরবানিদাতার ঐচ্ছিক ও ব্যক্তিগত আমল। কোরবানিদাতা তার ইচ্ছা অনুযায়ী তার কোরবানির মাংস বণ্টন করবেন, নিজে রাখবেন, আত্মীয়দের দেবেন বা দরিদ্রদের দান করবেন। এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কোনো ভাগ চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এটা জায়েজ নয়।
তাই সমাজের সব মানুষের কাছে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেওয়ার এসব আয়োজনে অংশগ্রহণ করা ঐচ্ছিক থাকা জরুরি এবং অংশগ্রহণকারীদের গরুর কোনো নির্ধারিত অংশ দেওয়ার নিয়ম না থাকাও জরুরি। কোরবানিদাতাদের দান করতে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে, তারা স্বেচ্ছায় যতটুকু দেবেন, ততটুকুই সমাজের পক্ষ থেকে দরিদ্রদের মধ্যে বিরতণ করা যেতে পারে।
চামড়ার হুকুম : কোরবানিদাতা ইচ্ছা করলে চামড়া নিজের কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন বা অন্য কাউকে দান করে দিতে পারবেন। চামড়া বিক্রি করে দিলে তাতে দরিদ্রদের অধিকার সাব্যস্ত হয়ে যায়। তাই বিক্রয় করা হলে মূল্য অবশ্যই এক বা একাধিক নিঃস্ব-অসহায়, দরিদ্রদের দিয়ে দিতে হবে। মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ইত্যাদি ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান, জনসেবামূলক কাজ, কোনো কিছুর পারিশ্রমিক বা ঋণ পরিশোধ কাজে ব্যবহার করা বা দেওয়া জায়েজ নয়। মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং (যেখানে হকদার রয়েছে), এতিমখানায় মূল্য বা চামড়া দেওয়া যাবে। পশুর শরীর থেকে সম্পূর্ণ চামড়া ছাড়ানোর পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়েজ নয়। কোরবানির পশু জবাই বা গোশত কাটার পারিশ্রমিক হিসেবেও চামড়া বা তার মূল্য দেওয়া জায়েজ নয়। মহান আল্লাহ আমাদের মাসয়ালা জেনে বুঝে যথাযথভাবে কোরবানি আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।