শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সঙ্গী হলো জয়ের আত্মবিশ্বাস

আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ০১:৪৫ এএম

চার বছর পর ফুটবল ফিরল ঘরে। জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় কুড়ি হাজার দর্শকের সামনে প্রত্যাবর্তনটা বাংলাদেশ রাঙালো জয়ের রঙে। ঘরের মাঠে হামজা চৌধুরী অভিষেক রাঙালেন ষষ্ঠ মিনিটে গোল করে। সেই এগিয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত হলো দ্বিতীয়ার্ধে সোহেল রানার অসাধারণ গোলে। ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করল হাভিয়ের কাবরেরার বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

এই ম্যাচটা ছিল দুই দলের জন্যই ১০ জুন এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের প্রস্তুতি মঞ্চ। হামজা, ফাহামিদুল ইসলামদের দেখতে এই ম্যাচেও ছিল গ্যালারিতে সমর্থকদের সরব উপস্থিতি। আনকোরা টিকিট চেকারদের কারণে ম্যাচ শুরুর অনেক পর পর্যন্ত প্রধান ফটকগুলোতে দেখা গেছে হাজারো দর্শকের ভিড়। পরে অবশ্য ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে সমর্থকদের। নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে তারা প্রবেশ করে স্টেডিয়াম চত্বরে। অনেক দর্শককেই দেখা গেছে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে।

সেই সমর্থকদের অবশ্য হতাশ করেননি হামজারা। প্রায় ৭ মাস পর দেশকে দিয়েছেন জয় উপহার। গত নভেম্বরে ঘরের মাঠে মালদ্বীপকে হারানোর পর অবশ্য আর একটি ম্যাচই খেলেছে বাংলাদেশ। সেটি গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ে। যে ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয়েছিল হামজার।

বুধবার অভিষেক হয়েছে ফাহামিদুল ইসলাম এবং আল আমীনের। ফাহামিদুল খেলেছেন শুরুর একাদশে। লেফট উইংয়ে কিছু ঝলকও দেখিয়েছেন। প্রায় ষাট মিনিট মাঠে থাকার পর তাকে তুলে নেন কোচ। ম্যাচ শেষে ১৯ বছরের ফাহামিদুল ছুটে আসেন দর্শক গ্যালারিতে বসা বাবা-মায়ের কাছে। জন্মদাতাদের জড়িয়ে ধরে অভিষেকটা স্মরণীয় করতে চেয়েছেন এই তরুণ।

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ খেলেছে আক্রমণাত্মক মেজাজে। ৪-২-৩-১ ফরম্যাটে সবার ফলস নাইন পজিশনে খেলেছেন সময়ের সেরা রাইট উইঙ্গার রাকিব হোসেন। তার পেছনেই ছিলেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, ফাহামিদুল ও শাহ কাজেম কিরমানি। সোহেল রানাকে নিয়ে রক্ষণকে সাহায্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হামজা। আর ব্যাক ফোরে পরীক্ষিত তপু বর্মণ ও তারিক কাজীর দুপাশে দুই ভাই সাদ উদ্দিন ও তাজ উদ্দিন। আর পোস্টের দায়িত্বে যথারীতি মিতুল মারমা।

ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে কাজেমের আড়াআড়ি ক্রসে জামাল ঠিকঠাক পা ছোঁয়াতে পারেননি। পরের মিনিটে কাজেমের কাটব্যাকে হামজার শট রুখ দেন ভুটানের এক ডিফেন্ডার। তবে ষষ্ঠ মিনিটে ঠিকই ভুটানের গোলের দরজা খুলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তারকা। জামালের কর্নারে অনেকটা লাফিয়ে হেড করে গোল করেন হামজা। দেশের জার্সিতে গোলের খাতাও খোলা হয়ে যায় তাতে।

ম্যাচের ৩০ মিনিটে বাম দিক দিয়ে দ্রুত আক্রমণে উঠেছিলেন রাকিব। তার পাস ধরে কাজেম বল বাড়িয়েছিলেন ফাহামিদুলকে। এই তরুণের জোরালো শট ফিরিয়ে দেন ভুটান কিপার জাংপো। ৬ মিনিট পর গোল পেতে পারত বাংলাদেশ। হামজার থ্রু পাস ধরে তাজ ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে ক্রস দেন। তাতে রাকিবের ফ্লিক ঠিকঠাক হয়নি। বল যায় জামালের পায়ে। ছোট বক্সের বাইরে থেকে অধিনায়কের শট ভুটান ডিফেন্ডার গাইয়েলতেসেনের রুখে দিয়ে দলকে বাঁচান।

প্রস্তুতি ম্যাচ বলেই কাবরেরা শিষ্যদের পরখ করে দেখার সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন। বিরতির পর এক সঙ্গে তিনটি পরিবর্তনে তিনি তুলে নেন হামজা, জামাল ও কাজেমকে। মোহাম্মদ ইব্রাহিম, শেখ মোরসালিন ও মোহাম্মদ হৃদয়কে গেইম টাইম দেন কোচ।

এ অর্ধেরও শুরুতে গোল পায় বাংলাদেশ। ৪৯ মিনিটে ডান দিক থেকে রাকিবের ক্রস ইয়েসি হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন সোহেলের পায়ে। বক্সের বেশ বাইরে থেকে বাম পায়ের দারুণ শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার।

৫৯ মিনিটে আরও দুটি পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। ফাহামিদুল ও রাকিবকে তুলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও আল আমিনকে নামান তিনি। পাঁচ পরিবর্তনে অবশ্য দলের খেলায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। আক্রমণাত্মক মেজাজেই খেলেছে বাংলাদেশ। বদলি হিসেবে অভিষেক হয় আল আমীনের।

ম্যাচের ৯০ মিনিটে ইব্রাহিমের জোরালো শট রুখে দিয়ে হারের ব্যবধান বাড়াতে দেননি ভুটান গোলকিপার গেলসেন জাংপো। আর যোগ করা সময়ে মিতুল মারমার কৃতিত্বে গোল হজম করেনি বাংলাদেশ। জেতসুন দরজির আড়াআড়ি পাসে জিগমে নামগায়াল শট নিয়েছিলেন। তবে মিতুলকে পরাস্ত করতে পারেননি। শুয়ে পড়ে তার শট রুখে দেন বাংলাদেশ কাস্টডিয়ান।

গত সেপ্টেম্বরে এই ভুটানের কাছেই ১-০ হারের লজ্জায় ডুবতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। থিম্পুতে সেই ম্যাচের পর কেটেছে ৮ মাস। এই সময়টায় দেশের ফুটবলে ঘটেছে বাঁকবদলের ঘটনা। প্রবাসীদের আগমনে বাংলাদেশ যে বদলে গেছে সেটা এ ম্যাচেও বোঝা গেছে অনেকটা। যা বড় অনুপ্রেরণা জোগাবে মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত