বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

১৫ দিন পর সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগ খুলল

আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ০৬:২৪ এএম

টানা ১৫ দিন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার পর রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতাল গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এ দিন বহির্বিভাগে সীমিতসংখ্যক রোগী সেবা পেয়েছে। তবে রোগী ভর্তি (ইনডোর) ও জরুরি বিভাগ এখনো বন্ধ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে আসা চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, প্রথম দিন হাসপাতালে এসেই তারা নিজেরা বৈঠক করেছেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে দেওয়ার জন্য হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। সেখানে তারা হাসপাতালের নিরাপত্তা সংকট ও সংকট উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আন্তরিক অনুরোধ জানিয়েছেন। এজন্য হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আট দফা দাবি দিয়েছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, তারা হাসপাতালে এসেছেন। তাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে। সেগুলো পূরণ করলে তারা নিয়মিত আসবেন। তারা এখনো নিরাপত্তা শঙ্কায় আছেন।

চিকিৎসক ও নার্সরা আরও জানিয়েছেন, হাসপাতালের চতুর্থতলা এখনো দখলে রেখেছেন জুলাই আহতরা। তাদের কয়েকজন চতুর্থতলার কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে ভেতরে অবস্থান করছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম মৃধাকে পাওয়া যায়নি। তাকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা, গত জুলাই মাসে সংঘটিত ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহত সব রোগীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও মানবিক বিবেচনায় উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ‘বর্তমানে আমাদের হাসপাতাল এক চরম নিরাপত্তা সংকট ও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন। চিকিৎসা প্রয়োজন শেষ হওয়া সত্ত্বেও কিছু রোগী প্রায় ১০ মাস যাবৎ অপ্রয়োজনে হাসপাতালে অবস্থান করছে। তারা হাসপাতালের শৃঙ্খলাভঙ্গ করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের গালাগাল, শারীরিক আক্রমণ, এমনকি হাসপাতাল পরিচালকের ওপর হামলা এবং আগুন লাগানোর হুমকিসহ নানা সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, তাদের (জুলাই আহত) দখলে থাকা সিটগুলো প্রকৃত দরিদ্র ও জরুরি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশনে তারা প্রভাব বিস্তার এবং ঘুষ-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

স্মারকলিপিতে জানানো হয়, জুলাই আহতরা হাসপাতাল পরিচালককে আটকে রাখে এবং গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিতে চেষ্টা করে। সর্বশেষ সশস্ত্র আক্রমণ করে অনেক ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গুরুতর আহত করে, হাসপাতালের অনেক স্থাপনার ক্ষতি করে। সংকট সমাধান এবং পরবর্তী চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড ৪ জুন হাসপাতালে আহত রোগীদের দেখতে আসে। ৫৫ জন আহতের মধ্যে মাত্র ৩০ জন মেডিকেল বোর্ডে উপস্থিত হন এবং তাদের কারোরই হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই বলে মেডিকেল বোর্ড মতামত দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু তারা হাসপাতাল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায় ও আবার চিকিৎসকদের অবরুদ্ধ করেন।

এসব পরিস্থিতির বর্ণনা করে হাসপাতালের সুষ্ঠু চিকিৎসার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মারকলিপিতে আট দফা দাবি উল্লেখ করেন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা।

দাবিগুলো হলো ১. আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের পূর্ণ পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২. যেসব রোগীর আর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের ছাড়পত্র প্রদান করে হাসপাতাল ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. তাদের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়/সিএমএইচ/ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ৪. অনাবশ্যক রোগী ভর্তি প্রতিরোধে একটি কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ৫. দুষ্কৃতকারীদের হামলায় আহত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ৬. হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭. আহতদের সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপযুক্ত স্বীকৃতি দিতে হবে। ৮. ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করতে হবে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একটি দিনের জন্য বন্ধ থাকবে এটি কোনোভাবেই কারও কাম্য নয়। আমরা বিশ্বাস করি, উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে গ্রহণ না করলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্মারকলিপিতে সংকট সমাধানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সুদৃষ্টি ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

এর আগে গত ২৮ মে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই আহতদের সঙ্গে হাসপাতালের সংঘর্ষ হয় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ ১৫ জন আহত হন। এরপর আতঙ্কে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের বেশিরভাগ দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যান। তাদের কেউ কেউ ভেতরে আটকা পড়লে সেনাসদস্যরা গিয়ে উদ্ধার করেন। এরপরই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম। কার্যত ওইদিন থেকে পুরো হাসপাতাল জুলাই আহতদের দখলে চলে যায়। এরপর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালে যাননি চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য কর্মীরা। পরে গতকাল সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগ খোলা হয়। কিন্তু এখনো বন্ধ রয়েছে জরুরি ও ইনডোর সেবা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত