বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে সাড়ে ৫ কোটি শিশু

আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ০৬:২৫ এএম

বৈশি^ক প্রচেষ্টায় শিশুশ্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও ২০২৪ সালে প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমদানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাদের ৫ কোটি ৪০ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত ছিল, যা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ও আন্তর্জাতিক খেলা দিবস উপলক্ষে ‘চাইল্ড লেবার : গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২৪, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনে অগ্রগতি হলেও প্রতিবেদনে কঠিন বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে এখনো লাখ লাখ শিশু শিক্ষা, খেলা এবং শুধু শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

প্রতিবেদনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শিশুশ্রম কমার চিত্র দেখা গেলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সে রকম নয়। ২০১৩ সালে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ; ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৭ শতাংশে (প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু)। কিন্তু একই সময়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শ্রমে যুক্ত থাকার সামগ্রিক হার ৮ দশমিক ৭ থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিকর কাজে যুক্ত শিশুশ্রমের হার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে, যা ২০১৩ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে।

এ পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, গত দুই দশকে বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বাড়ায় কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো (২০২৫ সাল) শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। শ্রমে যুক্ত অধিকাংশ শিশু কাজ করছে অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে তারা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ বাস্তবতা পরিবর্তনে বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উদ্যোগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য ও বাংলাদেশে আমাদের নিজেদের প্রাপ্ত তথ্য একই সঙ্গে উৎসাহ জোগায় এবং এ সংকট সমাধানে উদ্বুদ্ধ করে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা আমরা স্বীকার করি; তবে সামগ্রিক শিশুশ্রমের হার একই রকম থাকায় এটি স্পষ্ট যে, আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। সংহত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে পরিবারগুলোকে সহায়তাদানকে জোরদার করতে হবে, সব শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজসেবা, বিশেষ করে শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। শিশুদের স্থান স্কুল ও খেলার মাঠ, কর্মক্ষেত্র নয়। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি জরুরি।’

শিশুশ্রম শিশুর শিক্ষাকে ব্যাহত করে, তাদের অধিকারকে খর্ব করে এবং সম্ভাবনাকে সংকুচিত করে। এতে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। শিশুশ্রমের মূল কারণ দারিদ্র্য ও মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব, যার ফলে পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হয় এবং এ বঞ্চনা বংশ পরম্পরায় স্থায়ী হয়ে যায়।

বৈশি^ক তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাত এখনো শিশুশ্রমের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র; শিশুশ্রমের ৬১ শতাংশ ঘটে এ খাতে। এরপর রয়েছে সেবা খাত (২৭ শতাংশ), যেমন গৃহস্থালি কাজ বা বাজারে পণ্য বিক্রি। আর শিল্প খাতে রয়েছে ১৩ শতাংশ, যার মধ্যে খনি ও উৎপাদন শিল্প অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে আইএলও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) গুঞ্জন ডালাকোটি আইএলও কনভেনশন নম্বর ১৩৮ ও ১৮২ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। আইএলওর এ দুই কনভেনশনে বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি জাতীয় আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে শিশুশ্রম নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শিশুশ্রম নিরসনের অগ্রগতির স্থবিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি সামগ্রিক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের কথা তুলে ধরে বলেন, অর্থপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করতে হলে কমিউনিটি, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, এনজিও ও সংবাদমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

আইএলওর অব্যাহত সমর্থনদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, শিশুশ্রম থাকলে যথাযথ শ্রমের পরিবেশ থাকে না। প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ শিক্ষার সুযোগ-সংবলিত শৈশব নিশ্চিত করার জন্য সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত