সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সন্ধ্যা হলেই অস্ত্র নিয়ে নামে তারা

আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ০৬:৩২ এএম

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সন্ধ্যা নামলেই দেশীয় অস্ত্র হাতে রাস্তায় নেমে আসে এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। মারামারি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, দোকানে চাঁদাবাজি, বিকট শব্দে মোটরসাইকেল চালানোসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এতে এলাকায় চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ আর অভিভাবকরা রয়েছেন উদ্বেগে।

ঈদের তৃতীয় দিন সোমবার রাত ৮টার দিকে শেরপুর শহীদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পথচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে মিরাজ নামে এক তরুণ ছুরিকাহত অবস্থায় শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এরপর হাসপাতালেও দুই গ্রুপের সদস্যরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

একইভাবে ঈদের পরদিন রবিবার সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা ব্রিজে কয়েকজন বখাটে কিশোর মোটরসাইকেল রেখে আড্ডা দিচ্ছিল। এক পথচারী রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ানোর কথা বলতেই তার ওপর হামলা করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। এলাকাবাসী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত এক মাসে তুচ্ছ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে গ্যাংয়ের সদস্যরাও রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না।

কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম শুধু মারামারিতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা উপজেলার কলেজ রোড, বাসস্ট্যান্ড ফলপট্টি, ধুনটমোড়, শেরুয়া বটতলা বাজার, মির্জাপুর বাজার, জামাইল হাটসহ বিভিন্ন এলাকার দোকানে চাঁদাবাজি করছে। ধুনটমোড়ের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, গ্যাংয়ের সদস্যরা তার দোকানে এসে টাকা দাবি করে। একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, টাকা না দেওয়ায় এক সদস্য হেলমেট দিয়ে দোকানির মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করে।

আশপাশে গ্যাংয়ের অন্য সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যান্য ব্যবসায়ীও একই ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, সামান্য কথাকাটাকাটি বা ব্যক্তিগত বিরোধ হলেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দল বেঁধে অস্ত্র হাতে হামলায় নামে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষ আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করেন। এলাকাবাসী পুলিশের নিয়মিত টহল ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন।

ধুনটরোড এলাকার বাসিন্দা হারুন বলেন, ‘ইদানীং এলাকায় চুরি বেড়েছে, বিশেষ করে মোবাইল চুরি। দিনের বেলাতেও জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্কে প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, ‘রাতে আমরা স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছি না। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পুলিশ টহল না বাড়ালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’

শেরপুর সরকারি ডি.জে মডেল হাই স্কুল এলাকার বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যার পর ডি.জে হাই স্কুল মাঠ, হাসপাতাল রোড, কলেজ রোড, ধুনটরোডের তালতলা থেকে দহপাড়া পর্যন্ত কিশোর গ্যাং দল বেঁধে ঘোরাফেরা করে, যা এলাকাবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ।

এ বিষয়ে শেরপুর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। তবে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশ সবসময় কঠোর। উল্লিখিত এলাকাগুলোয় শিগগিরই টহল জোরদার করা হবে। ভুক্তভোগীদের বলব, এমন অপরাধ দেখলে তাৎক্ষণিক আমাদের জানান। নাম-পরিচয় গোপন রেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত