সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বাঁধ নির্মাণে ‘দখলদারের’ বাধা

আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ০৬:৩৩ এএম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরে অবৈধভাবে নদী দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে নদীশাসন ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এ কারণে বিড়ম্বনার মুখে পড়ছেন। শামুরবাড়ি এলাকায় ইউনাইটেড গ্রুপের পরিচালক ফরিদ খানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও, কাজ পুনরায় শুরু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ৫২৭ কোটি টাকার নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প লৌহজংয়ের শিমুলিয়া থেকে টঙ্গীবাড়ির দীঘিরপাড় পর্যন্ত চলমান।গাওদিয়া ইউনিয়নের শামুরবাড়ি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে। কিন্তু ইউনুস খান মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন নদীর তীরে অবৈধভাবে দ্বিতল পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, যা বাঁধ নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিনের নির্দেশে কাজ বন্ধ করা হলেও, পরে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হয়। গত ৫ মার্চ ইউএনও কাজ বন্ধ করেন। এরপর বাঁধের ব্লক বসানো শুরু হলেও আবার স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ১৭ মার্চ চিঠি দিয়ে নির্মাণাধীন স্থাপনা সাত দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু অভিযুক্ত পক্ষ তা মানেনি, বরং নতুন করে নির্মাণের প্রস্তুতি চালাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা বিলাস মুন্সী বলেন, ‘নদীতে স্থাপনার কারণে বাঁধের ব্লক বসানোর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।’ আরেক বাসিন্দা শাকিল বলেন, ‘অন্য নদীতে বাঁধের বাইরে ব্যক্তিগত স্থাপনা দেখিনি। কিন্তু শামুরবাড়িতে নদীর ভেতরে এমন স্থাপনা বিরল। এর কারণে বাঁধ নির্মাণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।’

অভিযুক্ত ফরিদ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ভাতিজা আশিফুর রহমান খান বলেন, ‘জমিটি আমাদের।

নদীতে ভাঙনের শিকার হলেও সরকার এটি অধিগ্রহণ করেনি। আমরা খাজনা দিচ্ছি, তাই নিজেদের জমিতে স্থাপনা তৈরি করছি।’  তিনি দাবি করেন, ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে কাজ চালুর অনুমতি পাওয়া গেছে।

তবে ইউএনও মো. নেছার উদ্দিন বলেন, ‘নতুন করে কাজের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ করা হয়েছে। জমির মালিকানা যাচাইয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্ত করছেন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শিমুলিয়া থেকে দীঘিরপাড় পর্যন্ত ১৩.৭২ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী ও সতর্কতামূলক বাঁধ নির্মাণ চলছে। এর মধ্যে ৯.১০০ কিলোমিটার স্থায়ী এবং ৪.৬২০ কিলোমিটার সতর্কতামূলক (ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ স্থাপন) কাজ।

প্রকল্পটি ২০২১ সালের অক্টোবরে শুরু হয়, মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে ৪৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা পরে বাড়িয়ে ৪৭০ কোটি এবং সর্বশেষ ৫২৭ কোটি টাকা করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়িয়ে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘নদী দখলের কারণে কাজে বিড়ম্বনা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ বন্ধ করলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি। নদীর সব সম্পত্তি সরকারের।

অভিযুক্ত পক্ষ জমির মালিকানা দাবি করলেও, এ বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাজে বাধা পেলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হবে। সমস্যা সমাধান প্রশাসনের দায়িত্ব।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত