সাত বছর ধরে গেটম্যান আছে, কিন্তু নেই গেট ব্যারিয়ার (প্রতিবন্ধক) ও তাদের থাকার ঘর। ডিউটি ঘর বলতে পাশের চায়ের স্টল আর গাছতলা। এভাবেই বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করে চলছেন বাগাতিপাড়ার দুই গেটম্যান। নাটোরের আব্দুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা রেলগেট এলাকায় একটি রেলক্রসিংয়ে তিনজন গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় সাত বছর আগে। কিন্তু নিয়োগ দেওয়ার সাত বছরেও নির্মাণ করা হয়নি গেট ও তাদের থাকার ঘর। চাকরিতে কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় একজন গেটম্যান বাধ্য হয়ে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন। গেট ও গেটম্যান না থাকার ফলে দায়িত্ব পালনে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়ছেন ওই রেলগেটে থাকা দুই গেটম্যান।
জানা গেছে, আব্দুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে বাগাতিপাড়া অংশে পাঁচটি রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মালঞ্চি রেলক্রসিংয়ে আগে থেকেই গেটম্যান, গেট ও তাদের থাকার ঘর ছিল। আর বাকি চারটিতে কোনো গেটম্যান ছিল না। ৯ বছর আগে ইয়াছিনপুর রেলগেট পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় নববধূসহ চারজন নিহতের ঘটনা ঘটে। এরপর ২০১৮ সালে স্বরূপপুর, ইয়াছিনপুর ও বড়পুকুরিয়া রেলগেটে গেটম্যান নিয়োগের পাশাপাশি গেট ও তাদের থাকার ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ঠেঙ্গামারা রেলগেটে তিনজন গেটম্যান আফসার উদ্দিন (৩২), রিয়াজুল ইসলাম (৩০) ও সাইফুল ইসলামকে (৩০) নিয়োগ দেওয়া হলেও গেট ও তাদের থাকার ঘর নির্মাণ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে দুই বছর আগে চাকরি ছেড়েছেন রিয়াজুল ইসলাম। আরও জানা গেছে, ওই রেলক্রসিংয়ে গেটের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেন আসার সময় রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহন থামাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গেটম্যানদের। এ ছাড়া শীত, রোদ, ঝড়-বৃষ্টি এবং রাতে ডিউটি পালন করতে গিয়েও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
গেটম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, সাত বছর ধরে ডিউটি করে আসছেন তিনি। এই গেট সম্পর্কে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখানে নানা ধরনের ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করতে হয়। শীতের সময় একরকম কষ্ট সহ্য করতে হয়। আর এই গরমে প্রচ- দাবদাহে বসার জায়গাটুকু নেই। হয় পাশের চায়ের স্টল আর না হয় গাছতলায় বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া ঝড়-বৃষ্টির দিনে কষ্ট তো আছেই। এভাবেই সাত বছর ধরে ডিউটি পালন করে আসছেন তিনি। নিয়োগের পর থেকে সাত বছরেও হয়নি চাকরি জাতীয়করণ। তখন থেকে যে বেতনে চাকরিতে ঢুকেছেন, এখনো সেই বেতনেই কর্মরত আছেন। বেতন ছাড়া কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা না থাকায় একজন চাকরিও ছেড়েছেন। বাজারের পাশে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা দুজন। একজন চলে যাওয়ায় তাদের আরও অতিরিক্ত বেশি সময় ডিউটি করতে হচ্ছে। তাই এখানে দ্রুত গেট ও ডিউটি ঘর নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রেলক্রসিংয়ের পাশে একটি বাজার রয়েছে। বাজারের কাছেই একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিদিন এই রেলক্রসিং দিয়ে পারাপার হতে হয় বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের। তা ছাড়া অন্যান্য যানবাহন ও এলাকাবাসীর ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয়। এলাকাবাসীর সহায়তায় গেটম্যানদের বসার জন্য একটি বাঁশের মাচা তৈরি করা থাকলেও তা ভেঙে গেছে অনেক দিন আগে। এখন ডিউটি ঘর বলতে পাশের চায়ের স্টল আর গাছতলা।
ঠেঙ্গামারা বাজারের চা-বিক্রেতা কামরুল ইসলাম (৪৫) জানান, সাত বছর আগে এখানে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে গেট ও গেটম্যানদের জন্য কোনো ডিউটি ঘর স্থাপন করা হয়নি। গেটম্যানরা ঝড়-বৃষ্টিতে কষ্ট করে ডিউটি করেন। তাদের তো জীবন রয়েছে, রয়েছে খাওয়া-দাওয়া, গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ। এগুলো করতে গিয়ে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় অনেক সময় পথচারীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়তে হয়। এলাকাবাসী ও গেটম্যানদের সমস্যার কথা চিন্তা করেও এখানে গেট ও ডিউটি ঘর নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুমের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।