বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

যমুনার ভাঙনের কবলে ৫০০ স্থাপনা

আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ০৩:০২ এএম

টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাঁচ শতাধিক স্থাপনা। এসবের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা, ডেকিয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ গয়লা হোসেন নুরানি মাদ্রাসা, দক্ষিণ গয়লা হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ গোলাশন কবরস্থান এবং আব্দুল মান্নান সেতু।

জানা যায়, ৫৩ বছর আগে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেন মৃত খায়রুন নেছা। সেই সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি যমুনা নদীতে ১৪ বার ভাঙনের কবলে পড়ে। বর্তমানে এটি ওমরপুর এলাকায় অবস্থিত। সেখানেও ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অন্যদিকে একই এলাকায় হাছেন হাজি নামের এক ব্যক্তি ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানটিও ১৫-১৬ বার নদীভাঙনের কবলে পড়ে। বর্তমানে এটি ওমরপুরে অবস্থিত। সেখানেও রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকি।

স্থানীয় আমিরুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাকুয়া ইউনিয়নে ঝাউগাড়া থেকে ওমরপুর দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যমুনা নদীর ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘যমুনা নদীতে কয়েকবার ভাঙনের পর ভিটেমাটি হারিয়ে ওমরপুরে বাড়িঘর করেছি। সেই বাড়িঘরও আজ ভাঙনের ঝুঁকিতে।’

স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার বাবাসহ আমি ১৩ বার এই যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি। একটা পরিবার ১৩ বার যদি ভাঙনের শিকার হয় তাহলে তার আর কী থাকে?’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘বাড়ি সরানোর মতো আর কোনো উপায় নেই। মানুষ এখন লাভের ওপর জায়গা দিতে চায় না।’

ওমরপুর গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, পানাকুড়া, কেশবমাইজাল, চরপৌলি, উত্তর চরপৌলি, নয়াপাড়া, দশাখা, তেঁতুলিয়া, মাকরখোল, রশিদপুর, চগ্গপাল, বারবালাসহ প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রাম যমুনা নদীভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৮৮ সালের পর থেকে আমি দেখেছি এই যমুনার ভয়াবহতা। আমার ভিটেবাড়ি সাতবার সরিয়েছি। তাই সরকারের কাছে আবেদন, দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার জন্য।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল গয়লা হোসেন এলাকায়। সেখান থেকে ভাঙতে ভাঙতে ওমরপুরে এসে ঠেকেছে। এখন পরের জমিতে বাড়িঘর করে রয়েছি। এই বাড়ি ভাঙলে জায়গা পাওয়া কষ্ট হবে। বর্তমানে জায়গার মালিকরা বাড়িঘর করতে দেয় না। একসময়ে আমার বাপ-দাদার অনেক জমি ছিল। আজকে আমরা জমিহারা। আমাদের বাপ-দাদারা জমির রাজত্ব করতেন। এই যমুনা আমাদের সেই রাজত্ব থেকে ফকির বানিয়ে দিয়েছে। আজকে অন্যের কাছে জায়গার জন্য ধরনা ধরতে হয়।’

দক্ষিণ গয়লা হোসেনের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন বলেন, ‘যমুনা নদীর ভাঙনে আমার নানার বংশধররা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। আমার নানার অনেক জমি ছিল। সব জমি ভেঙে গেছে। মায়ের কাছে শোনা, নানার বাড়ি ১৪ বার ভেঙেছে। শেষে আমরা নানার বাড়ি থেকে চলে গিয়ে টাঙ্গাইল শহরে বাড়ি করেছি।’

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘যমুনার ভাঙন আতঙ্কে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া অনেক আবাদি জমি বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যদি জিওব্যাগ ফেলা যায়, তাহলে ভাঙনরোধ হবে। যমুনার পানি বাড়লে ও কমলে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। দ্রুত সরকারের কাছে আবেদন জানাই ভাঙন প্রতিরোধ করার জন্য।’

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, ‘কাকুয়া ইউনিয়নে যে এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সে এলাকায় আমরা ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করেছি। ভাঙনকবলিত এলাকার জন্য অনেক আগেই চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সেটি দ্রুতই বরাদ্দ পেয়ে যাবে।’

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা আক্তার বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ সহায়তা করা হবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত