বছর দশেক আগে, যখন মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজ জিতে আসে; তখন থেকেই অনেকে তাকে দেখেছেন জাতীয় দলের সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে। শুধু মাঠের পারফরম্যান্সই নয়, যুব ক্রিকেট পর্যায়ে ম্যাচ ফি’র দাবিটাও তখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন কিশোর মিরাজ। এরপর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে খেলল তার নেতৃত্বেই, নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন তার ডেপুটি। জাতীয় দলে মিরাজের অভিষেকটাও হয়েছে শান্তর আগে, কিন্তু কীভাবে যেন নেতৃত্বের মই বেয়ে শান্তই উঠে গেলেন তরতরিয়ে। দলে জায়গাটা পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই তিন সংস্করণের নেতৃত্ব পেয়ে গেলেন শান্ত। সাদা বলের তিনটা বড় আসরে বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শান্ত, এখন তার কর্র্তৃত্ব শুধুই লাল বলে। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, এর আগে শান্তর অনুপস্থিতিতে আপৎকালীন অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪ ওয়ানডেতে। এবারে পূর্ণ মেয়াদে তাকেই ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ।
শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে শুক্রবারই দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশের টেস্ট দল, যে দলে মেহেদী হাসান মিরাজ সহ-অধিনায়কের ভূমিকায়। টেস্ট সিরিজের পর জুলাইতে আছে ৩ ওয়ানডের সিরিজ, যেখানে নতুন ভূমিকায় যাত্রা শুরু হবে মিরাজের। তার আগে দেশে আসার সম্ভাবনা নেই বলেই শুক্রবার সকালে মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে মাইক্রোফোনের সামনে মিরাজ। জানালেন, মাত্র আগের দিনই জেনেছেন, তাকে দেওয়া হচ্ছে ওয়ানডে অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব, ‘আমাকে গতকাল ফাহিম স্যার (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন) ডেকে বলেছেন, তোমাকে আমরা এ রকম দায়িত্ব দেওয়ার কথা চিন্তা করছি। আমাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেহেতু সামনে খেলা আছে, ওয়ানডে দলটা ঠিক করতে হবে। আমরা সেভাবে পরিকল্পনা করছি।’ এমন একটা সময়ে মিরাজ দায়িত্ব পেলেন, যখন দলটা খুব ভালো অবস্থানে নেই। ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের দশম স্থানে। ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে দুই স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েসহ ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ৮ দল, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ আছে সরাসরি খেলার যোগ্যতার বাইরে। মিরাজ আপাতত এক বছরের জন্য ওয়ানডে নেতৃত্বে, বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকছেন কি-না সেই উত্তর এখনো পাওয়া বাকি। তবে তার মেয়াদে যে ২১টা ওয়ানডে বাংলাদেশ খেলবে, সেই ম্যাচগুলোর ফল নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশই আদৌ ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে কি না।
রাতারাতি যেখানে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিই বদলে যায়, সেখানে অধিনায়ক পদে জুম মিটিং করে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটাকে অস্বাভাবিক দেখায় না। তাই মিরাজ অবাক হলেও বোধহয় অপ্রস্তুত ছিলেন না, ‘আমি জানি না, তারা (বোর্ড) কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি যতটুকু জানি বোর্ড সভার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হয়। কেউ একা নিতে পারে না। অনেক সময় পরিস্থিতি তো ঘটে। আমরা সবাই সব সময় সেভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিই।’ হঠাৎ এই পরিবর্তনে দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও বন্ধু নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হবে না তো? এমন প্রশ্নে মিরাজের উত্তর, ‘ড্রেসিংরুমে এ রকম কোনো প্রভাব পড়বে না। দিন শেষে আমরা সবাই দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলি। (নাজমুল) শান্ত আর আমার মধ্যে এগুলো কখনোই কাজ করবে না। ও যখন অধিনায়কত্ব করেছে, আমি অনেক সাহায্য করেছি। আশা করি, সেও আমাকে করবে। ওর সঙ্গে আমার এই কথাই হয়েছে। ও (নাজমুল) আমাকে একটা কথাই বলেছে, অধিনায়কত্বে আমি কখনো আলাদা কিছু অনুভব করিনি। আশা করি, আমার (মিরাজ) ভেতরেও এই জিনিসটা আসবে না। আমরা একসঙ্গে কাজ করব বাংলাদেশের হয়ে। একটা ভালো জায়গায় বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে চাই।’
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নেতৃত্বে ওয়ানডে অভিষেক মিরাজের, সবশেষ খেলেছেন শান্তর অধীনে। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহসহ অনেকের অধীনেই খেলেছেন মিরাজ। জানালেন সেই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে নেতৃত্ব দিতে চান বাংলাদেশকে, ‘দলে (ওয়ানডেতে) আমার অভিষেক হয়েছিল মাশরাফী ভাইয়ের অধীন। আমি অনেক অধিনায়ককে পেয়েছি। এটা আমার জন্য ভালো লাগার বিষয় যে তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যেটা আমি হয়তো আমার এই অধিনায়কত্বের সময়ে কাজে লাগাতে পারব। তারা যেভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন, শক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন, সে জিনিসগুলো আমি অনুসরণ করেছি যে কীভাবে নিতেন। অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতিতে শক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় নিজের। অনেক সময় পক্ষে আসবে, অনেক সময় আসবে না। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত কীভাবে নিচ্ছি, সেটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।’
মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক করার মাধ্যমে বিসিবি ফিরে গেল তিন সংস্করণে তিন অধিনায়কের পুরনো ফর্মুলায়। বিশ্বের অনেক দলই এই সূত্রে হেঁটে ব্যর্থ হয়ে ফের এক অধিনায়ক কিংবা সাদা ও লাল বলে দুই ভিন্ন অধিনায়ক রাখার পদ্ধতিকেই শ্রেয়তর বলে মেনে নিয়েছে, সেখানে বিসিবি এমন একজনকে ওয়ানডে অধিনায়ক করল যার জায়গাই হয় না টি-টোয়েন্টি দলে।