শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কারাগারে অপরাধীর বিলাস

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

আমাদের দেশে জনসেবাসংশ্লিষ্ট এমন কোনো সরকারি অফিস নেই, যেখানে দুর্নীতি শূন্য। আর জনগণের সম্পৃক্ততা যে সেক্টরে বেশি, সেখানে তো কাঁচা টাকার উৎসব। সবাই জানেন। এসব চলছে দীর্ঘসময় ধরে। অনেক সরকার এসেছে। কিন্তু অবস্থার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারাগারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা হচ্ছে। কোনো সরকারই এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। কারাগারের ভেতর টাকা থাকলে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। ভালো থাকার জায়গা, উন্নত খাবার, মোবাইল  ফোন ব্যবহার, এমনকি হাসপাতাল থেকেও সুবিধা ভোগ করা যায়। এর মানে, কারাগারের ভেতরটা হলো একটা অবৈধ ব্যবসাকেন্দ্র। সেখানে রয়েছে নানা ধরনের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে কয়েদিরা যেমন আছেন তেমনি বাইরের লোকও আছেন।  তবে সবার ওপরে রয়েছেন কারাগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। কারাগারের ভেতরে বিভিন্ন ব্লক অবৈধভাবে লিজ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মাসিক দুই লাখ আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে এই লিজ নেয় কয়েদিদের একটি সিন্ডিকেট। যারা কারাগারে যান, তারা কোথায় থাকবেন, কতটা ভালো থাকবেন তা নির্ভর করে তাদের ওপর।  টাকার বিনিময়ে তারা এই সুবিধা দেন। কারাগারে সাধারণভাবে বুথে গিয়ে  টেলিফোনে কথা বলার সুযোগও আছে। কিন্তু এর বাইরে সেলে বসেই, মোবাইল  ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার সুযোগ আছে। এর জন্যও দিতে হয় টাকা। 

অভিযোগ আছে, কারারক্ষীদের সিন্ডিকেট মোবাইল ফোন ব্যবসায় জড়িত। তারাই রাতে ফোন সরবরাহ করে আবার সকালে নিয়ে যায়। এর মানে হচ্ছে, বাইরের মুক্ত বাতাসে ঘোরাঘুরি ছাড়া বাকি সব পাওয়া যায় টাকার বিনিময়ে। কারাগারের ভেতরে চলছে মাদক কারবার থেকে শুরু করে অবাধে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। প্রায় প্রতিটি কারাগারে জ্যামার সক্রিয় থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। বন্দিরা গোপনে প্রতিনিয়ত বাইরে কথা বলছে। এ নিয়ে পেরেশানিতে রয়েছে কারা কর্র্তৃপক্ষ। কারাগারের ভেতরে বন্দিদের অপরাধ রোধ করতে নানা কৌশল নিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারাগারে সরকারিভাবে মোবাইল ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। একজন বন্দি সপ্তাহে এক দিন ১০ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলতে পারবেন। কিন্তু অবৈধভাবে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রীতিমতো লাইন ধরে মোবাইল  ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। নিষিদ্ধ থাকার পরও দেশের সবকটি কারাগারেই দেদার মোবাইল ফোনে কথা বলছে বন্দিরা। অপরাধীরা কারাগারের ভেতর থেকে তথ্যও ফাঁস করে দিচ্ছে। মাদক কারবারসহ অন্যান্য অপরাধও করছে কৌশলে। একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী বন্দিদের কাছ থেকে ‘সুবিধা’ নিয়ে অপকর্ম চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্যামার সক্রিয় না থাকার কারণে বন্দিরা সহজেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারছে। এমনকি বাইরে থেকেও ফোন আসে বলে তথ্য মিলেছে।

বর্তমানে দেশে ৬৯টি কারাগার রয়েছে। এ কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজারের কিছু বেশি। ৫ আগস্টের পর ৫০ হাজারের কিছু বেশি বন্দি ছিল। তারপর কারাবন্দির সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে কারাবন্দি রয়েছে ৬৫ হাজারের বেশি।  বন্দিদের জন্য কিছু কারাগারে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। যেসব কারাগারে বেশি বন্দি, সেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি বেশি। টাকাই কারাগারে শেষ কথা। টাকা দিলে এখানে সব পাওয়া যায়। মানুষ অপরাধ সংশোধনের জন্য কারাগারে যান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে অপরাধীরাই গড়ে তুলেছেন বিলাসী জীবন, সুখের সাম্রাজ্য। নেপথ্যে রয়েছে অর্থ। সুতরাং কয়েদিরা শিখছেন, কীভাবে অর্থ আয় করা যায়। অন্যায়, অপরাধ বিষয় না। কী চমৎকার বাহারি প্রশাসন!

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত