ইবাদতের প্রাণ হচ্ছে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা। কিন্তু যখন ইবাদত রিয়া বা লোক দেখানোর বিষে দূষিত হয়, তখন তা আর আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না। লোক দেখানো দান, অমনোযোগের নামাজ সবই কোরআনের ভাষায় কঠোরভাবে নিন্দিত। বাহ্যিক আমলের আলোকচ্ছটা যতই দীপ্ত হোক, যদি তার অন্তর কেবল মানুষের বাহবা কামনায় ভরে থাকে, তবে সে আমল আখেরাতে কোনো কাজে আসবে না।
যে ব্যক্তি লোককে দেখানোর জন্য দান করে, লোক দেখানোই যার মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে পড়ে, মহান আল্লাহ কোরআনে করিমে তাদের ভর্ৎসনা করে চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা অনুগ্রহের কথা বলে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানকে বিনষ্ট কোরো না সেই ব্যক্তির মতো, যে নিজের সম্পদ মানুষকে দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং সে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস করে না। সুতরাং তার উদাহরণ এমন, যেমন একটি মসৃণ পাথর, তার ওপর আছে মাটি, অতঃপর তার ওপর প্রবল বৃষ্টিপাত হলো, ফলে তা তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে রেখে দিল। এমন লোকেরা তাদের কৃতকর্মের কিছুই হস্তগত করতে পারে না। (অর্থাৎ তার দ্বারা কোনো সাওয়াব লাভ করে না) আর আল্লাহ কাফেরদের সরল পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা বাকারা ২৬৪) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা শাব্বির আহমদ ওসমানি (রহ.) বলেন, দান করার পর দানগ্রহীতাকে কষ্ট ও খোঁটা দিলে দানের সাওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। তদ্রুপ কেউ নিজেকে দাতা বলার জন্য অন্যদের দেখিয়ে দান করলে উক্ত দান-খয়রাতের কোনো সাওয়াবই পাবে না। (তাফসিরে ওসমানি)
অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ইমান আনে না। আর শয়তান যার সাথী হয়, সে অত্যন্ত মন্দ সাথী। (সুরা নিসা ৩৮)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা শাব্বির আহমদ ওসমানি (রহ.) বলেন, ওই সব অহংকারীদের আরেকটি স্বভাব এই যে, তারা নিজেদের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশে খরচ করে। অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশে খরচ করতে তো নিজেরাও বখিলি করে এবং অন্য লোকদেরও বখিলি করতে উৎসাহিত করে, কিন্তু লোক দেখানোর জন্য ঠিকই নিজেদের ধন ব্যয় করতে থাকে। আর ওদের আল্লাহর প্রতিও ইমান নেই এবং কিয়ামতের প্রতিও বিশ্বাস নেই, ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের সাওয়াব অর্জন তাদের উদ্দেশ্য হবে কী করে? অথচ আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় কাজ হচ্ছে দানের মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের সাওয়াবের আশা রাখা এবং এই আশায় উক্ত হকদারদের দান করা। (তাফসিরে ওসমানি) নামাজে লোক দেখানোর ক্ষেত্রে কোরআনে ভয়াবহ হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দেন, ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে, অথচ তিনিই ওদের ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন ওরা নামাজে দাঁড়ায়, তখন দাঁড়ায় অলসতার সঙ্গে, কেবল লোক দেখানোর জন্য। ওরা আল্লাহকে খুব সামান্যই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা ১৪২) অন্যত্রে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বড় দুর্ভোগ আছে সেই নামাজিদের, যারা তাদের নামাজে অলসতা করে, যারা মানুষকে দেখায় এবং অন্যকে মামুলি বস্তু দিতেও অস্বীকার করে। (সুরা মাউন ৪-৮) অর্থাৎ নামাজ পড়লেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পড়ে না; বরং উদ্দেশ্য থাকে মানুষকে দেখানো। মূলত এ কাজটি ছিল মুনাফেকদের। উক্ত আয়াতসমূহে লোক দেখানো নামাজকে মুনাফিকের নিদর্শন ও ভয়াবহ দুর্ভোগের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।