বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

উম্মতের ধ্বংসের কারণ

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০৪ এএম

কোরআনের বহু আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো উম্মত বা জাতি অকারণে প্রতিষ্ঠিত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না; বরং তা নির্দিষ্ট কিছু কারণের ভিত্তিতে ঘটে, যেগুলো কখনো পরিবর্তন হয় না। মহান আল্লাহ জ্ঞান-বুদ্ধির অধিকারীদের সতর্ক করেছেন যে, কীভাবে কোনো জাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যদি তাদের বস্তুগত ও ভৌত উন্নয়ন থাকেও। ধ্বংসের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো।

এক. আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করা এবং তার রাসুলদের অবাধ্যতা করা।

দুই. দাম্ভিক ও উদ্ধত নেতার অনুসরণ করা এবং অপচয়কারী ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের আদেশ মান্য করা। যেমন আদ ও সামুদ জাতির কার্যকলাপ।

তিন. বস্তুগত জ্ঞান অর্জনে উল্লসিত হওয়া, ওহির নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। যেমন সুরা গাফিরের শেষাংশে বর্ণিত লোকদের অবস্থা।

চার. শক্তি ও ধন-সম্পদের কারণে অহংকার করা এবং আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে উদাসীন থাকা। যেমন ফেরাউন ও কারুনের আচরণ।

পাঁচ. অন্যায়-জুলুম, অধিকার হরণ ও সীমালঙ্ঘন করা, বিশেষ করে গরিব ও নিপীড়িতদের ওপর। যেমন মাদইয়ানবাসীদের (শুয়াইব নবীর জাতি) কার্যকলাপ।

ছয়. নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করা। যেমন লুত (আ.)-এর জাতির কাজকর্ম।

সাত. পৃথিবীতে ফেতনা-ফ্যাসাদ ছড়িয়ে দেওয়া, সরাসরি পাপ কাজ চালানো এবং কেউ কাউকে তা থেকে বিরত না রাখা। যেমন বনি ইসরাইল করেছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা যে মন্দ কাজ করত, সে ব্যাপারে একে অন্যকে নিষেধ করত না।’ (সুরা মায়েদা ৭৯)

আট. আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা, বরং সেগুলোকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার করা। তার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি নেয়ামত বাড়িয়ে দেন।

নয়. ভোগবিলাস ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এমন কত জনপদ ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দারা তাদের অর্থ-সম্পদের বড়াই করত।’ (সুরা কাসাস ৫৮)

কোনো জাতির ওপর আল্লাহর শাস্তি দ্রুত নেমে আসার জন্য উল্লিখিত অপরাধগুলোর যেকোনো একটিই যথেষ্ট। আর যখন একাধিক অপরাধ একত্র হয় কোনো জাতি বা সমাজে, তখন সেই জাতির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে।

আজকের আধুনিক সভ্যতার দিকে তাকালে দেখা যায়, পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর আদর্শ ও বিপথগামিতার কম-বেশি অনেক জাতি ও সমাজের মধ্যে পাওয়া যায়, বিশেষ করে তাদের আকিদা, চিন্তা ও চরিত্রগত দিক। তাই এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, এই সভ্যতার লোকদের প্রতিও আল্লাহর শাস্তি নেমে আসতে পারে।

যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা বাস করছিলে সেসব লোকদের বাসস্থানে, যারা নিজদের ওপর জুলুম করত এবং তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কীরূপ করেছি এবং আমি তোমাদের জন্য উপমা বর্ণনা করেছি। তারা যে চক্রান্ত করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর দৃষ্টির ভেতরেই ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল না যে, তাতে পর্বতও টলে যেত।’ (সুরা ইব্রাহিম ৪৫-৪৬)

-আল-ইসলামু হাদারাতুল গাদি থেকে ভাষান্তর মাইসারা জান্নাত

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত