শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চ্যাটজিপিটির কবলে পড়াশোনা

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ০৪:০৬ এএম

কয়েক বছর ধরে চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক টুলের মাধ্যমে নকল করে ধরা পড়েছে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটির হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এখন সেই ধরনের নকল করার প্রবণতা কমে গিয়েছে অনেকটাই। জরিপ বলছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এআইভিত্তিক টুল ব্যবহার করে নকলের প্রমাণ মিলেছে প্রায় সাত হাজার ক্ষেত্রে, যা প্রতি এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে পাঁচ দশমিক একজন। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল প্রতি এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে এক দশমিক ছয়জন। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, এআই ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে, এমনটা উঠে এসেছে।

সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে প্রতি এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে নকলের প্রমাণ পাওয়ার ঘটনা দাঁড়াতে পারে প্রায় সাত দশমিক পাঁচজনে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নথিভুক্ত এই পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। এসব তথ্য থেকে ইঙ্গিত মেলে, চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য এআইভিত্তিক লেখার টুল আসার ফলে দ্রুত পরিবর্তনশীল এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেবে তা নিয়ে দ্বিধায় আছে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে জেনারেটিভ এআই এখনকার মতো সহজ পাওয়া যেত না। ফলে ওই সময় সব ধরনের একাডেমিক অনিয়মের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ছিল সরাসরি নকল বা প্ল্যাজিয়ারিজম। মহামারীর সময় অনেক পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া শুরু হলে নকলের প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন এআই টুল উন্নত ও সহজে ব্যবহারের জন্য পাওয়ার কারণে নকলের ধরনও পাল্টে গিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে গার্ডিয়ান।

জরিপে উঠে এসেছে, প্রচলিত ধরনের নকলের প্রমাণিত ঘটনা প্রতি এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জন থেকে কমে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক দুজনে। এই শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, এ সংখ্যা আরও কমে প্রতি এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় আট দশমিক পাঁচজনে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

‘ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট’-এর অধীনে যুক্তরাজ্যের ১৫৫টি ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে গত পাঁচ বছরে একাডেমিক অনিয়ম, নকল ও এআই সম্পর্কিত প্রতারণার প্রমাণিত ঘটনার পরিসংখ্যান চেয়েছে গার্ডিয়ান। যার মধ্যে কেবল ১৩১টি ইউনিভার্সিটির তথ্য পেয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকাটি। কারণ, সব ইউনিভার্সিটির কাছে প্রতিটি বছরের বা অনিয়মের ধরন অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছিল না। যেসব ইউনিভার্সিটি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তথ্য দিয়েছে তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশেরও বেশি ইউনিভার্সিটি এখনো এআই অপব্যবহারের বিভিন্ন ঘটনাকে একাডেমিক অনিয়মের আলাদা শ্রেণি হিসেবে রেকর্ড করেনি। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, এখনো এ নতুন সমস্যাটি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি বা এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে শিক্ষা খাত।

এআই ব্যবহার করে নকলের অনেক ঘটনা হয়তো এখনো ব্যাপকহারে ধরা পড়ছে না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘হায়ার এডুকেশন পলিসি ইনস্টিটিউট’-এর এক জরিপে উঠে এসেছে, ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের মূল্যায়নের কাজে এআই ব্যবহার করেছে। গত বছর ‘ইউনিভার্সিটি অব রিডিং’-এর গবেষকরা নিজেদের মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, শিক্ষার্থীরা যেসব কাজ এআই দিয়ে তৈরি করে জমা দিয়েছিলেন ৯৪ শতাংশ ক্ষেত্রেই তা ধরা যায়নি।

‘ইউনিভার্সিটি অব রিডিং’-এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহ-লেখক ড. পিটার স্কার্ফ বলেছেন, সব সময়ই নকল করার কোনো না কোনো উপায় ছিলই। তবে এআই নিয়ে শিক্ষা খাতকে অবশ্যই মানিয়ে নিতে হবে। কারণ একেবারেই ভিন্ন ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ এনেছে এআই। ‘আমার ধারণা, যারা ধরা পড়ছেন তাদের সংখ্যা খুবই কম, মোট ঘটনার খুব সামান্য অংশ। এআই শনাক্তকরণ প্রচলিত নকলের থেকে অনেক আলাদা। কারণ প্রচলিত নকলে আপনি সরাসরি কপি করা লেখাকে চিনতে পারবেন। তবে কে এআই ব্যবহার করেছে, এমন সন্দেহ হলে তা প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। এমনকি এআই ডিটেক্টর ব্যবহারের বেলাতেও। কারণ, এআই ডিটেক্টর কেবল কিছু শতাংশই শনাক্ত করতে পারে।

‘প্রতিটি পরীক্ষা সরাসরি শিক্ষার্থীদের সামনে বসিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তবে একই সঙ্গে শিক্ষা খাতকে মেনে নিতে হবে শিক্ষার্থীরা এআই ব্যবহার করবে, এমনকি নিষেধ করলেও। আর সেটা অনেক সময় ধরাও পড়বে না।’ যুক্তরাজ্যের সরকারি একজন মুখপাত্র বলেছেন, সরকার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১৮ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডের বেশি বিনিয়োগ করছে ও বিভিন্ন স্কুলে এআই ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে।

‘শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে জেনারেটিভ এআইয়ের। তবে শিক্ষাদান, শেখা ও মূল্যায়নের সঙ্গে এআইকে যোগ করতে হলে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিকে ভাবতে হবে কীভাবে এর নানা সুবিধা কাজে লাগিয়ে ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। যাতে ভবিষ্যতে চাকরির জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে পারে এসব বিশ্ববিদ্যালয়।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত