রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শহর জুড়ে ছোট যানে বড় জট

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ০২:১৭ এএম

জামালপুর শহরে লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে সাড়ে চার হাজার। লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরও ষোল হাজার। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন বৃদ্ধি, অপর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা ও যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করায় জামালপুর শহরে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে শহরবাসী। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দিলেও যানজট নিরসনে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই।

জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের দুপাশে তমালতলা মোড়, বুড়ির দোকান মোড়, দয়াময়ী মোড়, ভোকেশনাল মোড়, শফি মিয়ার বাজার মোড়, সকাল বাজার, বকুলতলা মোড়, ফৌজদারী মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় বিপণি বিতান, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এসব এলাকার ভেতর দিয়ে চলে গেছে শহরের প্রধান সড়ক। এ সড়ক দিয়ে রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলা করে।

এছাড়া সড়কের কিছু দূর পরপর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। ফলে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। শহরের প্রধান সড়ক ছাড়াও শহীদ হারুন সড়ক, সকাল বাজার মাতৃসদন সড়ক, বুড়ির দোকান মোড় থেকে সিংহজানী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় সড়ক, শফি মিয়ার বাজার নিউ কলেজ রোড, পাঁচ রাস্তার মোড়ে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। পৌরসভা থেকে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরেও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ইজিবাইক শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে।

জামালপুর পৌরসভার হিসাব মতে, শহরের আয়তন ৫৩ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ সাল থেকে শহরে চলাচলের জন্য ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এ শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভার লাইসেন্সধারী ৪ হাজার ৩০০ ইজিবাইক রয়েছে। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরও প্রায় ১৬ হাজার। এছাড়া মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ লাইসেন্সধারী গাড়ি রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার।

শহরের তমালতলা এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘ইজিবাইক ও অটোরিকশা যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সড়কের মোড়গুলোতে গোলচত্বর বা ইউটার্ন না থাকায় সড়কের ওপর ইজিবাইকগুলো ইচ্ছেমতো ঘোরানো হচ্ছে। সিগন্যাল ছাড়াই হঠাৎ করে সড়কে গাড়ি ঘোরানোর ফলে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের সঙ্গে প্রায়ই দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ইজিবাইক চালকদের এসব নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মারামারির ঘটনাও ঘটে।’

এদিকে চালকদের দাবি, শহরের ভেতরে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। বৈধ স্ট্যান্ড বা ফাঁকা কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের সড়কের ওপরেই ইজিবাইকগুলো দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। পৌরসভা থেকে যে সংখ্যক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তার প্রায় চারগুণ ইজিবাইক অবৈধভাবে শহরে চলাচল করে। অবৈধ ইজিবাইকের চলাচল বন্ধ করা হলে যানজট দূর হবে।

এ প্রসঙ্গে জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক নেতার কারণে এই অবৈধ যান চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। এই ইজিবাইকে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলেও এতে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। শহরে চলাচলের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ৪ হাজারের মতো লাইসেন্স দিলেও ১২-১৬ হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে। বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে শহরের ভেতরে ঢুকে যানজটের সৃষ্টি করছে। যানজট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ।’

এ বিষয়ে জামালপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অটোরিকশা দাঁড়ানোর বৈধ স্ট্যান্ড দেশের কোথাও নেই। জামালপুর এক সড়কের শহর। এখানে অটোরিকশার জন্য স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে অবৈধ অটোরিকশা ঠেকানোর জন্য শহরে প্রবেশমুখের পাঁচটি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আমাদের লোকজন কাজ করছে।’      

জামালপুর পৌরসভার দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মৌসুমী খানম। তিনি বলেন, ‘শহরে ইজিবাইকের চাপ কমানোর জন্য রুট পারমিটের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু আশপাশের ইউনয়ন থেকে ইজিবাইক শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। অবৈধ অটোরিকশাই বেশি চলাচল করে। হঠাৎ করেই ইজিবাইক বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। শহরের যানজট নিরসনে লাইসেন্সধারী ইজিবাইকের সম্পূর্ণ বডি লাল ও সবুজ রঙ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেদিন লাল রঙের অটোরিকশা সড়কে চলাচল করবে এর পরের দিন সবুজ রঙের। এতে শহরের যানজট নিরসন হবে। আগামী অর্থবছরে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’ 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত