
এক সৈনিক ঘোড়ার পিঠে যুদ্ধ করছেন বিরতিহীন। হঠাৎ তিনি খবর পান ভূখন্ড রক্ষায় তাকে যুদ্ধের প্রান্ত বদল করতে হবে। আর বিশ্রামের জন্য পাবেন এক রাত। সৈনিক ফিরে এলেন ক্যাম্পে। ঘোড়াটাকে আস্তাবলে ছেড়ে দিয়ে সহিসকে বললেন, ‘ঘোড়াটার পিঠে চাবুক মারতে থাকো।’ সৈনিক চলে যান তাঁবুতে। তার কথা মতো ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারতে থাকে সহিস। ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে স্পৃষ্ট হচ্ছে চাবুকের ফণা আর ঘোড়ার কণ্ঠ ছিঁড়ে আসছে চিঁহি চিঁহি শব্দ। চাবুক মারতে মারতে একসময় থেমে যায় সহিস। তাঁবুতে ছুটে গিয়ে সৈনিককে বলল, ‘আপনার মতো ঘোড়াটিও ক্লান্ত। তারও বিশ্রাম দরকার। ঘোড়াটার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি আর চাবুক মারতে পারছি না আমাকে ক্ষমা করুন।’ সৈনিক এবার তাঁবু থেকে বেরিয়ে ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারতে লাগলেন। সহিস সৈনিককে আবার বলল, ‘কেন ঘোড়াটার পিঠে চাবুক মারছেন? ঘোড়াটা ক্লান্ত!’ সৈনিক বললেন, ঘোড়াটা এতটাই ক্লান্ত যে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর কখনো জাগবে না। আমাদের ভূখন্ডটা ঠিক এই ঘোড়াটার মতোএকবার ঘুমিয়ে পড়লে আর জাগবে না। তাইতো তাকে চাবুক মেরে মেরে জাগিয়ে রাখছি।
অমিত হাবিব। দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। আমাদের অতি প্রিয় ‘অমিত দা’। দেশ রূপান্তর শুরুর আগে শুনিয়েছিলেন এই গল্প। দাদাকে বলেছিলাম, এই গল্পের ‘জন্মভূমি’ ‘ঘোড়া’ নাকি ‘সৈনিক’ কোনটা আপনি? সেদিন কোনো উত্তর দেননি, দেখেছি একটা সিগারেট ধরাতে...।
কালের কণ্ঠ ছাড়ার মধ্য দিয়ে সবার জানা হয়ে গিয়েছিল অমিত দা নতুন পত্রিকা করবেন। তিনি কিছু করা মানে প্রকৃত পক্ষেই ‘নতুন কিছু’। বুক পিঠ লাগিয়ে ‘ভোরের কাগজ’ সামলানো, ‘যায়যায়দিন’, ‘কালের কণ্ঠ’ তারই জাদুতে হয়েছে পাঠকপ্রিয়, পেয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে অমিত দার এই ‘নতুন কিছু’ করা নিয়ে সাংবাদিক মহলেও ছিল বিপুল আগ্রহ আর অপেক্ষা। তিনি নিজেও এই নতুন কিছু মঞ্চায়নের জন্য করেছেন দীর্ঘ অপেক্ষা। সময় খুব কঠিন ছিল। যে সময় দৈনিক কাগজের পাঠক কমছে, সেই সময় অমিত দার এই চ্যালেঞ্জ! যদিও তিনি কঠিন সময় নিয়ে মজা করে বলতেন, ‘কোথায় কঠিন সময় দেখলেন? ঘড়ি তো ঘুরছে।’
একদিন অমিত দার ফোন পেলাম। বললেন, বাড্ডায় আসেন। রাজধানীর বাড্ডায় দাদার ক্যাম্প অফিস। গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি একটা সাদা টেবিল। সেখানে একটা অ্যাশট্রে ছাড়া আর কিছুই নেই। মনে মনে ভাবলাম একটা জাতীয় পত্রিকা বেরুবে অথচ একটা সাদা কাগজ পর্যন্ত নেই। টেবিলের সামনে বসলাম। দাদা বললেন, ওই গল্পটা মনে আছে? এবার বলেন আপনি ওই গল্পের কোনটা হতে চান? ‘জন্মভূমি’ ‘ঘোড়া’ নাকি ‘সৈনিক’। দাদার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা ভালোভাবেই জানেন তার আহ্বান এমন এক আদালত, যার রায়ে আর আপিল চলে না! দাদার এই ধরনের আহ্বানে আমার মতো খুদে কর্মীও হয়ে উঠেছিল কিছু করার জন্য ক্ষুধার্ত। আর এভাবেই দেশ রূপান্তরের প্রতিটি কর্মী পেয়েছিলেন ‘অমিত হাবিব মন্ত্র’।
হয়ে গেল দেশ রূপান্তরের মাস্টহেড। দাদা মাস্টহেডের ওপরে লিখলেন ‘দায়িত্বশীলদের দৈনিক’। অনেক মাস্টহেডের ওপরে তো অনেক কথাই লেখা থাকে। কিন্তু অমিত দা ব্যতিক্রম। দায়িত্বশীলতা কেবল অক্ষরে নয়; থাকবে কাজে, তথ্যে, সংবাদ সরবরাহেও। ফলে প্রতিটি কর্মীর ভেতর এই দায়িত্বশীলতা প্রবলভাবে জাগিয়ে তুললেন তিনি।
সূচনালগ্নে অমিত দা’কে দেখেছি একা একা অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দাদা সেই প্রতিকূলতাকে পাকাপোক্ত কূল বানিয়ে ছেড়েছেন। আবার তার সামনে নাক বরাবর দেয়াল উঠেছে। অনেকেই হয়তো আছেন এমন দেয়াল টপকিয়ে পার পেয়েছেন। কিন্তু তিনি তো অমিত হাবিব। দেয়াল ভেঙে রাস্তা বানিয়ে তাকে পার হতে হয়েছে। ভয়ে ভয়ে দাদাকে বলেছি, ‘আর কত সইবেন দাদা?’ দাদা বলেছেন, ‘আপনারা একটুতেই এমন হয়ে যান। থোন তো দেখি; এই পৃথিবীতে আসার সময় আপনাকে তো কেউ কথা দেয়নি যে আপনার পথ হবে মসৃণ।’ দেশ রূপান্তর সম্ভবত প্রথম পেশাদার কাগজ যার প্রস্তুতির সময় ছিল সবচেয়ে কম। আত্মপ্রকাশের আগে মাত্র ১০ দিন ডামি হয়েছে। একইভাবে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীও ছিল কম। বলতে গেলে ১০ জনের জায়গায় ৭ জন। কেন দশের জায়গায় সাত? হয়তো সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু যেকোনো সীমাবদ্ধতাকে সীমাহীন শক্তিতে রূপান্তর করা ছিল অমিত দা’র ম্যাজিক। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশ রূপান্তর আত্মপ্রকাশ করল। সম্পাদক হয়েও বার্তা কক্ষে শুরু করলেন সাধারণ কর্মীর কাজও। ‘অমিত হাবিব মন্ত্রে’ উজ্জীবিত কর্মীরাও নিজের সাপ্তাহিক ছুটি বিসর্জন দিলেন। পুরো টিম হয়ে উঠল একটা নান্দনিক ক্যানভাস। কিছুদিন যেতে না যেতেই ‘অমিত হাবিব জাদুতে’ পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠল দেশ রূপান্তর।
আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি একজন বিস্ময়কর ম্যাজিশিয়ানকে। একদিন পেইজের ডামি নিয়ে তার কাছে গেলাম। দাঁড়িয়ে রইলাম প্রচন্ড ভয়ে। তিনি পেইজটা এক্সরে পেপারের মতো ধরলেন আর মুহূর্তেই দেখিয়ে দিলেন কোথায় ভুল আছে। এতগুলো অক্ষরের মধ্যে কীভাবে তিনি ভুল অক্ষরটি শনাক্ত করলেন। এই বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করেছি, ‘দাদা এত দ্রুত কীভাবে আপনার চোখে ধরা পড়ল ভুল।’ দাদা বলেছেন, ‘এটা আয়নাতে মুখ দেখার মতো। আপনি যখন আয়নায় মুখ দেখবেন তখন সবার আগে চোখে পড়বে আপনার মুখের স্পট। কাগজটা কিন্তু তাই। যখন দেখবেন তখন তাতে আপনার মুখ ভেসে উঠতে হবে।’
অমিত দা’র রুমে ঢোকার মুখে লালনের একটা স্কেচ আছে। দরজা সারাক্ষণ খোলা। সম্পাদকের রুম ছিল আমাদের লাইসিয়াম। সেখানে বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, খেলাধুলা, পেশাগত, ব্যক্তিগত, হেন বিষয় ছিল না যার ময়নাতদন্ত হতো না। তিনি শুধু দেশ রূপান্তরের নন; তিনি ছিলেন আমাদের অবিসংবাদিত অভিভাবক। হয়তো ভারাক্রান্ত হয়ে যে যখন তার সামনে দাঁড়িয়েছে। মুখ দেখে বুঝে গেছেন। যেই তিনি দুটো কথা বলেছেন, সেই ভারমুক্ত।
দেশ রূপান্তর সর্বস্তরে প্রশংসিত হচ্ছে। আমরাও উচ্ছ্বসিত। কিন্তু দাদা ব্যতিক্রম। উনি বলতেন ‘সন্তুষ্টি পাঠকের জন্য আমাদের জন্য নয়’। আবার যদি বলেছি, দাদা আজকের কাগজটা? এই বলে থামতেই দাদা বলেছেন, ‘ফুল ফোটা সূর্য ওঠার মতো পৃথিবীতে দৈনিক যা যা হয় অন্তত দৈনিক পত্রিকায় তা রোজ হওয়ার নয়।’
পাঁচে পা রাখল দেশ রূপান্তর। অমিত দা তার কোনো স্বপ্ন ব্যক্ত করতেন না। তা কাজে প্রমাণ করেছেন আমৃত্যু। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশ রূপান্তরের জন্ম। এর প্রায় ১৫ মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৮ মার্চ এসে পড়ে করোনা মহামারী। যা ভয়াবহ আকারে ছিল অন্তত দুই বছর। ফলে অন্যসব কাগজের মতো দেশ রূপান্তরের ঘাড়েও পড়ে খড়গ। কিন্তু দেশ রূপান্তর তো ছিল মাত্র ১৫ মাসের উজ্জীবিত শিশু। কী হবে কাগজটির। শুরু হলো অমিত দা’র অন্য মাত্রার যুদ্ধ। জন্মভূমির মতো বুকে আগলে রাখলেন দেশ রূপান্তর। কর্মীদের বেতন অক্ষুন্ন রেখে পাশে থাকলেন পিতৃরূপে। জীবনভর ভেতরে ভেতরে সয়েছেন অনেক। আমাদের বুঝতে দেননি কিছুই...।
দেশ রূপান্তরের প্রথম সংখ্যায় অমিত দা লিখেছিলেন ‘আমার কিছু কথা আছে’। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি, শুরুর দিন থেকেই আমাদের চেষ্টা চলমান থাকবে। পাঠকরা আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় শক্তি ও সাহস জোগাবেন।’ স্যালুট মহান কারিগর। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনার উত্তরসূরিরা আপনার আদর্শে আপনার দেশ রূপান্তরকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
লেখক : কবি ও দেশ রূপান্তরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমার সাপ্তাহিক ছুটি। ঘুমাচ্ছিলাম; এই যুগে দিনের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মোবাইল সাইলেন্ট করতে হয়। আর তাই অফিস থেকে ৩০ বারের মতো ফোন করেও আমাকে পাওয়া যায়নি। যখন পাওয়া গেল তখন ঘুম গেল। মাথায় ভেঙে পড়ল আকাশ। অমিত দা, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিব স্ট্রোক করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে। কেউই সঠিক অবস্থা বলছিল না। এরকম সময়ে যখন কেউ কিছু বলতে চায় না, তখন বুঝে নিতে হয়। বুঝলাম অবস্থা সংকটাপন্ন। শঙ্কাকে সম্ভাবনায় রূপ নিতে পরের এক সপ্তাহ প্রাণান্ত চেষ্টা চলল। শেষ পর্যন্ত পারা গেল না। দাদা চললেন চূড়ান্তে। আর আমাকে এবং দেশ রূপান্তরকে ফেলে দিয়ে গেলেন, যাকে বলে অকূল পাথারে।
যোগ দিয়েছি এখনো বছর হয়নি। তখন ছয় মাসের মতো। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই হাল ধরতে হয়। কিন্তু এই সময়ে, যখন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের বিরাট ছায়া সরে গেছে, যখন চারদিকে বেদনা আর হাহাকারের হাওয়া। সেই হাওয়ায় একরকম হাওয়ার বিপরীতে শুরু হলো চলা। চলতে চলতে আজ ছয় মাস। সময় গড়িয়ে চলে এসেছে দেশ রূপান্তরের পঞ্চম বর্ষে পদার্পণের দিন। পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
দেশ রূপান্তরের ডিজিটাল শাখা আছে, আছে সক্রিয় অনলাইনও। তবু মূল পরিচয় ছাপা পত্রিকায়। এবং সেই ছাপা পত্রিকার দিন আছে, না চলে গেছে তা নিয়ে খুব বিতর্ক চলে চারদিকে। আমি সেই বিতর্কে অংশ নিই না। কারণ, নিশ্চিতভাবে জানি, ছাপা পত্রিকার দিন যায়নি। আছে। থাকবেও। কিন্তু সেই থাকার যে পথটা আছে সেটাকে অনুসরণ করতে হবে আমাদের। পুরনো দিনের গল্প বলে কিংবা দিন চলে গেছে বলে হাহাকারের কোনোটারই পক্ষে নই আমি। বাস্তবতা দেখাচ্ছে ছাপা পত্রিকায় নানা সংকটের দিক। কাগজের মূল্য পারলে সোনার মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে, ওদিকে মানুষ অনলাইনে দ্রুত সব পেয়ে যায়। ফেইসবুক-সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যালেঞ্জ চারদিকে। মানে সব মিলিয়ে সংকটের ছবি। কিন্তু সংকটের মধ্যেই সম্ভাবনাও থাকে। লুকিয়ে থাকে, এই যা...। সেই লুকানো সম্ভাবনা নিয়েই কাজ করতে হবে। আমরা করছিও। অনলাইন-টেলিভিশনপুষ্ট যুগে মনে রাখতে হবে পুরনো ধাঁচের পত্রিকায় চলবে না। নতুন ধরন লাগবে। অনলাইন তাৎক্ষণিকতার জন্য সময় পায় না, ভিজ্যুয়াল মিডিয়া আয়োজনজনিত বিস্তৃতির জন্য অনেক জায়গায় ঢুকতে পারে না, আর তাই ফাঁকা জায়গা আছে প্রিন্ট মিডিয়ার। সেই জায়গার চর্চা রাখতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে, এত লড়াইয়ের মধ্যে টিকে থাকার দরকারটা কী! যখন আমাদের অনলাইন-ডিজিটাল সব আছে। দরকার আছে। কারণ, ঐতিহ্যের কারণে, সংস্কতির কারণে এখনো এ মাধ্যমেই সম্ভবত সাংবাদিকতাটা বেশি হয় সবচেয়ে। গত ছয় মাস খেয়াল করুন। দেখবেন, এর মধ্যেও আলোচনায় আসার মতো সব খবরের জোগান পত্রিকা থেকেই এসেছে। আর তাই এ মাধ্যমকে টিকতে হবে। মানুষের প্রয়োজনে। সাংবাদিকতার স্বার্থে। নিজের সাংবাদিকতার মূল জায়গা ছিল খেলা। খেলা সবসময় দেখায় জীবনের দুই পিঠ বড় কাছাকাছি। আনন্দ, পরমুহূর্তেই বিষাদ। আর তাই আশঙ্কার মধ্যেই দেখি আশা। সেই আশা নিয়েই চলছি আমরা। কিছু পরিবর্তনের ছায়া এবং ছোঁয়াও এরই মধ্যে দেখেছেন নিশ্চয়ই। দেশ রূপান্তর সম্পর্কে সাধারণ যে বিশ্বাস, এরা কোনো দিকে হেলে নেই। সত্যিই আমরা কোনো দিকে হেলে নেই। আমরা নতও নই। বাস্তবতাজনিত কিছু সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে। সেই সীমায় থেকেও সাহসের সঙ্গে সাংবাদিকতার চেষ্টাই করে চলছি। শিরোনাম দেশ রূপান্তরের বড় শক্তি। সেই শক্তির চর্চা যে ভালোই হয়, সেটা আপনাদের প্রতিক্রিয়াতেই বুঝতে পারি। অনলাইন-ডিজিটাল নিয়ে কিছু চাহিদা ছিল। পঞ্চম বর্ষে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আজই উদ্বোধন হচ্ছে নতুন চেহারার ওয়েবসাইট। ডিজিটাল অঙ্গনেও তৎপরতা অনেক বেশি। পাতা বিন্যাসেও বদল আসবে। প্রতিদিন ফিচার থাকবে। যোগ হবে সাহিত্য পাতা। এবং আরও অনেক কিছু। জোড়া পাতা প্রচ্ছদ, এক পাতার মধ্যে দুই পাতা করা এসবে নতুনের ইঙ্গিত দেখেছেন। পুরোটা দেখেননি। আসছে বছর দেখবেন।
আমাদের পৃষ্ঠপোষক রূপায়ণ গ্রুপ। জানা আছে নিশ্চয়ই। তাদের আবাসন ব্যবসা, এটাও বেশিরভাগ মানুষ জানে। কিন্তু অনেকেই বোধহয় জানেন না, রূপায়ণ উত্তরা সিটি প্রকল্পটা কী অসীম সৌন্দর্যের। বাংলাদেশের ভেতরে যে এমন সুন্দর আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে পারে, দেখে বিশ্বাস করতে পারিনি। বলছি এ জন্য যে, রূপায়ণ গ্রুপ খুব আওয়াজ না দিয়েও অসাধারণ সব কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, দেশ রূপান্তরও তেমনি একটি প্রকল্প, প্রচার-প্রচারণায় হয়তো আকাশছোঁয়া নয়, কিন্তু চরিত্রে-মানে সর্বোচ্চ ধাপে। আর এর নেপথ্যে গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটা বাংলাদেশের মতো দেশে খুব সহজ নয়, সঠিক সাংবাদিকতা করতে গেলে বন্ধু হারাতে হয় অনেক ক্ষেত্রে, এই কঠিন পথেও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন অক্লান্তে। ছায়া হয়ে আছেন প্রকাশক ও গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল এবং রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার। আর সঙ্গে আছে আমার একদল উদ্যমী সহকর্মী, যারা নতুন পথে চলে আনতে চায় নতুন দিন।
তাদের নিয়ে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রা। এই যাত্রায় সঙ্গী হোন। ঠকবেন না। কারণ, অনেকেই যেখানে দেখছে সংকট, আমরা দেখছি সম্ভাবনা। কেউ কেউ পাচ্ছেন ভয়। আমরা ভয়ের মধ্যেই দেখতে পাই জয়।
রিপোর্টিং বিভাগ একটি পত্রিকার প্রাণ। রিপোর্টিং টিম ঠিক থাকলে পত্রিকা ব্যবস্থাপনায় নির্ভার থাকা যায়, গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হয়। তবে অন্যান্য সব বিভাগও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সব বিভাগের যথাযথ কাজ আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই একটা পত্রিকার সাফল্য আসে।
আমাদের যাত্রা শুরুর রিপোর্টিং টিমের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল আমরা প্রায় শতভাগ রিপোর্টার একে অপরকে আগে থেকেই চিনতাম। বিভিন্ন সময় কেউ না কেউ কোনো না কোনো পত্রিকায় একসঙ্গে কাজ করেছি। ফলে বোঝাপড়ার বিষয়টি আমাদের জন্য সহজ ছিল। সাবলীল ছিল আলাপচারিতা, তথ্য লেনদেন, টিম পরিচালনা। কঠোর বিধিনিষেধে কখনোই পড়তে হয়নি আমাদের।
রিপোর্টিং বিভাগ হচ্ছে খোলা হাটের মতো। রিপোর্টাররা হাটুরে। বাজার হাট মাঠ ঘুরে ঘুরে তথ্য আনেন। লেখেন। কী দেখলেন, কী অভিজ্ঞতা হলো, প্রতিদিন সেসব ঘটনা অকপটে তুলে ধরেন, গল্প করেন। এ ওর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন। হাসি-ঠাট্টা রাগ সব চলে এখানে। যতক্ষণ রিপোর্টাররা অফিসে থাকেন, ততক্ষণ প্রাণবন্ত থাকে অফিসটা। দিনের পর দিন, মাস, বছর রিপোর্টাররা হয়ে ওঠেন পরিবার, স্বজন, বন্ধু। রিপোর্টাররা ভালো থাকলে অফিসটা ভালো থাকে, শান্তি লাগে। হাসিমুখ রিপোর্টিং বিভাগ, আলো করে রাখে অফিস, একটি পত্রিকা।
সবশেষে বলতেই হয় দেশ রূপান্তরের এই যে সামনে তরতর করে এগিয়ে চলার ফ্রন্ট লাইনরা মাসে রিপোর্টাররা। কারণ এই টিমে আছেন অন্ততপক্ষে দেশের ১০ জন সেরা রিপোর্টার। যাদের নাম না বললেই নয়। সচিবালয় বিটের এই সময়ের সেরা রিপোর্টার আশরাফুল হক রাজীব, যিনি সব সময় এই অঙ্গনের একেবারে ভিতরের রিপোর্টগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে আনেন। আরও আছেন, ক্রাইম বিটের এই সময়ে আলোচিত রিপোর্টার সারোয়ার আলম। দিন রাত সারাক্ষাণ যিনি দেশ রূপান্তরকে নিয়ে ভাবেন। অনেকগুলো ব্রেকিং নিউজ দিয়ে দেশ রূপান্তরকে পাঠক জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিটের রিপোর্টার পাভেল হায়দার চৌধুরী। যিনি আগাম খবর দিয়ে আমাদের পাঠকদের অন্য পত্রিকার পাঠকের কাছ থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রেখেছেন। বিজনেস বিটের কর্ণধার আলতাফ মাসুদ, খুবই ছোট টিম নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু পাঠককে বুঝতে দেননি। অর্থনীতি বিষয়ে বিশ্লষন করেন চমৎকার। রিপোর্টে রয়েছে ধার। শিক্ষায় শরীফুল আলম সুমন এখন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের জন্য রীতিমতো আতঙ্ক। আর তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের কথা না বললেই নয়। যার বালিশের উত্তাপ নিয়ে আমি এখনো হাটে মাঠে ঘাটে প্রতিক্রিয়া পাই। ওই যে, বালিশ কাণ্ডের দেশ রূপান্তর। আর আদালতের উৎপল। সাদা মাটা মিষ্টি ব্যবহারের উৎপল আদালত পাড়ার জট আর মানুষের হয়রানি নিয়ে রিপোর্ট করে এই বিটের সেরা হয়ে উঠছেন। আমাদের সাথে আছেন অভিজ্ঞ রিপোর্টার প্রতীক ইজাজ। বিএনপি বিটের রেজাউল করিম লাভলু, বিএনপির সব পরিকল্পনা আগে আগেই তুলে ধরেন।
প্রতিশ্রুতিশীল এবং উদীয়মান রিপোর্টার ইমন রহমান, যার ধ্যানজ্ঞান সাংবাদিকতা। শুরু থেকেই একই ছন্দে কাজ করছে। মজ্জায় তার সাংবাদিকতার বারুদ। অর্থনীতি বিটের এমদাদ হোসেন এসেই কয়েকটা আলোচিত রিপোর্ট করেছেন। অর্থনীতির বিটের সদ্য যুক্ত হওয়া আনাস ভূঁইয়াও কম নয়। এসেই পাঠকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কম নয় ফারজানা লাবনীও কম নয়। এনবিআরে শততে শত। আমাদের টিমে আছে রিয়াজ হোসেন। মেধাবী রিপোর্টার, নীরবে কাজ করেন তবে আওয়াজটা পাঠকের কাছে অনেক বড়। সানমুন আহমেদ বয়সে তরুণ হলেও কাজে কোনো আলস্য নেই। যাই করতে দেওয়া হয় যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সে রিপোর্ট যান করে। আছে পাঠান সোহাগ বুঝে শুনে কাজ করে। এটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হওয়ার প্রথম শর্ত। টিমের তাওসীফ মাইমুন। বাজারদর নিয়ে সব সময় চিন্তা। সবার আগে পাঠকদের নিত্যপন্যের দাম বাড়া কমার খবর দিয়ে অন্য পত্রিকার বাঘা বাঘা রিপোর্টারদের কাৎ করে ফেলে। সব মিলিয়ে এই টিমটা ছোট হলেও ঝাক্কাস।
লেখক : দেশ রূপান্তরের প্রধান প্রতিবেদক ও বিশেষ প্রতিনিধি
সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক পাঠে সংবাদ, সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে গিয়ে অনেক শিক্ষক একটা গল্প প্রায়ই বলতেন সাংবাদিকতা অনেকটা খাবার তৈরির মতো বিষয়। একজন প্রতিবেদক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন, গুছিয়ে দেন, বিষয়টি অনেকটা বাজার করার মতো। আর সহ-সম্পাদকরা সেগুলো আরও গুছিয়ে, চমৎকার একটা শিরোনাম দিয়ে ছাপার উপযোগী করেন, যেমনটি একজন রাঁধুনি ভালো খাবার রান্না করেন। এ কারণেই সংবাদপত্রের সেন্ট্রাল ডেস্ককে বলা হয় সংবাদের রসুইঘর বা রান্নাঘর। আবার কোনো ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো সংবাদ যেন ছাপা না হয় সেটি খুব সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হয় বলে সেন্ট্রাল ডেস্কের সহ-সম্পাদকদের সংবাদের পাহারাদারও বলা হয়। কিংবা বলা যায় সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা আর দায়িত্বশীলতার শেষ গেটকিপার।
সেন্ট্রাল ডেস্কের সার্বিক নেতৃত্ব দেন বার্তা সম্পাদক। তারপরে ক্রমান্বয়ে যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক, সহকারী বার্তা সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, সহ-সম্পাদক বা শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদকরা সংবাদের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করেন। বার্তা সম্পাদক অবশ্য কেবল সেন্ট্রাল ডেস্কেই সীমাবদ্ধ নন। বার্তা বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন ও তদারক করেন। পত্রিকার সংবাদ সংক্রান্ত সব সংস্করণের পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্বও তার।
তবে দেশ রূপান্তরে শুরুর প্রায় তিন বছর ছিলেন না কোনো বার্তা সম্পাদক। সেন্ট্রাল ডেস্ক চলেছে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবের দিকনির্দেশনায় আর ডেস্কের কর্মীদের চেষ্টায়। ২০২১ সালের শেষের দিকে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে আসেন শাহ আলম বাবুল। বার্তা কক্ষের অভিভাবক হিসেবে এখনো তিনি তার মেধা আর শ্রমের সর্বোচ্চটা দিয়ে যাচ্ছেন। যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক জুয়েল মোস্তাফিজ ভালোবাসার সবটুকু নিংড়ে দিচ্ছেন গত চার বছর ধরে। আরেক যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে আছেন অভিজ্ঞ ও সদালাপী মো. জাকির হোসেন। সহকারী বার্তা সম্পাদক আতিকুল আরেফিন তার বহুমুখী দক্ষতা দিয়ে দেশ রূপান্তরের ধারাবাহিক উন্নতিতে যেমন ভূমিকা রাখছেন তেমনি তার কাজ দেখে সমৃদ্ধ হচ্ছেন সহকর্মীরা। ডেস্কের সবচেয়ে সিনিয়র ও প্রাজ্ঞ মানুষটি মো. সাইফুর রহমান তারিক আছেন সিনিয়র কপি এডিটরের ভূমিকায়। ছোট ছোট ভুলগুলো অন্যদের চোখ এড়ালেও তিনি সেগুলো শুধরে সংবাদকে করছেন ফুলের মতো সুন্দর। জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আবু নোমান হাদীর (সজীব) একনিষ্ঠ সম্পাদনায় মফস্বলের ছোট্ট খবরও জায়গা করে নিচ্ছে প্রথম পাতায়। ঝড়-বাদল, দুর্ঘটনা বা রাজনীতির সংবাদের কম্পাইল করা দৈনন্দিন কাজ আরেক জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক তপু রায়হানের। সেন্ট্রাল ডেস্কের সবচেয়ে ছোট্ট সদস্য সহ-সম্পাদক নাসিমুল আহমেদ শুভ অবলীলায় করে দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক বড় বড় সব সংবাদের অনুবাদ।
সাধারণ চোখে প্রতিবেদক প্রতিবেদন লেখেন, আর পত্রিকায় ছাপা হয় বিষয়টা এমন মনে হতে পারে; কিন্তু একটি সংবাদ লেখার পর থেকে ছাপাখানায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে আরও অনেকগুলো ধাপ। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে সংবাদ সম্পাদনা। এটি হয় সেন্ট্রাল ডেস্কে। পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতাসহ দেশি-বিদেশি সব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ যেখানে সম্পাদনা করা হয় সেটিকে বলা হয় সেন্ট্রাল ডেস্ক। তবে সহ-সম্পাদকদের কাজকে অনেকে বলেন ‘থ্যাঙ্কসলেস জব’। কোনো সংবাদ ভালো হলে সব প্রশংসা পান সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক। তবে কোনো ত্রুটি থাকলেই প্রথম দায়টা পড়ে সহ-সম্পাদকের কাঁধে। কারণ সেন্ট্রাল ডেস্কের কর্মীদের যেহেতু সংবাদটি ছাপার যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব ছিল তাই ভুলের দায় তাকে নিতেই হবে। কখনো কখনো মারত্মক ভুলের কারণে চাকরিও চলে যেতে পারে। এই বিভাগের কর্মীরা প্রতিবেদকদের মতো অফিসের বাইরে সময় দিতে পারেন না, প্রেস ক্লাবে আড্ডা দিতে যেতে পারেন না, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনে সক্রিয় থাকতে পারেন না, পাঠকের কাছে নায়কও হয়ে উঠতে পারেন না।
দেশ রূপান্তরে চার বছরে নানা প্রতিবন্ধকতা আর সম্ভাবনার মধ্য দিয়েই এগিয়েছে সেন্ট্রাল ডেস্ক। সব বিভাগের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই কাজ করছে। প্রতিদিন বস্তুনিষ্ঠতা আর দায়িত্বশীলতার পরিচয় যেমন দিচ্ছে তেমনি নিচ্ছে পাঠও।
লেখক : দেশ রূপান্তরের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।