
সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক পাঠে সংবাদ, সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে গিয়ে অনেক শিক্ষক একটা গল্প প্রায়ই বলতেন সাংবাদিকতা অনেকটা খাবার তৈরির মতো বিষয়। একজন প্রতিবেদক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন, গুছিয়ে দেন, বিষয়টি অনেকটা বাজার করার মতো। আর সহ-সম্পাদকরা সেগুলো আরও গুছিয়ে, চমৎকার একটা শিরোনাম দিয়ে ছাপার উপযোগী করেন, যেমনটি একজন রাঁধুনি ভালো খাবার রান্না করেন। এ কারণেই সংবাদপত্রের সেন্ট্রাল ডেস্ককে বলা হয় সংবাদের রসুইঘর বা রান্নাঘর। আবার কোনো ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো সংবাদ যেন ছাপা না হয় সেটি খুব সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হয় বলে সেন্ট্রাল ডেস্কের সহ-সম্পাদকদের সংবাদের পাহারাদারও বলা হয়। কিংবা বলা যায় সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা আর দায়িত্বশীলতার শেষ গেটকিপার।
সেন্ট্রাল ডেস্কের সার্বিক নেতৃত্ব দেন বার্তা সম্পাদক। তারপরে ক্রমান্বয়ে যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক, সহকারী বার্তা সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, সহ-সম্পাদক বা শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদকরা সংবাদের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করেন। বার্তা সম্পাদক অবশ্য কেবল সেন্ট্রাল ডেস্কেই সীমাবদ্ধ নন। বার্তা বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন ও তদারক করেন। পত্রিকার সংবাদ সংক্রান্ত সব সংস্করণের পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্বও তার।
তবে দেশ রূপান্তরে শুরুর প্রায় তিন বছর ছিলেন না কোনো বার্তা সম্পাদক। সেন্ট্রাল ডেস্ক চলেছে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবের দিকনির্দেশনায় আর ডেস্কের কর্মীদের চেষ্টায়। ২০২১ সালের শেষের দিকে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে আসেন শাহ আলম বাবুল। বার্তা কক্ষের অভিভাবক হিসেবে এখনো তিনি তার মেধা আর শ্রমের সর্বোচ্চটা দিয়ে যাচ্ছেন। যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক জুয়েল মোস্তাফিজ ভালোবাসার সবটুকু নিংড়ে দিচ্ছেন গত চার বছর ধরে। আরেক যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে আছেন অভিজ্ঞ ও সদালাপী মো. জাকির হোসেন। সহকারী বার্তা সম্পাদক আতিকুল আরেফিন তার বহুমুখী দক্ষতা দিয়ে দেশ রূপান্তরের ধারাবাহিক উন্নতিতে যেমন ভূমিকা রাখছেন তেমনি তার কাজ দেখে সমৃদ্ধ হচ্ছেন সহকর্মীরা। ডেস্কের সবচেয়ে সিনিয়র ও প্রাজ্ঞ মানুষটি মো. সাইফুর রহমান তারিক আছেন সিনিয়র কপি এডিটরের ভূমিকায়। ছোট ছোট ভুলগুলো অন্যদের চোখ এড়ালেও তিনি সেগুলো শুধরে সংবাদকে করছেন ফুলের মতো সুন্দর। জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আবু নোমান হাদীর (সজীব) একনিষ্ঠ সম্পাদনায় মফস্বলের ছোট্ট খবরও জায়গা করে নিচ্ছে প্রথম পাতায়। ঝড়-বাদল, দুর্ঘটনা বা রাজনীতির সংবাদের কম্পাইল করা দৈনন্দিন কাজ আরেক জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক তপু রায়হানের। সেন্ট্রাল ডেস্কের সবচেয়ে ছোট্ট সদস্য সহ-সম্পাদক নাসিমুল আহমেদ শুভ অবলীলায় করে দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক বড় বড় সব সংবাদের অনুবাদ।
সাধারণ চোখে প্রতিবেদক প্রতিবেদন লেখেন, আর পত্রিকায় ছাপা হয় বিষয়টা এমন মনে হতে পারে; কিন্তু একটি সংবাদ লেখার পর থেকে ছাপাখানায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে আরও অনেকগুলো ধাপ। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে সংবাদ সম্পাদনা। এটি হয় সেন্ট্রাল ডেস্কে। পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতাসহ দেশি-বিদেশি সব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ যেখানে সম্পাদনা করা হয় সেটিকে বলা হয় সেন্ট্রাল ডেস্ক। তবে সহ-সম্পাদকদের কাজকে অনেকে বলেন ‘থ্যাঙ্কসলেস জব’। কোনো সংবাদ ভালো হলে সব প্রশংসা পান সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক। তবে কোনো ত্রুটি থাকলেই প্রথম দায়টা পড়ে সহ-সম্পাদকের কাঁধে। কারণ সেন্ট্রাল ডেস্কের কর্মীদের যেহেতু সংবাদটি ছাপার যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব ছিল তাই ভুলের দায় তাকে নিতেই হবে। কখনো কখনো মারত্মক ভুলের কারণে চাকরিও চলে যেতে পারে। এই বিভাগের কর্মীরা প্রতিবেদকদের মতো অফিসের বাইরে সময় দিতে পারেন না, প্রেস ক্লাবে আড্ডা দিতে যেতে পারেন না, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনে সক্রিয় থাকতে পারেন না, পাঠকের কাছে নায়কও হয়ে উঠতে পারেন না।
দেশ রূপান্তরে চার বছরে নানা প্রতিবন্ধকতা আর সম্ভাবনার মধ্য দিয়েই এগিয়েছে সেন্ট্রাল ডেস্ক। সব বিভাগের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই কাজ করছে। প্রতিদিন বস্তুনিষ্ঠতা আর দায়িত্বশীলতার পরিচয় যেমন দিচ্ছে তেমনি নিচ্ছে পাঠও।
লেখক : দেশ রূপান্তরের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক
এক সৈনিক ঘোড়ার পিঠে যুদ্ধ করছেন বিরতিহীন। হঠাৎ তিনি খবর পান ভূখন্ড রক্ষায় তাকে যুদ্ধের প্রান্ত বদল করতে হবে। আর বিশ্রামের জন্য পাবেন এক রাত। সৈনিক ফিরে এলেন ক্যাম্পে। ঘোড়াটাকে আস্তাবলে ছেড়ে দিয়ে সহিসকে বললেন, ‘ঘোড়াটার পিঠে চাবুক মারতে থাকো।’ সৈনিক চলে যান তাঁবুতে। তার কথা মতো ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারতে থাকে সহিস। ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে স্পৃষ্ট হচ্ছে চাবুকের ফণা আর ঘোড়ার কণ্ঠ ছিঁড়ে আসছে চিঁহি চিঁহি শব্দ। চাবুক মারতে মারতে একসময় থেমে যায় সহিস। তাঁবুতে ছুটে গিয়ে সৈনিককে বলল, ‘আপনার মতো ঘোড়াটিও ক্লান্ত। তারও বিশ্রাম দরকার। ঘোড়াটার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি আর চাবুক মারতে পারছি না আমাকে ক্ষমা করুন।’ সৈনিক এবার তাঁবু থেকে বেরিয়ে ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারতে লাগলেন। সহিস সৈনিককে আবার বলল, ‘কেন ঘোড়াটার পিঠে চাবুক মারছেন? ঘোড়াটা ক্লান্ত!’ সৈনিক বললেন, ঘোড়াটা এতটাই ক্লান্ত যে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর কখনো জাগবে না। আমাদের ভূখন্ডটা ঠিক এই ঘোড়াটার মতোএকবার ঘুমিয়ে পড়লে আর জাগবে না। তাইতো তাকে চাবুক মেরে মেরে জাগিয়ে রাখছি।
অমিত হাবিব। দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। আমাদের অতি প্রিয় ‘অমিত দা’। দেশ রূপান্তর শুরুর আগে শুনিয়েছিলেন এই গল্প। দাদাকে বলেছিলাম, এই গল্পের ‘জন্মভূমি’ ‘ঘোড়া’ নাকি ‘সৈনিক’ কোনটা আপনি? সেদিন কোনো উত্তর দেননি, দেখেছি একটা সিগারেট ধরাতে...।
কালের কণ্ঠ ছাড়ার মধ্য দিয়ে সবার জানা হয়ে গিয়েছিল অমিত দা নতুন পত্রিকা করবেন। তিনি কিছু করা মানে প্রকৃত পক্ষেই ‘নতুন কিছু’। বুক পিঠ লাগিয়ে ‘ভোরের কাগজ’ সামলানো, ‘যায়যায়দিন’, ‘কালের কণ্ঠ’ তারই জাদুতে হয়েছে পাঠকপ্রিয়, পেয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে অমিত দার এই ‘নতুন কিছু’ করা নিয়ে সাংবাদিক মহলেও ছিল বিপুল আগ্রহ আর অপেক্ষা। তিনি নিজেও এই নতুন কিছু মঞ্চায়নের জন্য করেছেন দীর্ঘ অপেক্ষা। সময় খুব কঠিন ছিল। যে সময় দৈনিক কাগজের পাঠক কমছে, সেই সময় অমিত দার এই চ্যালেঞ্জ! যদিও তিনি কঠিন সময় নিয়ে মজা করে বলতেন, ‘কোথায় কঠিন সময় দেখলেন? ঘড়ি তো ঘুরছে।’
একদিন অমিত দার ফোন পেলাম। বললেন, বাড্ডায় আসেন। রাজধানীর বাড্ডায় দাদার ক্যাম্প অফিস। গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি একটা সাদা টেবিল। সেখানে একটা অ্যাশট্রে ছাড়া আর কিছুই নেই। মনে মনে ভাবলাম একটা জাতীয় পত্রিকা বেরুবে অথচ একটা সাদা কাগজ পর্যন্ত নেই। টেবিলের সামনে বসলাম। দাদা বললেন, ওই গল্পটা মনে আছে? এবার বলেন আপনি ওই গল্পের কোনটা হতে চান? ‘জন্মভূমি’ ‘ঘোড়া’ নাকি ‘সৈনিক’। দাদার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা ভালোভাবেই জানেন তার আহ্বান এমন এক আদালত, যার রায়ে আর আপিল চলে না! দাদার এই ধরনের আহ্বানে আমার মতো খুদে কর্মীও হয়ে উঠেছিল কিছু করার জন্য ক্ষুধার্ত। আর এভাবেই দেশ রূপান্তরের প্রতিটি কর্মী পেয়েছিলেন ‘অমিত হাবিব মন্ত্র’।
হয়ে গেল দেশ রূপান্তরের মাস্টহেড। দাদা মাস্টহেডের ওপরে লিখলেন ‘দায়িত্বশীলদের দৈনিক’। অনেক মাস্টহেডের ওপরে তো অনেক কথাই লেখা থাকে। কিন্তু অমিত দা ব্যতিক্রম। দায়িত্বশীলতা কেবল অক্ষরে নয়; থাকবে কাজে, তথ্যে, সংবাদ সরবরাহেও। ফলে প্রতিটি কর্মীর ভেতর এই দায়িত্বশীলতা প্রবলভাবে জাগিয়ে তুললেন তিনি।
সূচনালগ্নে অমিত দা’কে দেখেছি একা একা অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দাদা সেই প্রতিকূলতাকে পাকাপোক্ত কূল বানিয়ে ছেড়েছেন। আবার তার সামনে নাক বরাবর দেয়াল উঠেছে। অনেকেই হয়তো আছেন এমন দেয়াল টপকিয়ে পার পেয়েছেন। কিন্তু তিনি তো অমিত হাবিব। দেয়াল ভেঙে রাস্তা বানিয়ে তাকে পার হতে হয়েছে। ভয়ে ভয়ে দাদাকে বলেছি, ‘আর কত সইবেন দাদা?’ দাদা বলেছেন, ‘আপনারা একটুতেই এমন হয়ে যান। থোন তো দেখি; এই পৃথিবীতে আসার সময় আপনাকে তো কেউ কথা দেয়নি যে আপনার পথ হবে মসৃণ।’ দেশ রূপান্তর সম্ভবত প্রথম পেশাদার কাগজ যার প্রস্তুতির সময় ছিল সবচেয়ে কম। আত্মপ্রকাশের আগে মাত্র ১০ দিন ডামি হয়েছে। একইভাবে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীও ছিল কম। বলতে গেলে ১০ জনের জায়গায় ৭ জন। কেন দশের জায়গায় সাত? হয়তো সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু যেকোনো সীমাবদ্ধতাকে সীমাহীন শক্তিতে রূপান্তর করা ছিল অমিত দা’র ম্যাজিক। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশ রূপান্তর আত্মপ্রকাশ করল। সম্পাদক হয়েও বার্তা কক্ষে শুরু করলেন সাধারণ কর্মীর কাজও। ‘অমিত হাবিব মন্ত্রে’ উজ্জীবিত কর্মীরাও নিজের সাপ্তাহিক ছুটি বিসর্জন দিলেন। পুরো টিম হয়ে উঠল একটা নান্দনিক ক্যানভাস। কিছুদিন যেতে না যেতেই ‘অমিত হাবিব জাদুতে’ পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠল দেশ রূপান্তর।
আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি একজন বিস্ময়কর ম্যাজিশিয়ানকে। একদিন পেইজের ডামি নিয়ে তার কাছে গেলাম। দাঁড়িয়ে রইলাম প্রচন্ড ভয়ে। তিনি পেইজটা এক্সরে পেপারের মতো ধরলেন আর মুহূর্তেই দেখিয়ে দিলেন কোথায় ভুল আছে। এতগুলো অক্ষরের মধ্যে কীভাবে তিনি ভুল অক্ষরটি শনাক্ত করলেন। এই বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করেছি, ‘দাদা এত দ্রুত কীভাবে আপনার চোখে ধরা পড়ল ভুল।’ দাদা বলেছেন, ‘এটা আয়নাতে মুখ দেখার মতো। আপনি যখন আয়নায় মুখ দেখবেন তখন সবার আগে চোখে পড়বে আপনার মুখের স্পট। কাগজটা কিন্তু তাই। যখন দেখবেন তখন তাতে আপনার মুখ ভেসে উঠতে হবে।’
অমিত দা’র রুমে ঢোকার মুখে লালনের একটা স্কেচ আছে। দরজা সারাক্ষণ খোলা। সম্পাদকের রুম ছিল আমাদের লাইসিয়াম। সেখানে বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, খেলাধুলা, পেশাগত, ব্যক্তিগত, হেন বিষয় ছিল না যার ময়নাতদন্ত হতো না। তিনি শুধু দেশ রূপান্তরের নন; তিনি ছিলেন আমাদের অবিসংবাদিত অভিভাবক। হয়তো ভারাক্রান্ত হয়ে যে যখন তার সামনে দাঁড়িয়েছে। মুখ দেখে বুঝে গেছেন। যেই তিনি দুটো কথা বলেছেন, সেই ভারমুক্ত।
দেশ রূপান্তর সর্বস্তরে প্রশংসিত হচ্ছে। আমরাও উচ্ছ্বসিত। কিন্তু দাদা ব্যতিক্রম। উনি বলতেন ‘সন্তুষ্টি পাঠকের জন্য আমাদের জন্য নয়’। আবার যদি বলেছি, দাদা আজকের কাগজটা? এই বলে থামতেই দাদা বলেছেন, ‘ফুল ফোটা সূর্য ওঠার মতো পৃথিবীতে দৈনিক যা যা হয় অন্তত দৈনিক পত্রিকায় তা রোজ হওয়ার নয়।’
পাঁচে পা রাখল দেশ রূপান্তর। অমিত দা তার কোনো স্বপ্ন ব্যক্ত করতেন না। তা কাজে প্রমাণ করেছেন আমৃত্যু। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশ রূপান্তরের জন্ম। এর প্রায় ১৫ মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৮ মার্চ এসে পড়ে করোনা মহামারী। যা ভয়াবহ আকারে ছিল অন্তত দুই বছর। ফলে অন্যসব কাগজের মতো দেশ রূপান্তরের ঘাড়েও পড়ে খড়গ। কিন্তু দেশ রূপান্তর তো ছিল মাত্র ১৫ মাসের উজ্জীবিত শিশু। কী হবে কাগজটির। শুরু হলো অমিত দা’র অন্য মাত্রার যুদ্ধ। জন্মভূমির মতো বুকে আগলে রাখলেন দেশ রূপান্তর। কর্মীদের বেতন অক্ষুন্ন রেখে পাশে থাকলেন পিতৃরূপে। জীবনভর ভেতরে ভেতরে সয়েছেন অনেক। আমাদের বুঝতে দেননি কিছুই...।
দেশ রূপান্তরের প্রথম সংখ্যায় অমিত দা লিখেছিলেন ‘আমার কিছু কথা আছে’। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি, শুরুর দিন থেকেই আমাদের চেষ্টা চলমান থাকবে। পাঠকরা আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় শক্তি ও সাহস জোগাবেন।’ স্যালুট মহান কারিগর। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনার উত্তরসূরিরা আপনার আদর্শে আপনার দেশ রূপান্তরকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
লেখক : কবি ও দেশ রূপান্তরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমার সাপ্তাহিক ছুটি। ঘুমাচ্ছিলাম; এই যুগে দিনের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মোবাইল সাইলেন্ট করতে হয়। আর তাই অফিস থেকে ৩০ বারের মতো ফোন করেও আমাকে পাওয়া যায়নি। যখন পাওয়া গেল তখন ঘুম গেল। মাথায় ভেঙে পড়ল আকাশ। অমিত দা, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিব স্ট্রোক করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে। কেউই সঠিক অবস্থা বলছিল না। এরকম সময়ে যখন কেউ কিছু বলতে চায় না, তখন বুঝে নিতে হয়। বুঝলাম অবস্থা সংকটাপন্ন। শঙ্কাকে সম্ভাবনায় রূপ নিতে পরের এক সপ্তাহ প্রাণান্ত চেষ্টা চলল। শেষ পর্যন্ত পারা গেল না। দাদা চললেন চূড়ান্তে। আর আমাকে এবং দেশ রূপান্তরকে ফেলে দিয়ে গেলেন, যাকে বলে অকূল পাথারে।
যোগ দিয়েছি এখনো বছর হয়নি। তখন ছয় মাসের মতো। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই হাল ধরতে হয়। কিন্তু এই সময়ে, যখন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের বিরাট ছায়া সরে গেছে, যখন চারদিকে বেদনা আর হাহাকারের হাওয়া। সেই হাওয়ায় একরকম হাওয়ার বিপরীতে শুরু হলো চলা। চলতে চলতে আজ ছয় মাস। সময় গড়িয়ে চলে এসেছে দেশ রূপান্তরের পঞ্চম বর্ষে পদার্পণের দিন। পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
দেশ রূপান্তরের ডিজিটাল শাখা আছে, আছে সক্রিয় অনলাইনও। তবু মূল পরিচয় ছাপা পত্রিকায়। এবং সেই ছাপা পত্রিকার দিন আছে, না চলে গেছে তা নিয়ে খুব বিতর্ক চলে চারদিকে। আমি সেই বিতর্কে অংশ নিই না। কারণ, নিশ্চিতভাবে জানি, ছাপা পত্রিকার দিন যায়নি। আছে। থাকবেও। কিন্তু সেই থাকার যে পথটা আছে সেটাকে অনুসরণ করতে হবে আমাদের। পুরনো দিনের গল্প বলে কিংবা দিন চলে গেছে বলে হাহাকারের কোনোটারই পক্ষে নই আমি। বাস্তবতা দেখাচ্ছে ছাপা পত্রিকায় নানা সংকটের দিক। কাগজের মূল্য পারলে সোনার মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে, ওদিকে মানুষ অনলাইনে দ্রুত সব পেয়ে যায়। ফেইসবুক-সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যালেঞ্জ চারদিকে। মানে সব মিলিয়ে সংকটের ছবি। কিন্তু সংকটের মধ্যেই সম্ভাবনাও থাকে। লুকিয়ে থাকে, এই যা...। সেই লুকানো সম্ভাবনা নিয়েই কাজ করতে হবে। আমরা করছিও। অনলাইন-টেলিভিশনপুষ্ট যুগে মনে রাখতে হবে পুরনো ধাঁচের পত্রিকায় চলবে না। নতুন ধরন লাগবে। অনলাইন তাৎক্ষণিকতার জন্য সময় পায় না, ভিজ্যুয়াল মিডিয়া আয়োজনজনিত বিস্তৃতির জন্য অনেক জায়গায় ঢুকতে পারে না, আর তাই ফাঁকা জায়গা আছে প্রিন্ট মিডিয়ার। সেই জায়গার চর্চা রাখতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে, এত লড়াইয়ের মধ্যে টিকে থাকার দরকারটা কী! যখন আমাদের অনলাইন-ডিজিটাল সব আছে। দরকার আছে। কারণ, ঐতিহ্যের কারণে, সংস্কতির কারণে এখনো এ মাধ্যমেই সম্ভবত সাংবাদিকতাটা বেশি হয় সবচেয়ে। গত ছয় মাস খেয়াল করুন। দেখবেন, এর মধ্যেও আলোচনায় আসার মতো সব খবরের জোগান পত্রিকা থেকেই এসেছে। আর তাই এ মাধ্যমকে টিকতে হবে। মানুষের প্রয়োজনে। সাংবাদিকতার স্বার্থে। নিজের সাংবাদিকতার মূল জায়গা ছিল খেলা। খেলা সবসময় দেখায় জীবনের দুই পিঠ বড় কাছাকাছি। আনন্দ, পরমুহূর্তেই বিষাদ। আর তাই আশঙ্কার মধ্যেই দেখি আশা। সেই আশা নিয়েই চলছি আমরা। কিছু পরিবর্তনের ছায়া এবং ছোঁয়াও এরই মধ্যে দেখেছেন নিশ্চয়ই। দেশ রূপান্তর সম্পর্কে সাধারণ যে বিশ্বাস, এরা কোনো দিকে হেলে নেই। সত্যিই আমরা কোনো দিকে হেলে নেই। আমরা নতও নই। বাস্তবতাজনিত কিছু সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে। সেই সীমায় থেকেও সাহসের সঙ্গে সাংবাদিকতার চেষ্টাই করে চলছি। শিরোনাম দেশ রূপান্তরের বড় শক্তি। সেই শক্তির চর্চা যে ভালোই হয়, সেটা আপনাদের প্রতিক্রিয়াতেই বুঝতে পারি। অনলাইন-ডিজিটাল নিয়ে কিছু চাহিদা ছিল। পঞ্চম বর্ষে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আজই উদ্বোধন হচ্ছে নতুন চেহারার ওয়েবসাইট। ডিজিটাল অঙ্গনেও তৎপরতা অনেক বেশি। পাতা বিন্যাসেও বদল আসবে। প্রতিদিন ফিচার থাকবে। যোগ হবে সাহিত্য পাতা। এবং আরও অনেক কিছু। জোড়া পাতা প্রচ্ছদ, এক পাতার মধ্যে দুই পাতা করা এসবে নতুনের ইঙ্গিত দেখেছেন। পুরোটা দেখেননি। আসছে বছর দেখবেন।
আমাদের পৃষ্ঠপোষক রূপায়ণ গ্রুপ। জানা আছে নিশ্চয়ই। তাদের আবাসন ব্যবসা, এটাও বেশিরভাগ মানুষ জানে। কিন্তু অনেকেই বোধহয় জানেন না, রূপায়ণ উত্তরা সিটি প্রকল্পটা কী অসীম সৌন্দর্যের। বাংলাদেশের ভেতরে যে এমন সুন্দর আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে পারে, দেখে বিশ্বাস করতে পারিনি। বলছি এ জন্য যে, রূপায়ণ গ্রুপ খুব আওয়াজ না দিয়েও অসাধারণ সব কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, দেশ রূপান্তরও তেমনি একটি প্রকল্প, প্রচার-প্রচারণায় হয়তো আকাশছোঁয়া নয়, কিন্তু চরিত্রে-মানে সর্বোচ্চ ধাপে। আর এর নেপথ্যে গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটা বাংলাদেশের মতো দেশে খুব সহজ নয়, সঠিক সাংবাদিকতা করতে গেলে বন্ধু হারাতে হয় অনেক ক্ষেত্রে, এই কঠিন পথেও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন অক্লান্তে। ছায়া হয়ে আছেন প্রকাশক ও গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল এবং রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার। আর সঙ্গে আছে আমার একদল উদ্যমী সহকর্মী, যারা নতুন পথে চলে আনতে চায় নতুন দিন।
তাদের নিয়ে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রা। এই যাত্রায় সঙ্গী হোন। ঠকবেন না। কারণ, অনেকেই যেখানে দেখছে সংকট, আমরা দেখছি সম্ভাবনা। কেউ কেউ পাচ্ছেন ভয়। আমরা ভয়ের মধ্যেই দেখতে পাই জয়।
রিপোর্টিং বিভাগ একটি পত্রিকার প্রাণ। রিপোর্টিং টিম ঠিক থাকলে পত্রিকা ব্যবস্থাপনায় নির্ভার থাকা যায়, গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হয়। তবে অন্যান্য সব বিভাগও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সব বিভাগের যথাযথ কাজ আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই একটা পত্রিকার সাফল্য আসে।
আমাদের যাত্রা শুরুর রিপোর্টিং টিমের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল আমরা প্রায় শতভাগ রিপোর্টার একে অপরকে আগে থেকেই চিনতাম। বিভিন্ন সময় কেউ না কেউ কোনো না কোনো পত্রিকায় একসঙ্গে কাজ করেছি। ফলে বোঝাপড়ার বিষয়টি আমাদের জন্য সহজ ছিল। সাবলীল ছিল আলাপচারিতা, তথ্য লেনদেন, টিম পরিচালনা। কঠোর বিধিনিষেধে কখনোই পড়তে হয়নি আমাদের।
রিপোর্টিং বিভাগ হচ্ছে খোলা হাটের মতো। রিপোর্টাররা হাটুরে। বাজার হাট মাঠ ঘুরে ঘুরে তথ্য আনেন। লেখেন। কী দেখলেন, কী অভিজ্ঞতা হলো, প্রতিদিন সেসব ঘটনা অকপটে তুলে ধরেন, গল্প করেন। এ ওর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন। হাসি-ঠাট্টা রাগ সব চলে এখানে। যতক্ষণ রিপোর্টাররা অফিসে থাকেন, ততক্ষণ প্রাণবন্ত থাকে অফিসটা। দিনের পর দিন, মাস, বছর রিপোর্টাররা হয়ে ওঠেন পরিবার, স্বজন, বন্ধু। রিপোর্টাররা ভালো থাকলে অফিসটা ভালো থাকে, শান্তি লাগে। হাসিমুখ রিপোর্টিং বিভাগ, আলো করে রাখে অফিস, একটি পত্রিকা।
সবশেষে বলতেই হয় দেশ রূপান্তরের এই যে সামনে তরতর করে এগিয়ে চলার ফ্রন্ট লাইনরা মাসে রিপোর্টাররা। কারণ এই টিমে আছেন অন্ততপক্ষে দেশের ১০ জন সেরা রিপোর্টার। যাদের নাম না বললেই নয়। সচিবালয় বিটের এই সময়ের সেরা রিপোর্টার আশরাফুল হক রাজীব, যিনি সব সময় এই অঙ্গনের একেবারে ভিতরের রিপোর্টগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে আনেন। আরও আছেন, ক্রাইম বিটের এই সময়ে আলোচিত রিপোর্টার সারোয়ার আলম। দিন রাত সারাক্ষাণ যিনি দেশ রূপান্তরকে নিয়ে ভাবেন। অনেকগুলো ব্রেকিং নিউজ দিয়ে দেশ রূপান্তরকে পাঠক জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিটের রিপোর্টার পাভেল হায়দার চৌধুরী। যিনি আগাম খবর দিয়ে আমাদের পাঠকদের অন্য পত্রিকার পাঠকের কাছ থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রেখেছেন। বিজনেস বিটের কর্ণধার আলতাফ মাসুদ, খুবই ছোট টিম নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু পাঠককে বুঝতে দেননি। অর্থনীতি বিষয়ে বিশ্লষন করেন চমৎকার। রিপোর্টে রয়েছে ধার। শিক্ষায় শরীফুল আলম সুমন এখন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের জন্য রীতিমতো আতঙ্ক। আর তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের কথা না বললেই নয়। যার বালিশের উত্তাপ নিয়ে আমি এখনো হাটে মাঠে ঘাটে প্রতিক্রিয়া পাই। ওই যে, বালিশ কাণ্ডের দেশ রূপান্তর। আর আদালতের উৎপল। সাদা মাটা মিষ্টি ব্যবহারের উৎপল আদালত পাড়ার জট আর মানুষের হয়রানি নিয়ে রিপোর্ট করে এই বিটের সেরা হয়ে উঠছেন। আমাদের সাথে আছেন অভিজ্ঞ রিপোর্টার প্রতীক ইজাজ। বিএনপি বিটের রেজাউল করিম লাভলু, বিএনপির সব পরিকল্পনা আগে আগেই তুলে ধরেন।
প্রতিশ্রুতিশীল এবং উদীয়মান রিপোর্টার ইমন রহমান, যার ধ্যানজ্ঞান সাংবাদিকতা। শুরু থেকেই একই ছন্দে কাজ করছে। মজ্জায় তার সাংবাদিকতার বারুদ। অর্থনীতি বিটের এমদাদ হোসেন এসেই কয়েকটা আলোচিত রিপোর্ট করেছেন। অর্থনীতির বিটের সদ্য যুক্ত হওয়া আনাস ভূঁইয়াও কম নয়। এসেই পাঠকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কম নয় ফারজানা লাবনীও কম নয়। এনবিআরে শততে শত। আমাদের টিমে আছে রিয়াজ হোসেন। মেধাবী রিপোর্টার, নীরবে কাজ করেন তবে আওয়াজটা পাঠকের কাছে অনেক বড়। সানমুন আহমেদ বয়সে তরুণ হলেও কাজে কোনো আলস্য নেই। যাই করতে দেওয়া হয় যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সে রিপোর্ট যান করে। আছে পাঠান সোহাগ বুঝে শুনে কাজ করে। এটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হওয়ার প্রথম শর্ত। টিমের তাওসীফ মাইমুন। বাজারদর নিয়ে সব সময় চিন্তা। সবার আগে পাঠকদের নিত্যপন্যের দাম বাড়া কমার খবর দিয়ে অন্য পত্রিকার বাঘা বাঘা রিপোর্টারদের কাৎ করে ফেলে। সব মিলিয়ে এই টিমটা ছোট হলেও ঝাক্কাস।
লেখক : দেশ রূপান্তরের প্রধান প্রতিবেদক ও বিশেষ প্রতিনিধি
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।