
দৈনিক প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকা শত শত সংবাদকর্মীর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। সংবাদকর্মীদের পালা করে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হয়। পাঠকের চাহিদা পূরণে সরকারি ছুটির দিনেও বিশেষ ব্যবস্থায় পত্রিকা প্রকাশিত হয়। জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট সাংবাদিকদের নামে প্রকাশিত হয়। কিছু প্রকাশিত হয় নাম ছাড়া নিজস্ব প্রতিবেদক বা ডেস্ক রিপোর্ট হিসেবে। পাঠক ফ্রন্টলাইনার হিসেবে সাংবাদিকদের নামের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু যে কোনো পত্রিকার প্রকাশনার নেপথ্যে প্রশাসন, এইচআর, হিসাব, প্রেস, সার্কুলেশন ও আইটি বিভাগের সংবাদকর্মীদের বিস্তৃত কর্মতৎপরতা সাধারণত পাঠকের আড়ালেই থেকে যায়। কিন্তু এসব সাধারণ বিভাগের যথাযথ দায়িত্বপালন সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ এবং বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, মাসিক বেতন-ভাতা, নিয়োগ, সংবাদকর্মীদের কাজের মূল্যায়ন, বিল-ভাউচার সমন্বয়, আইটি সম্পর্কিত কাজের পদ্ধতির উন্নয়ন ও পরিচালনা, আর্থিক বিষয়াদির হিসাব-নিকাশ, বকেয়া বিল আদায়, বাৎসরিক লাভ-ক্ষতির হিসাব, নিউজপ্রিন্ট, কালি, কেমিক্যাল, ছাপার প্লেটসহ মুদ্রণ সামগ্রী সংগ্রহ, ছাপা মেশিন পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণ ও মানসম্মত ছাপা নিশ্চিতকরণ, এজেন্ট এবং হকারদের মাধ্যমে পত্রিকা পাঠকের হাতে পৌঁছানো ও পত্রিকার বিলের অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ এসব সাধারণ বিভাগের সংবাদকর্মীরা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে থাকেন। কর্মদিবসের প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় কর্মস্থলে কেটে যায়। একত্রে কাজের সুবাদে অনেক সহকর্মীই বন্ধু বা পারিবারিক সদস্যদের মতো হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, কর্মব্যস্ত জীবন, নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষৎ পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ, পেশাগত প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ইত্যাদি বিষয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হয়। দিন, মাস, বছর কেটে যায়। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এসে যায়। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংবাদকর্মীদের আলোচনায় বর্তমানের এগিয়ে চলা এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা ও নতুনভাবে কাজের অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।
শুরু থেকেই প্রশাসন বিভাগের দায়িত্বে আছেন ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। আছেন আরেকজন ব্যবস্থাপক ইউসুফ কবির এবং এইচআর বিভাগের একমাত্র কর্মী আমি নিজেই, আছি সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে। গুরুত্বপূর্ণ হিসাব বিভাগের প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন। সঙ্গে আছেন সিনিয়র নির্বাহী আল-আমিন। এই তিন বিভাগের পাশাপাশি সার্কুলেশন বিভাগও নেপথ্যে থেকে কাজ করে পত্রিকার। এই বিভাগে মোট কর্মী পাঁচজন। সার্কুলেশন বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম। বাকিরা হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. কবির হোসেন সোহেল, এস. এম. মঞ্জুরুল আলম ফারুক ও মিজানুর রহমান খান।
লেখক : সহকারী ব্যবস্থাপক, দেশ রূপান্তর
এক সৈনিক ঘোড়ার পিঠে যুদ্ধ করছেন বিরতিহীন। হঠাৎ তিনি খবর পান ভূখন্ড রক্ষায় তাকে যুদ্ধের প্রান্ত বদল করতে হবে। আর বিশ্রামের জন্য পাবেন এক রাত। সৈনিক ফিরে এলেন ক্যাম্পে। ঘোড়াটাকে আস্তাবলে ছেড়ে দিয়ে সহিসকে বললেন, ‘ঘোড়াটার পিঠে চাবুক মারতে থাকো।’ সৈনিক চলে যান তাঁবুতে। তার কথা মতো ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারতে থাকে সহিস। ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে স্পৃষ্ট হচ্ছে চাবুকের ফণা আর ঘোড়ার কণ্ঠ ছিঁড়ে আসছে চিঁহি চিঁহি শব্দ। চাবুক মারতে মারতে একসময় থেমে যায় সহিস। তাঁবুতে ছুটে গিয়ে সৈনিককে বলল, ‘আপনার মতো ঘোড়াটিও ক্লান্ত। তারও বিশ্রাম দরকার। ঘোড়াটার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি আর চাবুক মারতে পারছি না আমাকে ক্ষমা করুন।’ সৈনিক এবার তাঁবু থেকে বেরিয়ে ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারতে লাগলেন। সহিস সৈনিককে আবার বলল, ‘কেন ঘোড়াটার পিঠে চাবুক মারছেন? ঘোড়াটা ক্লান্ত!’ সৈনিক বললেন, ঘোড়াটা এতটাই ক্লান্ত যে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর কখনো জাগবে না। আমাদের ভূখন্ডটা ঠিক এই ঘোড়াটার মতোএকবার ঘুমিয়ে পড়লে আর জাগবে না। তাইতো তাকে চাবুক মেরে মেরে জাগিয়ে রাখছি।
অমিত হাবিব। দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। আমাদের অতি প্রিয় ‘অমিত দা’। দেশ রূপান্তর শুরুর আগে শুনিয়েছিলেন এই গল্প। দাদাকে বলেছিলাম, এই গল্পের ‘জন্মভূমি’ ‘ঘোড়া’ নাকি ‘সৈনিক’ কোনটা আপনি? সেদিন কোনো উত্তর দেননি, দেখেছি একটা সিগারেট ধরাতে...।
কালের কণ্ঠ ছাড়ার মধ্য দিয়ে সবার জানা হয়ে গিয়েছিল অমিত দা নতুন পত্রিকা করবেন। তিনি কিছু করা মানে প্রকৃত পক্ষেই ‘নতুন কিছু’। বুক পিঠ লাগিয়ে ‘ভোরের কাগজ’ সামলানো, ‘যায়যায়দিন’, ‘কালের কণ্ঠ’ তারই জাদুতে হয়েছে পাঠকপ্রিয়, পেয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে অমিত দার এই ‘নতুন কিছু’ করা নিয়ে সাংবাদিক মহলেও ছিল বিপুল আগ্রহ আর অপেক্ষা। তিনি নিজেও এই নতুন কিছু মঞ্চায়নের জন্য করেছেন দীর্ঘ অপেক্ষা। সময় খুব কঠিন ছিল। যে সময় দৈনিক কাগজের পাঠক কমছে, সেই সময় অমিত দার এই চ্যালেঞ্জ! যদিও তিনি কঠিন সময় নিয়ে মজা করে বলতেন, ‘কোথায় কঠিন সময় দেখলেন? ঘড়ি তো ঘুরছে।’
একদিন অমিত দার ফোন পেলাম। বললেন, বাড্ডায় আসেন। রাজধানীর বাড্ডায় দাদার ক্যাম্প অফিস। গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি একটা সাদা টেবিল। সেখানে একটা অ্যাশট্রে ছাড়া আর কিছুই নেই। মনে মনে ভাবলাম একটা জাতীয় পত্রিকা বেরুবে অথচ একটা সাদা কাগজ পর্যন্ত নেই। টেবিলের সামনে বসলাম। দাদা বললেন, ওই গল্পটা মনে আছে? এবার বলেন আপনি ওই গল্পের কোনটা হতে চান? ‘জন্মভূমি’ ‘ঘোড়া’ নাকি ‘সৈনিক’। দাদার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা ভালোভাবেই জানেন তার আহ্বান এমন এক আদালত, যার রায়ে আর আপিল চলে না! দাদার এই ধরনের আহ্বানে আমার মতো খুদে কর্মীও হয়ে উঠেছিল কিছু করার জন্য ক্ষুধার্ত। আর এভাবেই দেশ রূপান্তরের প্রতিটি কর্মী পেয়েছিলেন ‘অমিত হাবিব মন্ত্র’।
হয়ে গেল দেশ রূপান্তরের মাস্টহেড। দাদা মাস্টহেডের ওপরে লিখলেন ‘দায়িত্বশীলদের দৈনিক’। অনেক মাস্টহেডের ওপরে তো অনেক কথাই লেখা থাকে। কিন্তু অমিত দা ব্যতিক্রম। দায়িত্বশীলতা কেবল অক্ষরে নয়; থাকবে কাজে, তথ্যে, সংবাদ সরবরাহেও। ফলে প্রতিটি কর্মীর ভেতর এই দায়িত্বশীলতা প্রবলভাবে জাগিয়ে তুললেন তিনি।
সূচনালগ্নে অমিত দা’কে দেখেছি একা একা অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দাদা সেই প্রতিকূলতাকে পাকাপোক্ত কূল বানিয়ে ছেড়েছেন। আবার তার সামনে নাক বরাবর দেয়াল উঠেছে। অনেকেই হয়তো আছেন এমন দেয়াল টপকিয়ে পার পেয়েছেন। কিন্তু তিনি তো অমিত হাবিব। দেয়াল ভেঙে রাস্তা বানিয়ে তাকে পার হতে হয়েছে। ভয়ে ভয়ে দাদাকে বলেছি, ‘আর কত সইবেন দাদা?’ দাদা বলেছেন, ‘আপনারা একটুতেই এমন হয়ে যান। থোন তো দেখি; এই পৃথিবীতে আসার সময় আপনাকে তো কেউ কথা দেয়নি যে আপনার পথ হবে মসৃণ।’ দেশ রূপান্তর সম্ভবত প্রথম পেশাদার কাগজ যার প্রস্তুতির সময় ছিল সবচেয়ে কম। আত্মপ্রকাশের আগে মাত্র ১০ দিন ডামি হয়েছে। একইভাবে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীও ছিল কম। বলতে গেলে ১০ জনের জায়গায় ৭ জন। কেন দশের জায়গায় সাত? হয়তো সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু যেকোনো সীমাবদ্ধতাকে সীমাহীন শক্তিতে রূপান্তর করা ছিল অমিত দা’র ম্যাজিক। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশ রূপান্তর আত্মপ্রকাশ করল। সম্পাদক হয়েও বার্তা কক্ষে শুরু করলেন সাধারণ কর্মীর কাজও। ‘অমিত হাবিব মন্ত্রে’ উজ্জীবিত কর্মীরাও নিজের সাপ্তাহিক ছুটি বিসর্জন দিলেন। পুরো টিম হয়ে উঠল একটা নান্দনিক ক্যানভাস। কিছুদিন যেতে না যেতেই ‘অমিত হাবিব জাদুতে’ পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠল দেশ রূপান্তর।
আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি একজন বিস্ময়কর ম্যাজিশিয়ানকে। একদিন পেইজের ডামি নিয়ে তার কাছে গেলাম। দাঁড়িয়ে রইলাম প্রচন্ড ভয়ে। তিনি পেইজটা এক্সরে পেপারের মতো ধরলেন আর মুহূর্তেই দেখিয়ে দিলেন কোথায় ভুল আছে। এতগুলো অক্ষরের মধ্যে কীভাবে তিনি ভুল অক্ষরটি শনাক্ত করলেন। এই বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করেছি, ‘দাদা এত দ্রুত কীভাবে আপনার চোখে ধরা পড়ল ভুল।’ দাদা বলেছেন, ‘এটা আয়নাতে মুখ দেখার মতো। আপনি যখন আয়নায় মুখ দেখবেন তখন সবার আগে চোখে পড়বে আপনার মুখের স্পট। কাগজটা কিন্তু তাই। যখন দেখবেন তখন তাতে আপনার মুখ ভেসে উঠতে হবে।’
অমিত দা’র রুমে ঢোকার মুখে লালনের একটা স্কেচ আছে। দরজা সারাক্ষণ খোলা। সম্পাদকের রুম ছিল আমাদের লাইসিয়াম। সেখানে বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, খেলাধুলা, পেশাগত, ব্যক্তিগত, হেন বিষয় ছিল না যার ময়নাতদন্ত হতো না। তিনি শুধু দেশ রূপান্তরের নন; তিনি ছিলেন আমাদের অবিসংবাদিত অভিভাবক। হয়তো ভারাক্রান্ত হয়ে যে যখন তার সামনে দাঁড়িয়েছে। মুখ দেখে বুঝে গেছেন। যেই তিনি দুটো কথা বলেছেন, সেই ভারমুক্ত।
দেশ রূপান্তর সর্বস্তরে প্রশংসিত হচ্ছে। আমরাও উচ্ছ্বসিত। কিন্তু দাদা ব্যতিক্রম। উনি বলতেন ‘সন্তুষ্টি পাঠকের জন্য আমাদের জন্য নয়’। আবার যদি বলেছি, দাদা আজকের কাগজটা? এই বলে থামতেই দাদা বলেছেন, ‘ফুল ফোটা সূর্য ওঠার মতো পৃথিবীতে দৈনিক যা যা হয় অন্তত দৈনিক পত্রিকায় তা রোজ হওয়ার নয়।’
পাঁচে পা রাখল দেশ রূপান্তর। অমিত দা তার কোনো স্বপ্ন ব্যক্ত করতেন না। তা কাজে প্রমাণ করেছেন আমৃত্যু। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশ রূপান্তরের জন্ম। এর প্রায় ১৫ মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৮ মার্চ এসে পড়ে করোনা মহামারী। যা ভয়াবহ আকারে ছিল অন্তত দুই বছর। ফলে অন্যসব কাগজের মতো দেশ রূপান্তরের ঘাড়েও পড়ে খড়গ। কিন্তু দেশ রূপান্তর তো ছিল মাত্র ১৫ মাসের উজ্জীবিত শিশু। কী হবে কাগজটির। শুরু হলো অমিত দা’র অন্য মাত্রার যুদ্ধ। জন্মভূমির মতো বুকে আগলে রাখলেন দেশ রূপান্তর। কর্মীদের বেতন অক্ষুন্ন রেখে পাশে থাকলেন পিতৃরূপে। জীবনভর ভেতরে ভেতরে সয়েছেন অনেক। আমাদের বুঝতে দেননি কিছুই...।
দেশ রূপান্তরের প্রথম সংখ্যায় অমিত দা লিখেছিলেন ‘আমার কিছু কথা আছে’। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি, শুরুর দিন থেকেই আমাদের চেষ্টা চলমান থাকবে। পাঠকরা আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় শক্তি ও সাহস জোগাবেন।’ স্যালুট মহান কারিগর। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনার উত্তরসূরিরা আপনার আদর্শে আপনার দেশ রূপান্তরকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
লেখক : কবি ও দেশ রূপান্তরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমার সাপ্তাহিক ছুটি। ঘুমাচ্ছিলাম; এই যুগে দিনের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মোবাইল সাইলেন্ট করতে হয়। আর তাই অফিস থেকে ৩০ বারের মতো ফোন করেও আমাকে পাওয়া যায়নি। যখন পাওয়া গেল তখন ঘুম গেল। মাথায় ভেঙে পড়ল আকাশ। অমিত দা, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিব স্ট্রোক করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে। কেউই সঠিক অবস্থা বলছিল না। এরকম সময়ে যখন কেউ কিছু বলতে চায় না, তখন বুঝে নিতে হয়। বুঝলাম অবস্থা সংকটাপন্ন। শঙ্কাকে সম্ভাবনায় রূপ নিতে পরের এক সপ্তাহ প্রাণান্ত চেষ্টা চলল। শেষ পর্যন্ত পারা গেল না। দাদা চললেন চূড়ান্তে। আর আমাকে এবং দেশ রূপান্তরকে ফেলে দিয়ে গেলেন, যাকে বলে অকূল পাথারে।
যোগ দিয়েছি এখনো বছর হয়নি। তখন ছয় মাসের মতো। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই হাল ধরতে হয়। কিন্তু এই সময়ে, যখন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের বিরাট ছায়া সরে গেছে, যখন চারদিকে বেদনা আর হাহাকারের হাওয়া। সেই হাওয়ায় একরকম হাওয়ার বিপরীতে শুরু হলো চলা। চলতে চলতে আজ ছয় মাস। সময় গড়িয়ে চলে এসেছে দেশ রূপান্তরের পঞ্চম বর্ষে পদার্পণের দিন। পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
দেশ রূপান্তরের ডিজিটাল শাখা আছে, আছে সক্রিয় অনলাইনও। তবু মূল পরিচয় ছাপা পত্রিকায়। এবং সেই ছাপা পত্রিকার দিন আছে, না চলে গেছে তা নিয়ে খুব বিতর্ক চলে চারদিকে। আমি সেই বিতর্কে অংশ নিই না। কারণ, নিশ্চিতভাবে জানি, ছাপা পত্রিকার দিন যায়নি। আছে। থাকবেও। কিন্তু সেই থাকার যে পথটা আছে সেটাকে অনুসরণ করতে হবে আমাদের। পুরনো দিনের গল্প বলে কিংবা দিন চলে গেছে বলে হাহাকারের কোনোটারই পক্ষে নই আমি। বাস্তবতা দেখাচ্ছে ছাপা পত্রিকায় নানা সংকটের দিক। কাগজের মূল্য পারলে সোনার মূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে, ওদিকে মানুষ অনলাইনে দ্রুত সব পেয়ে যায়। ফেইসবুক-সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যালেঞ্জ চারদিকে। মানে সব মিলিয়ে সংকটের ছবি। কিন্তু সংকটের মধ্যেই সম্ভাবনাও থাকে। লুকিয়ে থাকে, এই যা...। সেই লুকানো সম্ভাবনা নিয়েই কাজ করতে হবে। আমরা করছিও। অনলাইন-টেলিভিশনপুষ্ট যুগে মনে রাখতে হবে পুরনো ধাঁচের পত্রিকায় চলবে না। নতুন ধরন লাগবে। অনলাইন তাৎক্ষণিকতার জন্য সময় পায় না, ভিজ্যুয়াল মিডিয়া আয়োজনজনিত বিস্তৃতির জন্য অনেক জায়গায় ঢুকতে পারে না, আর তাই ফাঁকা জায়গা আছে প্রিন্ট মিডিয়ার। সেই জায়গার চর্চা রাখতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে, এত লড়াইয়ের মধ্যে টিকে থাকার দরকারটা কী! যখন আমাদের অনলাইন-ডিজিটাল সব আছে। দরকার আছে। কারণ, ঐতিহ্যের কারণে, সংস্কতির কারণে এখনো এ মাধ্যমেই সম্ভবত সাংবাদিকতাটা বেশি হয় সবচেয়ে। গত ছয় মাস খেয়াল করুন। দেখবেন, এর মধ্যেও আলোচনায় আসার মতো সব খবরের জোগান পত্রিকা থেকেই এসেছে। আর তাই এ মাধ্যমকে টিকতে হবে। মানুষের প্রয়োজনে। সাংবাদিকতার স্বার্থে। নিজের সাংবাদিকতার মূল জায়গা ছিল খেলা। খেলা সবসময় দেখায় জীবনের দুই পিঠ বড় কাছাকাছি। আনন্দ, পরমুহূর্তেই বিষাদ। আর তাই আশঙ্কার মধ্যেই দেখি আশা। সেই আশা নিয়েই চলছি আমরা। কিছু পরিবর্তনের ছায়া এবং ছোঁয়াও এরই মধ্যে দেখেছেন নিশ্চয়ই। দেশ রূপান্তর সম্পর্কে সাধারণ যে বিশ্বাস, এরা কোনো দিকে হেলে নেই। সত্যিই আমরা কোনো দিকে হেলে নেই। আমরা নতও নই। বাস্তবতাজনিত কিছু সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে। সেই সীমায় থেকেও সাহসের সঙ্গে সাংবাদিকতার চেষ্টাই করে চলছি। শিরোনাম দেশ রূপান্তরের বড় শক্তি। সেই শক্তির চর্চা যে ভালোই হয়, সেটা আপনাদের প্রতিক্রিয়াতেই বুঝতে পারি। অনলাইন-ডিজিটাল নিয়ে কিছু চাহিদা ছিল। পঞ্চম বর্ষে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আজই উদ্বোধন হচ্ছে নতুন চেহারার ওয়েবসাইট। ডিজিটাল অঙ্গনেও তৎপরতা অনেক বেশি। পাতা বিন্যাসেও বদল আসবে। প্রতিদিন ফিচার থাকবে। যোগ হবে সাহিত্য পাতা। এবং আরও অনেক কিছু। জোড়া পাতা প্রচ্ছদ, এক পাতার মধ্যে দুই পাতা করা এসবে নতুনের ইঙ্গিত দেখেছেন। পুরোটা দেখেননি। আসছে বছর দেখবেন।
আমাদের পৃষ্ঠপোষক রূপায়ণ গ্রুপ। জানা আছে নিশ্চয়ই। তাদের আবাসন ব্যবসা, এটাও বেশিরভাগ মানুষ জানে। কিন্তু অনেকেই বোধহয় জানেন না, রূপায়ণ উত্তরা সিটি প্রকল্পটা কী অসীম সৌন্দর্যের। বাংলাদেশের ভেতরে যে এমন সুন্দর আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে পারে, দেখে বিশ্বাস করতে পারিনি। বলছি এ জন্য যে, রূপায়ণ গ্রুপ খুব আওয়াজ না দিয়েও অসাধারণ সব কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, দেশ রূপান্তরও তেমনি একটি প্রকল্প, প্রচার-প্রচারণায় হয়তো আকাশছোঁয়া নয়, কিন্তু চরিত্রে-মানে সর্বোচ্চ ধাপে। আর এর নেপথ্যে গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটা বাংলাদেশের মতো দেশে খুব সহজ নয়, সঠিক সাংবাদিকতা করতে গেলে বন্ধু হারাতে হয় অনেক ক্ষেত্রে, এই কঠিন পথেও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন অক্লান্তে। ছায়া হয়ে আছেন প্রকাশক ও গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল এবং রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার। আর সঙ্গে আছে আমার একদল উদ্যমী সহকর্মী, যারা নতুন পথে চলে আনতে চায় নতুন দিন।
তাদের নিয়ে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রা। এই যাত্রায় সঙ্গী হোন। ঠকবেন না। কারণ, অনেকেই যেখানে দেখছে সংকট, আমরা দেখছি সম্ভাবনা। কেউ কেউ পাচ্ছেন ভয়। আমরা ভয়ের মধ্যেই দেখতে পাই জয়।
রিপোর্টিং বিভাগ একটি পত্রিকার প্রাণ। রিপোর্টিং টিম ঠিক থাকলে পত্রিকা ব্যবস্থাপনায় নির্ভার থাকা যায়, গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হয়। তবে অন্যান্য সব বিভাগও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সব বিভাগের যথাযথ কাজ আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই একটা পত্রিকার সাফল্য আসে।
আমাদের যাত্রা শুরুর রিপোর্টিং টিমের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল আমরা প্রায় শতভাগ রিপোর্টার একে অপরকে আগে থেকেই চিনতাম। বিভিন্ন সময় কেউ না কেউ কোনো না কোনো পত্রিকায় একসঙ্গে কাজ করেছি। ফলে বোঝাপড়ার বিষয়টি আমাদের জন্য সহজ ছিল। সাবলীল ছিল আলাপচারিতা, তথ্য লেনদেন, টিম পরিচালনা। কঠোর বিধিনিষেধে কখনোই পড়তে হয়নি আমাদের।
রিপোর্টিং বিভাগ হচ্ছে খোলা হাটের মতো। রিপোর্টাররা হাটুরে। বাজার হাট মাঠ ঘুরে ঘুরে তথ্য আনেন। লেখেন। কী দেখলেন, কী অভিজ্ঞতা হলো, প্রতিদিন সেসব ঘটনা অকপটে তুলে ধরেন, গল্প করেন। এ ওর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন। হাসি-ঠাট্টা রাগ সব চলে এখানে। যতক্ষণ রিপোর্টাররা অফিসে থাকেন, ততক্ষণ প্রাণবন্ত থাকে অফিসটা। দিনের পর দিন, মাস, বছর রিপোর্টাররা হয়ে ওঠেন পরিবার, স্বজন, বন্ধু। রিপোর্টাররা ভালো থাকলে অফিসটা ভালো থাকে, শান্তি লাগে। হাসিমুখ রিপোর্টিং বিভাগ, আলো করে রাখে অফিস, একটি পত্রিকা।
সবশেষে বলতেই হয় দেশ রূপান্তরের এই যে সামনে তরতর করে এগিয়ে চলার ফ্রন্ট লাইনরা মাসে রিপোর্টাররা। কারণ এই টিমে আছেন অন্ততপক্ষে দেশের ১০ জন সেরা রিপোর্টার। যাদের নাম না বললেই নয়। সচিবালয় বিটের এই সময়ের সেরা রিপোর্টার আশরাফুল হক রাজীব, যিনি সব সময় এই অঙ্গনের একেবারে ভিতরের রিপোর্টগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে আনেন। আরও আছেন, ক্রাইম বিটের এই সময়ে আলোচিত রিপোর্টার সারোয়ার আলম। দিন রাত সারাক্ষাণ যিনি দেশ রূপান্তরকে নিয়ে ভাবেন। অনেকগুলো ব্রেকিং নিউজ দিয়ে দেশ রূপান্তরকে পাঠক জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিটের রিপোর্টার পাভেল হায়দার চৌধুরী। যিনি আগাম খবর দিয়ে আমাদের পাঠকদের অন্য পত্রিকার পাঠকের কাছ থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রেখেছেন। বিজনেস বিটের কর্ণধার আলতাফ মাসুদ, খুবই ছোট টিম নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু পাঠককে বুঝতে দেননি। অর্থনীতি বিষয়ে বিশ্লষন করেন চমৎকার। রিপোর্টে রয়েছে ধার। শিক্ষায় শরীফুল আলম সুমন এখন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের জন্য রীতিমতো আতঙ্ক। আর তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের কথা না বললেই নয়। যার বালিশের উত্তাপ নিয়ে আমি এখনো হাটে মাঠে ঘাটে প্রতিক্রিয়া পাই। ওই যে, বালিশ কাণ্ডের দেশ রূপান্তর। আর আদালতের উৎপল। সাদা মাটা মিষ্টি ব্যবহারের উৎপল আদালত পাড়ার জট আর মানুষের হয়রানি নিয়ে রিপোর্ট করে এই বিটের সেরা হয়ে উঠছেন। আমাদের সাথে আছেন অভিজ্ঞ রিপোর্টার প্রতীক ইজাজ। বিএনপি বিটের রেজাউল করিম লাভলু, বিএনপির সব পরিকল্পনা আগে আগেই তুলে ধরেন।
প্রতিশ্রুতিশীল এবং উদীয়মান রিপোর্টার ইমন রহমান, যার ধ্যানজ্ঞান সাংবাদিকতা। শুরু থেকেই একই ছন্দে কাজ করছে। মজ্জায় তার সাংবাদিকতার বারুদ। অর্থনীতি বিটের এমদাদ হোসেন এসেই কয়েকটা আলোচিত রিপোর্ট করেছেন। অর্থনীতির বিটের সদ্য যুক্ত হওয়া আনাস ভূঁইয়াও কম নয়। এসেই পাঠকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কম নয় ফারজানা লাবনীও কম নয়। এনবিআরে শততে শত। আমাদের টিমে আছে রিয়াজ হোসেন। মেধাবী রিপোর্টার, নীরবে কাজ করেন তবে আওয়াজটা পাঠকের কাছে অনেক বড়। সানমুন আহমেদ বয়সে তরুণ হলেও কাজে কোনো আলস্য নেই। যাই করতে দেওয়া হয় যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সে রিপোর্ট যান করে। আছে পাঠান সোহাগ বুঝে শুনে কাজ করে। এটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হওয়ার প্রথম শর্ত। টিমের তাওসীফ মাইমুন। বাজারদর নিয়ে সব সময় চিন্তা। সবার আগে পাঠকদের নিত্যপন্যের দাম বাড়া কমার খবর দিয়ে অন্য পত্রিকার বাঘা বাঘা রিপোর্টারদের কাৎ করে ফেলে। সব মিলিয়ে এই টিমটা ছোট হলেও ঝাক্কাস।
লেখক : দেশ রূপান্তরের প্রধান প্রতিবেদক ও বিশেষ প্রতিনিধি
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
কুষ্টিয়ায় আবারও এনআইডি জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীর মদদ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরি, দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এসব চলছে নির্বিঘেœ। এরা ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে অন্যের জমির দাতা-গ্রহীতা বা ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে একের পর এক দলিল সম্পাদন করে যাচ্ছে। এর আগে কুষ্টিয়ায় একাধিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নড়ে-চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনের তৎপরতায় জালিয়াত চক্র কিছুদিন গা-ঢাকা দিলেও আবারও চক্রটি নতুন করে জালিয়াতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগের জালিয়াতির ঘটনায় ডজনখানেক মামলা হলেও সেগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো ইতিবাচক দৃষ্টান্ত না থাকায় চক্রটি আবারও মাঠে নেমেছে। প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘শর্তানুযায়ী দলিল সম্পাদনের সময় দাতা-গ্রহীতারা যে এনআইডি আমাদের দেখায় তা আদৌ সঠিক কি না তা যাচাই করার মতো তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি অসাধু চক্র একের পর এক জাল দলিল তৈরি করছে।’
তবে এই কর্মকর্তার মন্তব্যকে নাকচ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ নেই বলে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা দায় এড়িয়েছেন। কুষ্টিয়াতে যে হারে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে তাতে ছোট্ট একটা ডিভাইস হলেই এনআইডি যাচাই করা সম্ভব।’
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জাল এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ও আমমোক্তারনামা দলিল (১১২১২/১৭ নম্বর) ব্যবহার করে কুষ্টিয়া শহরের প্রায় দুই কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি হস্তান্তরে ২৭ লাখ টাকার একটি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। যার নম্বর ১৭৯৪/২৩। কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকিপার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ওই আমমোক্তারনামা দলিলের সমর্থনে কোনো ধরনের যাচাইকরণ কাগজপত্র সংযুক্ত নেই এবং জালিয়াতির অভিযোগে মামলা বিচারাধীন থাকায় ওই দলিলও আদালতের আদেশে জব্দ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তা ছাড়া জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার অবস্থায় দলিলদাতারা ওই আমমোক্তারনামা দলিল জাল বলে এর আগে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এরপরও ওই দলিলের সূত্র ধরে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এমএম আবদুল ওয়াদুদদের পৈতৃক ভূ-সম্পত্তি জালিয়াতি করে দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় চক্রটি।
এ বিষয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরের দলিল লেখক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী দলিল লেখক শরিফুল ইসলাম সোহেল আমার কাছে একটা দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। কিন্তু এর মধ্যে এত জটিলতা ছিল সে সময় আমি বুঝতে পারিনি।’
সহকারী দলিল লেখক সোহেল জানান, ‘এই দলিলের গ্রহীতা মিস শেফালী খানমের স্বামী মো. মারজুম খাঁন নিজে ওই দলিল অন্য লেখকের কাছ থেকে লেখা সম্পন্ন করে আমার কাছে এসে বলে, ‘তুমি শুধু দলিল লেখক হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পেশ করবা, বাদবাকি সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।’ সেজন্য আমাকে ১০ হাজার টাকা দেবে বলে আমার সঙ্গে মিটমাট হয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে দলিলদাতা কুষ্টিয়া শহরের উত্তর লাহিনী এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেনকে (এনআইডি নম্বর : ৬৪০২৬৬৯৪০৯) মোবাইলে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
দলিল গ্রহীতা শেফালী খানমকে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেফালী খানমের ফোন থেকে তার স্বামী মারজুম খাঁন এই প্রতিবেদককে কল করেন। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর মারজুম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কি শেফালী খানমকে চিনেন? দলিলে দেওয়া ঠিকানাটা ভালো করে দ্যাখেন, উনি শেখ সেলিমের বোন, আপনার এত স্পর্ধা? আপনি ওই দলিল নিয়ে টানাটানি করছেন?’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, ‘উল্লিখিত (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দলিলটি জাল বলে আবদুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জমির নামজারি প্রক্রিয়া স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’
কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘দলিলটিতে (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দাতা দেলোয়ার হোসেন যে এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ব্যবহার করেছেন, তার কোনো বৈধ ডেটা নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নেই।’
এভাবে দলিল নম্বর ২৫৩৩/২০২২ দাতা জোবায়দা নাহার শেখ ও জামিলা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান, দলিল নম্বর ২৫৩৪/২০২২ দাতা জামিলা নাহার শেখ গ্রহীতা শামসুল ইসলাম, ইউসুফ হাসাইন ও মো. সাদ্দম খাঁ, দললি নম্বর ১১৪৮/২০২২, দাতা জামিলা নাহার শেখ ও জোবায়দা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শামসুল ইসলাম এসব দলিল এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সিআইডির উপপরিদর্শক মাসুদ পারভেজ।
কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার কাওছার আলী বলেন, ‘এখানে কাজের চাপ সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় জনবল সংকট মাথায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। এনআইডি নকল বা আসল কি না তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নেই। যে কারণে জালিয়াত চক্রের এনআইডি জালিয়াতি ঠেকানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।