বৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গল টেস্টের তৃতীয় দিনটা ছিল অন্য স্বাভাবিক দিনের চেয়ে একটু লম্বা, খেলা হয়েছে ৯৫ ওভার। যার ভেতর ৯৩ ওভারই ব্যাট করেছে শ্রীলঙ্কা। এই এক দিনেই বাংলাদেশের পৌনে দুই দিনের কাছাকাছি রান তুলে ফেলেছে স্বাগতিকরা। পাথুম নিশাঙ্কার ১৮৭ রান ও দীনেশ চান্দিমালের ৫৪ রানের ইনিংসে ভর করে তৃতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩৬৮ রান। তার আগে তৃতীয় দিন সকালে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৯৫ রানে।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা মিলে তৃতীয় দিন সকালে যোগ করেছেন ১১ রান, টিকেছেন ১৬ বল। অসিথা ফার্নান্দোর বলে নাহিদ রানা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানেই বিদায় নিলে শেষ হয় গল টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ৮৬ রানে ৪ উইকেট অসিথা ফার্নান্দোর। ইনিংস বিরতির পর শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ের সূচনায় পাঠায় পাথুম নিশাঙ্কা ও লাহিরু উদারাকে। সাড়ে ২৯ বছর পর শ্রীলঙ্কার হয়ে টেস্টে ইনিংসের গোড়াপত্তনে দেখা গেল দুজন ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে। এর আগে ১৯৯৫ সালের বক্সিং ডে টেস্টে, মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসের সূচনায় নেমেছিলেন রোশান মহানামা ও বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
প্রথম ছয় ওভার দুই প্রান্ত থেকেই হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানাকে তিন ওভার করে পেস বোলিং করিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, এরপরই আক্রমণে নিয়ে আসেন বামহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। নিজের তৃতীয় ওভারেই সাফল্যের দেখা পান তাইজুল, ৩৪ বলে ২৯ রান করা উদারা খেলার ধারার বিপরীতে গিয়েই ক্যাচ তুলে দেন তাইজুলের হাতে। পরের সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের বোলারদের মাথাকুটে মরতে হয়েছে অনেকটা সময়, প্রায় ৪০ ওভার। এক উইকেটে ১০০ রানে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা, বিরতির পর নিশাঙ্কা হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। চা বিরতির আগে পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতেও, চান্দিমালও ৯৯ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর চা বিরতির খানিক আগে আউট হয়ে যান। নাইম হাসান ভাঙেন ১৫৭ রানের জুটি। জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ প্রতিপক্ষের সম্মাননা পেয়ে মাঠে নেমে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। মুমিনুল হকের পার্টটাইম বামহাতি স্পিনে ধোঁকা খেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ম্যাথুজকে, অতিরিক্ত ধীরগতির বল করা মুমিনুল হাওয়া ভাসিয়ে একটু জোরের ওপরই করেছিলেন ডেলিভারিটা। এগিয়ে এসে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়েছিলেন ম্যাথুজ, বলটা একটু লাফিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে লিটন দাসের দস্তানায়।
এই তিনজন ব্যাটসম্যান মিলে যতটা না বাংলাদেশকে নাকাল করেছেন, তার চাইতেও বেশি নাকাল করেছেন পাথুম নিশাঙ্কা। চার মেরেছেন ২৩টি, একটি ছক্কা। ৭৩ স্ট্রাইকরেটে ১৮৭ রানের ইনিংস খেললেন ২৫৬ বলে। নিশাঙ্কার ইনিংসটাই প্রপেলার হিসেবে কাজ করেছে শ্রীলঙ্কার জন্য। বাংলাদেশ যেখানে সোয়া তিনের কম রানরেটে ব্যাট করে ৪৯৫ রান তুলেছে ১৫৪ ওভার খেলে, নিশাঙ্কার ইনিংসে ভর করে শ্রীলঙ্কা সেখানে ওভারপ্রতি গড়ে প্রায় ৪ রান (৩.৯৫) করে তুলেছে। টেস্টে রান, সময় সবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের দুটো দিনের ভেতর শ্রীলঙ্কা যদি আজ প্রথম দুটো সেশন এই গতিতেই ব্যাট করে, তাহলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের রান ছাপিয়ে বড় লিড নেওয়ার সম্ভাবনাই আছে তাদের। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশকে অল্পতে আটকে দিতে পারলে এই টেস্টে নিজেদের পক্ষে ফল বের করে আনা সম্ভব ধনঞ্জয় ডি সিলভাদের জন্য।
মেহেদী হাসান মিরাজ না থাকায় বাংলাদেশের একজন বোলার কম নিয়ে খেলতে হচ্ছে। মুমিনুল হক হাত ঘুরিয়েছেন ৬ ওভার, দুই পেসার মিলে ২৮ ওভার। এই ৩৪ ওভারেই ১৫৩ রান নিয়েছে শ্রীলঙ্কা, বিশেষ করে নাহিদ রানার ১৬ ওভার থেকে তারা তুলেছে ৮০ রান, অর্থাৎ ওভারপ্রতি গড়ে ৫ রান করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার দুই পেসারকে দিয়েছে ৭ উইকেট, পার্থক্যটা হয়ে যাচ্ছে এখানেই। গোটা দিনে বাংলাদেশের অর্জন বলতে পাথুম নিশাঙ্কাকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে না দেওয়া। ২৭ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান তার টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিটিকে ডাবলে রূপ দেওয়ার জোরালো সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। ১৮৭ রানে থাকার সময়, দিনের খেলা শেষ হওয়ার মাত্র ৭ ওভার আগে হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে যান নিশাঙ্কা। দ্বিতীয় নতুন বলটাই বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে, বলটা তার কোণাকুণি ভেতরে আসছিল আর নিশাঙ্কা সোজা ব্যাটে ড্রাইভ খেলতে চেয়েছিলেন। বল তার ব্যাট-প্যাডের মাঝের ফাঁক গলে ঢুকে প্যাডে আলতো ঘসা খেয়ে গিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেয়। উইকেটে আছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১৭* ও কামিন্দু মেন্ডিস ৩৭*। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে কামিন্দু মেন্ডিসের গড় ১২২.৩৩! দুই টেস্টে তার রান ১০২, ১৬৪ ও ৯২*। তাই আজ সকাল সকাল তাকে অল্পতেই বিদায় করতে পারাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।