রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

৪০ দিন পর খুলছে নগর ভবনের তালা

শেষ হচ্ছে ইশরাককে মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আন্দোলন

আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ০৭:২১ এএম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যুতে চলা আন্দোলন শেষ হতে পারে আজ রবিবার। বড় জমায়েত করে নগর ভবনের তালা খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (শনিবার রাত ৯টা) ইশরাক সমর্থকদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। শুধু বড় জমায়েতের জন্য সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

সূত্র বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগের পর দলের পক্ষ থেকে ইশরাক হোসেনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সেবা চালু করার বিষয়টি মাথায় রেখে নগর ভবনের তালা খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী আজ রবিবার সকালে আন্দোলনকারীরা নগর ভবনে বড় জমায়েত করে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারেন। ফলে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া দীর্ঘ ৪০ দিনের আন্দোলন আজ শেষ হতে পারে।

আজ সকাল ১০টায় নগর ভবনে বিএনপি এবং শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা জমায়েত হবেন। কিন্তু সেখানে ইশরাক হোসেন নিজে উপস্থিত থাকবেন না। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহমান উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা করতে পারেন।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন শনিবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, নাগরিক সেবা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা করি আমরা। যে কারণে নাগরিক সেবা সচল রাখার জন্য আন্দোলনকারীরা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটা তাদের স্বাধীনতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসি শ্রমিক দল এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, রবিবার বড় জমায়াতের নির্দেশনা এসেছে। আমরা সেই আলোকে কাজ করছি। একজন নেতার ভাষ্য, আন্দোলন শেষ করার বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে একটা সিদ্ধান্ত আসবে সেটা সবাই জানে।

এর আগে ইশরাক ইস্যুতে হার্ডলাইনে না গেলেও ছাড় দিয়ে শপথ না পড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ কথা জানান। একইসঙ্গে বিষয়টি সুরাহার জন্য বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এতে কাজ না হলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার কথা চিন্ত ছিল সরকারের।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নগর ভবন অচল করায় উপদেষ্টারা ইশরাকের কর্মকা- নিয়ে ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। একাধিক উপদেষ্টা সরকারপ্রধানকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন। আজ রবিবারের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করেছে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় মাস ধরে তালা দিয়ে রাখা এবং নাগরিক সেবা সচল করতে সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে দলগুলো।

আন্দোলনের শুরুতে বিক্ষোভ মিছিল, তালা দেওয়া এবং বক্তব্য বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত সপ্তাহ থেকে কর্মচারীদের নিয়ে সভা করা শুরু করেছেন ইশরাক। একইসঙ্গে দিচ্ছেন নানা নির্দেশনাও। গত বুধবার ফগিং মেশিন চালিয়ে করেছেন মশক নিধন কার্যক্রম। ব্যানারে ইশরাক হোসেনকে ‘মাননীয় মেয়র’ এবং ‘নির্বাচিত মেয়র’ লেখা হচ্ছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী তিনি এখনো ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব বুঝে পাননি।

এসব সভায় ইশরাক হোসেনের পাশে থাকছেন তাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে চলমান আন্দোলনের সমম্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান। আলাপকালে তিনি বলেন, গত ১৪ মে ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই থেকে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। এই আন্দোলনের মধ্যেও ঢাকাবাসী যেন কোনো নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় তা ইশরাক হোসেনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

যেভাবে আন্দোলন শুরু : ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস জয়ী হন। তখন কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিলের দাবি জানিয়ে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।

গত ২২ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরামর্শ পাওয়ার আগেই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। আইন অনুযায়ী গেজেটের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পাঠ করানোর দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় তখন জানায়, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, মামলা দায়েরের পর আর্জি সংশোধনের সুযোগ নেই। কিন্তু ইশরাক গত বছরের সেপ্টেম্বরে তা করেছেন এবং ফল বাতিল নয়, তাকে জয়ী ঘোষণা করার আবেদন করেছেন।

শপথ নিতে না পেরে ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে গত ১৪ মে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। তখন থেকেই সব নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। উপদেষ্টা, কর্মকর্তারাও নগর ভবনে প্রবেশ করতে পারছেন না। এরপর ইশরাক সমর্থকরা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে রাখেন তিন দিন। ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে জারি করা গেজেট বাতিল চেয়ে রিট হয়। হাইকোর্টের পর আপিল বিভাগও তা খারিজ করে দেন।

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গঠিত সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৯ জুন। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ইশরাক। গত সোমবার তিনি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে নগর ভবনে সভা করেন। তার পেছনে টানানো ব্যানারে লেখা ছিল ‘মাননীয় মেয়র’। পরের দুদিনও সভা করেন ইশরাক। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার নগর ভবনে যাননি তিনি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত