সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বড় পরিবর্তন ছাড়াই আজ বাজেট পাস হচ্ছে

আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ০৭:২২ এএম

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য গত ২ জুন ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সংসদ না থাকায় এবার প্রথাগতভাবে বাজেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। বাজেট পেশ হয়েছে টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে। আর এটি অনুমোদন হবে গেজেটের মাধ্যমে। আজ গেজেটের মাধ্যমে বাজেট পাস হবে বলে জানা গেছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব বিষয় উত্থাপন করা হয়েছিল, সেসব বিষয় অপরিবর্তিত রেখেই বাজেট পাস হতে চলেছে। ছোটখাটো দুয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন আসতে পারে।

আজ বাজেট পাসের গেজেট জারি করবে সরকার। তার আগে, সকালে অনুষ্ঠেয় এক সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেবে উপদেষ্টা পরিষদ। উপদেষ্টা পরিষদের এই সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভক্তি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ দূর করতে করণীয় নিয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আজ সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন পাওয়ার পর, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এদিনই বাজেট পাস হওয়ার গেজেট জারি করা হবে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। জাতীয় সংসদ কার্যকর না থাকায় এ বছর প্রস্তাবিত বাজেট এভাবে পাস হবে, যা আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট প্রায় অক্ষুন্ন রেখেই বাজেট অনুমোদন হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে একটি বিষয়ে অনেক বেশি সমালোচনা হওয়ায় সে ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে। বিষয়টি হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। দীর্ঘদিন ধরে বাজেটে এ সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এ সুযোগের প্রয়োগ তেমন দেখা যায় না। তা সত্ত্বেও এ ধরনের সুযোগ রাখা অনৈতিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা প্রতিবারই এ বিষয়টি তীব্র সমালোচনা করেন। সেই সমালোচনার মুখে এবার প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলেও বাজেট পাস হওয়ার পর্যায়ে এসে এটির ক্ষেত্রে কিছু শর্ত যুক্ত করা হতে পারে।

অন্যান্য বছর বাজেট পেশ হওয়ার পর প্রায় ১ মাস সময় পাওয়া যায় বাজেটের ওপর আলোচনা-সমালোচনা করার। কিন্তু এবার পাওয়া গেছে মাত্র ৫ কর্মদিবস। ২ জুন বাজেট পেশ করা হয়। এরপর ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১০ দিন ছিল ঈদের ছুটি। ছুটি শেষে ১৫ থেকে ১৯ জুন এই ৫ কর্মদিবস বাজেটের ওপর মতামত দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন দেশবাসী। অন্যান্য বার জুনের শেষ কর্মদিবসে বাজেট পাস হলেও এবার আগেভাগেই তা করা হচ্ছে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদে একটা লম্বা ছুটি গেল। তারপর বাজেটের ওপর মতামত দেওয়ার জন্য মাত্র ৫ কর্মদিবস সময় পাওয়া গেল। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। ‘বাজেটে কী কী বিষয় পরিবর্তন হওয়া উচিতএমন প্রশ্নের জবাবে এ গবেষক বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার বিধান থাকা উচিত নয়। পাশাপাশি  কোম্পানির টার্নওভার কর বাড়ানো হয়েছে। এটি না বাড়ানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আর ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা যেটা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেটি আগামী করবর্ষ থেকেই কার্যকর করা উচিত।’

গত ২ জুন ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’ শীর্ষক বাজেট পেশ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দি আহমেদ। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকারের আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কেটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে গতানুগতিকভাবে দেশীয় উৎস থেকেই বেশি অর্থের সংস্থান করা হবে। ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার সংস্থান করা হবে অভ্যন্তরীণ ব্যংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্র থেকে। এর মধ্যে কেবল ব্যংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। বাকিটা নেওয়া হবে সঞ্চয়পত্র থেকে। তাছাড়া বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৪ শতাংশের নিচে। বিশ^ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ঘরেই থাকবে। সেখানে সরকার আগামী অর্থবছর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এবারের বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে দেশের মোট জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। বাজেটের এসব মৌলিক বিষয় অপরিবর্তিতই থাকছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত