গিবত করা পাপ। গিবত শোনাও পাপ। গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় গিবত হলো, কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার সম্বন্ধে এমন কোনো দোষের কথা বলা, যা শুনলে সে কষ্ট পায়। গিবত শুধু মুখের ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাচনিক ভঙ্গি কিংবা লেখনির মাধ্যমে অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়েও গিবত হয়ে থাকে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো গিবত কাকে বলে?’ সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘গিবত হলো তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে এটিও কি গিবত হবে?’ উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলেই সেটি গিবত হবে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে সেটি হবে ‘বুহতান’ বা মিথ্যা অপবাদ।’ (সহিহ মুসলিম)
এ হাদিস থেকে বুহতান ও গিবতের মধ্যকার পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। যদি কারও সম্পর্কে মিথ্যা দোষ বর্ণনা করা হয়, তা বুহতান। আর সত্য দোষ বর্ণনা করা হলে তা গিবত। কারও ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম, সে মুসলমান হোক বা কাফের, নেককার হোক বা বদকার। তবে কোনো মুমিনের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া জঘন্যতম অপরাধ।
গিবত করা যেমন পাপ, তেমনি খুশি মনে গিবত শোনাও পাপ। কারও গিবত শুনে চুপ থেকে প্রতিবাদ না করাও কানের গিবত। কেননা গিবত শুনে চুপ থাকা এবং প্রতিবাদ না করা নিজেই গিবত করার শামিল। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, গিবত শ্রবণকারীও গিবতকারীর একজন।’ (তাবারানি)
সাহাবি মায়মুন ইবনে সিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম, এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি তোমার অমুক সঙ্গীর গিবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালো-মন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। তুমি তার গিবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ। (বাগাভি)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কারও গিবত করা হয় আর তুমি সেই মজলিসে বসা থাকো তখন তুমি গিবতকারী ব্যক্তির সাহায্যকারী হও। যার গিবত করা হচ্ছে তুমি তার প্রশংসা শুরু করে দাও, যাতে মানুষ তার গিবত থেকে বিরত হয়। গিবতকারীকে গিবত করা থেকে নিষেধ করো। কেননা চুপচাপ বসে থাকলে তুমিও গিবতকারী হিসেবে গণ্য হবে।’
এক্ষেত্রে যদি নিষেধ করা সম্ভব না হয় তাহলে এর প্রতি মনে মনে ঘৃণা পোষণ করতে হবে। সম্ভব হলে গিবতের মজলিস ত্যাগ করতে হবে অথবা গিবতকারীকে ভিন্ন প্রসঙ্গে মশগুল করার চেষ্টা করতে হবে। এরূপ কোনো চেষ্টা না করলে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আপনি তাদের দেখেন, যারা আমার আয়াতগুলোর ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তখন আপনি তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যান যে পর্যন্ত না
তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সঙ্গে বসবেন না।’ (সুরা আনআম ৬৮)
সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) কখনো তার সামনে কাউকে গিবত করতে দেখলে ছাড় দিতেন না। আর মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.)-এর সামনে কারও গিবত করা হলে তার ব্যাপারে যতটুকু উত্তম ও ভালো কিছু জানেন, তিনি তা তুলে ধরতেন। সুতরাং গিবত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য আপনি এই দুই জনের একজনকে অনুসরণ করুন।