বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

অভিমানী অধিনায়ক রইলেন নিশ্চুপ

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০১:৩৬ এএম

বাংলা বাদে পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষার অভিধানে নাকি ‘অভিমান’ শব্দটিই নেই, কারণ বাঙালি বাদে অন্য কোনো জাতি বা নৃগোষ্ঠীর মধ্যে নাকি এই অনুভূতিটিই নেই! বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা, বিশেষ করে অধিনায়করা কেন যেন সবসময়ই একটু অভিমানী হন। বিশেষ করে ব্যক্তিগত সাফল্যের পর তাদের অভিমানের মাত্রা বেড়ে যায়। কেউ অবসর নিতে চান, কেউ ড্রেসিং রুমে কান্না জুড়ে দেন, কেউ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবার ইচ্ছার কথা জানান। গলে অধিনায়ক হিসেবে জোড়া সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্ত নাকি অভিপ্রায় জানিয়েছেন টেস্ট নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর। তবে সোমবার কলম্বোতে এই ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলটা ‘লিভ’ করেছেন শান্ত, ‘এই মুহূর্তে আলোচনাটা আলোচনার জায়গায় থাক।’

কিছুদিন আগে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টাও। তাই ক্রিকেট দলের অধিনায়কেরও যে দায়িত্ব ছেড়ে সাধারণের কাতারে মিশে যাওয়ার ইচ্ছে হবে না, এমনটা ভাবারও উপায় নেই। শান্তর হাতে ছিল তিন সংস্করণেরই নেতৃত্বের দায়িত্ব। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ও পরে ভারত সফরে বিবর্ণদশা, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাটিতে সিরিজের পরই নেতৃত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন শান্ত। এরপর সাদা বলের সংস্করণের নেতৃত্ব তার হাতছাড়া হলেও সাদা পোশাকের নেতৃত্ব ঠিকই রয়ে গেছে তার হাতে। তবে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ব্যর্থতার পর জুম মিটিং করে যেভাবে তাকে বাদ দিয়ে রাতারাতি মেহেদী হাসান মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, তাতে আঁতে ঘা লাগতেই পারে শান্তর। তার ওপর সবশেষ টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির আঁচটা এখনো টাটকা, এমন সময়ই তো সরে দাঁড়াবার ঘোষণার জন্য মোক্ষম। একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট শান্তর ঘনিষ্ঠ একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর সে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আর দায়িত্ব পালন করবে না। আমি তাকে অনেক দিন ধরে জানি, আর আমি যতটা বুঝি তাতে মনে হয় তার আশপাশে যা ঘটছে সেসব নিয়ে সে খুশি নয়।’ এই অজ্ঞাতনামার বয়ানেই আগুনে পড়েছে ঘি। কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্টের আগে, বাংলাদেশের প্রথম অনুশীলন সেশনের দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে শান্তর কথোপকথনটা হয়ে গেল অধিনায়কত্ববিষয়ক আলোচনা সভা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে শান্ত স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আলোচনা তো আগে থেকেই হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে, হতে থাক। আমি এ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ দুদিন পর টেস্ট ম্যাচ, টেস্ট ম্যাচটা ভালোভাবে খেলতে চাই। টেস্ট ম্যাচটাতে ভালোভাবে কন্ট্রিবিউট করতে চাই, একজন অধিনায়ক হিসেবে, একজন ব্যাটার হিসেবে। এই মুহূর্তে আলোচনাটা আলোচনার জায়গায় থাক।’

বুধবার থেকে সিংহলিজ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে শুরু হবে শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। কলম্বোতে মূলত প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামেই বেশি খেলেছে বাংলাদেশ, এসএসসিতে খেলার অভিজ্ঞতা এই দলের অনেক ক্রিকেটারেরই নেই। শান্ত সেটাই মনে করিয়ে দিলেন, ‘এখন যে খেলোয়াড়রা আছে তাদের খুব বেশি একটা এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তাই এই মাঠে আমাদের আজকে (সোমবার) একটা অনুশীলন আছে, এখানে কন্ডিশনটা আমরা বোঝার চেষ্টা করব, উইকেটটা যদি সম্ভব হয় দেখার চেষ্টা করব। সেটা দেখে একটু ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করব। আমার মনে হয়, সেটা দেখে আজকে এবং আগামীকাল (সোম ও মঙ্গলবার) যতটুকু ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ম্যাচটা খেলতে পারি সেটাই আমাদের জন্য শ্রেয়তর।’

গলে জ¦রের কারণে খেলতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। কলম্বো টেস্টে তাকে একাদশে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী শান্ত, ‘আমি সবসময়ই বলি মিরাজ কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার আমাদের দলের জন্য, কারণ ব্যাটিং এবং বোলিং, যেভাবে সে কন্ট্রিবিউট করে, প্রত্যেকটা ম্যাচেই কিন্তু ইম্প্যাক্টফুল ব্যাটিং ইনিংস থাকে এবং বোলিং থাকে। ও আসাতে দলের ব্যালেন্সটা আরেকটু ভালো হবে, আর আমি আশা করব যে, সে এই ম্যাচে ভালোভাবেই দলের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে পারবে।’ গলে পঞ্চম দিনের সকালে মুশফিকুর রহিমের ধীরগতির ব্যাটিং আর হাফসেঞ্চুরির জন্য মরিয়া হয়ে দৌড়ে রানআউট নিয়ে শান্তর ব্যখ্যা, ‘মুশফিক ভাই এত বছর ক্রিকেট খেলেছেন, আমার মনে হয় না ওই এক রান নিয়ে অনেক বড় কিছু উনি অর্জন করে ফেলতেন। দলের জন্য তিনি কী করেছেন, তা আমরা সবাই জানি।’

গল টেস্টে ঝুঁকি না নেওয়া, মিরাজের অনুপস্থিতি সব ছাপিয়ে প্রশ্নের ভেতর ঘুরেফিরে আসে শান্তর অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গটাই। তাকেও তাই একপর্যায়ে বলতে হয়েছে, ‘এ রকম সময়ে এ ধরনের আলোচনা হওয়াই উচিত নয়। এসব আলোচনা ৭-৮ দিন আগে থেকে বা তারও আগে থেকে না হওয়া ভালো। এসব যত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়, ততই ভালো। আশা করব, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সবাই চেষ্টা করবে মাঠে কীভাবে অবদান রাখতে পারে।’

বাংলাদেশের পরের টেস্ট শুরু বুধবার থেকে এবং সেই টেস্টে শেষ মুহূর্তে দল থেকে চোট বা অন্য কোনো কারণে বাদ না পড়লে শান্তই অধিনায়ক, এতটুকু নিশ্চিত। তারপর বাংলাদেশের এই বছর আর কোনো টেস্ট নেই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপের, নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আছে দুটো টেস্ট, যা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে। এ সময়ের মধ্যে বোর্ডের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে, তখন সমীকরণটাও হবে অন্য!

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত